রাশিয়া বিশ্বকাপের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারকা এমবাপ্পে ক্রমেই পিএসজির প্রাণভোমরা হয়ে উঠেছেন। যার সর্বশেষ নজির চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে ম্যাচটি।
ক্রমেই নেইমারের ছায়া থেকে বের হয়ে নিজের আলাদা পরিচয় বানিয়ে ফেলছেন এমবাপ্পে। বার্সা থেকে পিএসজিতে আসার পর থেকে ক্রমেই অবনতি হচ্ছে নেইমারের। ২০১৭ সালের ব্যালন ডি’অরের তালিকায় তিনে থাকা এই ব্রাজিলিয়ান তারকা ২০১৮ সালে স্থান পেয়েছিলেন ১২তম স্থানে! আর এমবাপ্পে? সাত থেকে চারে স্থান করে নেন এই ফরাসি। সেই সঙ্গে বিশ্বকাপ জয় যোগ করলে নেইমারকে আগেই ছাড়িয়ে গেছেন তিনি।
ম্যানইউয়ের বিপক্ষে তার গোলটি চ্যাম্পিয়নস লিগে ২৪ ম্যাচ খেলে তার ১৪তম। এই কীর্তি তাকে আসল রোনালদোকে (ব্রাজিল গ্রেট) ছাড়িয়ে যেতে সাহায্য করেছে। রিয়ালের সাবেক ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকারের ১৪ গোল এসেছিল ৪০ ম্যাচে। ১৮ গোল করলেই তিনি ছুঁয়ে ফেলবেন আরেক ব্রাজিলিয়ান গ্রেট রোনালদিনহোকে। হয়তো দুই আসর পরেই তিনি ছুঁয়ে ফেলবেন রিভালদোকেও (২৭)। তখন তার বয়স হবে মাত্র ২২!
মাত্র ২০ বছর বয়সেই বিশ্বের সবচেয়ে প্রতিভাবান তরুণ ফুটবলারের তকমা গায়ে লাগিয়েছেন এমবাপ্পে। এমনকি সর্বকালের সেরাদের কাতারেও স্থান করে নিয়েছেন। তবে এসব নিয়ে তার কোনো মাথাব্যথা নেই বললেই চলে। তিনি শুধু শিরোপার জন্য ক্ষুধার্ত। তার ঝুলিতে আছে দুটি লিগ ওয়ান, একটি বিশ্বকাপ আর ব্যক্তিগত বহু অর্জন। এখন তার লক্ষ্য চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা।
চাইলে অন্য বড় ক্লাবের হয়েও খেলতে পারতেন। কিন্তু নিজের ঘরের ক্লাবকেই বেছে নিয়েছেন এমবাপ্পে। দলে নেইমার আর কাভানির মতো বড় তারকার উপস্থিতিও তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। বরং ক্রমেই তাদের ছাড়িয়ে গেছেন, আবার তাদের সহযোগিতাও করেছেন অকাতরে। বিনিময়ে ব্যালন ডি’অর জেতার স্বপ্ন দেখা থেকে নিজেকে বিরত রাখছেন অতি সতর্কতার সঙ্গে।
সেই ২০১৭ সালে যখন তার বয়স মাত্র ১৭ সেসময়ই এমবাপ্পে জানিয়েছিলেন চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা জেতা তার সবচেয়ে বড় স্বপ্ন। কিংবদন্তিদের কাতারে স্থান পেতে এছাড়া খুব বেশি উপায়ও নেই। কিন্তু তিনি না ভাবলে কি হবে, শিগগিরই ব্যালন ডি’র নিজেই যে তার হাতে ধরা দেবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
এই মৌসুমে এরইমধ্যে ২৩ গোল করেছেন তিনি। হয়তো মেসির দখলে থাকা চল্লিশোর্ধ্ব গোলের রাজত্বেও হানা দেবেন। তার গতি, বুদ্ধিমত্তা, ফার্স্ট টাচ, ড্রিবলিং সবই পূর্ণ স্ট্রাইকার হিসেবে তার সামর্থ্য তুলে ধরে। অনেকে হয়তো বলবেন, এমবাপ্পের গোল শুধুই ফ্রান্স কেন্দ্রিক। কিন্তু এটা ভুলে গেলে চলবে না, তার ঝুলিতে ম্যানচেস্টার সিটি, বায়ার্ন মিউনিখ, বরুশিয়া ডর্টমুন্ড, লিভারপুল, জুভেন্টাস আর সর্বশেষ ম্যানইউয়ের বিপক্ষে গোল করার কীর্তি আছে।
এমবাপ্পের সমান তথা ২০ বছর বয়সে মেসির ঝুলিতে ছিল মাত্র ২টি চ্যাম্পিয়নস লিগ গোল। আর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো তখন কেবলই চ্যাম্পিয়নস লিগে নিজের প্রথম গোলের সন্ধান করছেন। আর এমবাপ্পের দখলে ২০ বছর পূর্ণ হওয়ার দুই মাস আগেই আছে ১৪ গোল। মূল কথা তার প্রচণ্ড গোলের ক্ষুধা, এটাই তাকে বাকিদের থেকে আলাদা করেছে।
নিজের ও দলের উন্নতি নিয়ে যতটা ভাবেন এমবাপ্পে, এই বয়সের অন্য কোনো ফুটবলারের মাঝে তা প্রায় নেই বললেই চলে। এই যেমন ম্যানইউয়ের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে এমবাপ্পে বললেন, ‘আমরা কিছুটা বিব্রত, কারণ আমরা তৃতীয় গোলটাও করতে পারতাম। শেষ ২০ মিনিটে আমরা অনেকটা গা ছাড়াভাবে খেলেছি। ’ তার বয়সী ফুটবলারের মুখে এমন আত্মসমালোচনা সত্যি বিস্ময়কর। ভবিষ্যতে যে একাই ফুটবল বিশ্বে রাজত্ব করবেন এই তরুণ, তাতে সন্দেহ করার অবকাশ নেই বললেই চলে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৯
এমএইচএম/এমএমএস