এই ফুটবল জাদুকরের জাদুতেই সেভিয়ার মাঠ থেকে ৪-২ গোলের জয় নিয়ে ফিরেছে বার্সেলোনা। আর এমন অসাধারণ জয়ের ম্যাচে নিজের ক্যারিয়ারের ৫০তম হ্যাটট্রিকের কীর্তি গড়েছেন মেসি।
সব প্রতিযোগিতা মিলে গত পাঁচ ম্যাচের চারটিতেই ড্র, একটিতে জয় এলেও তা নূন্যতম ব্যবধানে। ফলে ৭ পয়েন্টের ব্যবধান নিয়ে শীর্ষে থাকা বার্সা এই ম্যাচে ঠিক স্বস্তি নিয়ে মাঠে নামেনি। অন্যদিকে, শেষ ৮ ম্যাচে মাত্র ১ জয় নিয়ে লিগ তালিকার পাঁচে থাকা সেভিয়া এই ম্যাচে মাঠে নামে রেলিগেশনের খাড়ার হুমকি নিয়ে। বার্সার বিপক্ষে লা লিগায় ২৩ ম্যাচে মাত্র ১ বার (২০১৫ সালে) জয়ের স্বাদ পেয়েছিল সেভিয়া। আর সেভিয়াকে লা লিগায় ৮১বার হারিয়েছে বার্সা, যা লা লিগার ইতিহাসে রেকর্ড। অবশেষে সেই রেকর্ডে আরও এক পালক যুক্ত করেই ফিরেছেন মেসিরা।
চ্যাম্পিয়নস লিগে শেষ ষোলোর প্রথম লেগের ম্যাচে লিও’র সঙ্গে ড্র ম্যাচে যে দলটি খেলেছে, আজকের ম্যাচে তাতে তিনটি পরিবর্তন এনেছেন বার্সা কোচ আর্নেস্তো ভেলভার্দে। ফরোয়ার্ড লাইনে ডেম্বেলের জায়গায় কৌতিনহো, গত ২৪ নভেম্বর থেকে হাঁটুর ইনজুরিতে ভুগতে থাকা স্যামুয়েল উমতিতি ল্যাঙ্গলেটের জায়গায় আর আর্থারের জায়গায় মিডফিল্ডে আর্তুরো ভিদালকে নিয়ে একাদশ সাজানো হয়। কিন্তু রক্ষণ আর মিডফিল্ডের ভুলেই ভুগতে হয় কাতালান জায়ান্টদের।
শনিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) নিজেদের মাঠে ম্যাচের শুরু থেকেই রক্ষণ সামলে খেলতে থাকে সেভিয়া। বিশেষ করে বার্সা অধিনায়ক লিওনেল মেসিকে ঠেকাতে মরিয়া ছিলেন সেভিয়ার ডিফেন্ডাররা। এর পেছনে অবশ্য কারণও আছে। সেভিয়ার বিপক্ষে এর আগে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৩৩ গোল করেছেন আর্জেন্টাইন জাদুকর, যা কোনো একক ক্লাবের বিপক্ষে মেসির সর্বোচ্চ।
ম্যাচের ২২ মিনিটেই জেসুস নাভাসের গোলে এগিয়ে যায় সেভিয়া। মাঝমাঠ থেকে টেনে এনে বেন ইয়েদ্দারের বাড়িয়ে দেওয়া বল থেকে গোল করেন নাভাস। যদিও ইচ্ছে করলে নিজেই শট নিয়ে পারতেন ইয়েদ্দার। কিন্তু মুহূর্তের সিদ্ধান্তে তিনি বল ঠেলে দেন ডানদিকে থাকা নাভাসের পায়ে।
গোল খেয়ে দ্রুত গুছিয়ে আক্রমণে উঠে আসে বার্সা। ২৬ মিনিটে পেয়ে যায় কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখাও। এবার বার্সার ত্রাতা হিসেবে হাজির হন মেসি নিজেই। ক্রোয়েট মিডফিল্ডার ইভান রাকিতিচ বাঁ প্রান্ত থেকে ক্রস দেন মেসির দিকে। আর তা থেকে জায়গা বানিয়ে নান্দনিক ভলিতে দলকে সমতায় ফেরান বার্সা ফরোয়ার্ড।
বার্সার সমতায় ফেরার স্বস্তি অবশ্য দীর্ঘায়িত হয়নি। প্রথমার্ধের ৪২ মিনিটে মার্কাদোর অসাধারণ এক গোলে ফের এগিয়ে যায় সেভিয়া। বার্সা গোলরক্ষক টের স্টেগানের ক্লিয়ার করা বল মাঝমাঠে ফিরে গেলে সেভিয়ার সারাবিয়া তার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বার্সার ডি-বক্সের ৬ গজে পাঠিয়ে দেন, সেখানে অপেক্ষায় থাকা মার্কাদো এমন সুযোগ হেলায় মিস করেননি।
২-১ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যাওয়া সেভিয়া দ্বিতীয়ার্ধ শুরু করে গোলের লিড ধরে রাখার মিশন নিয়ে। পরিস্থিতি দেখে ভিদালকে তুলে নিয়ে ডেম্বেলেকে নামান বার্সা কোচ। আর ফরম্যাশনেও আনেন পরিবর্তন। ৪-৩-৩ থেকে ৪-২-৩-১ ফরম্যাশনে খেলতে থাকে বার্সা। তাতে প্রায় কাজ হয়েই গিয়েছিল। ৫৬ মিনিটে দারুণ এক সুযোগ হাতছাড়া হয়। কৌতিনহোর নেতৃত্বে দারুণ এক কাউন্টার আক্রমণ থেকে বল পান বার্সা স্ট্রাইকার লুইস সুয়ারেজ। তিনি বল পাঠিয়ে দেন গোলবারের কাছে থাকা ডেম্বেলের পায়ে। কিন্তু এমন সহজ সুযোগটা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন ডেম্বেলে।
অবশেষে ফের ত্রাতা হিসেবে হাজির হন মেসি। উসমান ডেম্বেলে অবশেষে কাজের কাজটি করে দেন। ৬৭ মিনিটে সেভিয়া গোলরক্ষকের ভুলে বল পেয়ে ফের আক্রমণ শানিয়ে এগিয়ে আসেন রাকিটিচ। প্রতিপক্ষের ডি-বক্সে থাকা ডেম্বেলে দৃষ্টিনন্দন এক পাসে বল পাঠিয়ে দেন মেসির পায়ে আর বাকি কাজ সারতে আর্জেন্টাইন ফুটবল জাদুকর মোটেও ভুল করেননি।
৭২ মিনিটে অল্পের জন্য হ্যাটট্রিক করতে পারেননি মেসি। বাঁ প্রান্ত থেকে বল নিয়ে একক প্রচেষ্টায় শট নিলেও তা অল্পের জন্য ক্রসবার মিস করে উড়ে যায় সাইডলাইনে। এদিকে নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে ফের আক্রমণ শানাতে থাকে সেভিয়াও। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে জমে যায় ম্যাচ। ৭৮ মিনিটে গোল করতে মরিয়া মেসি ফের মিস করেন। এবার ডি-বক্সে সুবিধাজনক স্থান থেকে নেওয়া তার শট ক্রসবারের উপর দিয়ে যায়।
অবশেষে ম্যাচের ৮৫ মিনিটে হ্যাটট্রিক গোলের দেখা পেলেন মেসি। আর দলও পেলো কাঙ্ক্ষিত জয়। রিটার্ন পাস নিয়ে ছুট লাগান বার্সার সেন্টার-ব্যাক সার্জি রবার্তো। বাঁ প্রান্ত থেকে আক্রমণ শানিয়ে তিনি বল ঠেলে দেন বদলি হিসেবে নামা অ্যালেনার পায়ে, যদিও তার বল রক্ষণে পরাস্ত হয়। কিন্তু ফিরতি শটে সেভিয়া গোলরক্ষকের মাথার উপর দিয়ে বল জালে জড়িয়ে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন মেসি।
শুধু নিজে গোলই করেননি। দ্বিতীয়ার্ধের অতিরিক্ত সময়ে বন্ধু সুয়ারেজকে দিয়ে গোলও করিয়েছেন মেসি। অ্যালেনার বাড়িয়ে দেওয়া পাস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সুয়ারেজের পথে ঠেলে দেন আর উরুগুইয়ান স্ট্রাইকারের নেওয়া শট ঠেকানোর কোনো উপায়ই ছিল না সেভিয়া গোলরক্ষকের হাতে।
২৫ ম্যাচে ৫৭ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষেই রইলো বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। এক ম্যাচ কম খেলে দ্বিতীয় স্থানে থাকা অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদের পয়েন্ট ৪৭ আর তৃতীয় স্থানে থাকা রিয়াল মাদ্রিদের পয়েন্ট ৪৫ (২৪ ম্যাচ)।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৯
এমএইচএম/টিএ