ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফুটবল

মুসলিম লাইভস ম্যাটার: ওজিল

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০২০
মুসলিম লাইভস ম্যাটার: ওজিল উইগুর মুসলিমদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয় ওজিল/ছবি: সংগৃহীত

চীনে উইগুর মুসলিমদের সঙ্গে হওয়া অন্যায় আচরণ নিয়ে গত বছরের ডিসেম্বরে টুইট করেছিলেন আর্সেনালের জার্মান মিডফিল্ডার মেসুত ওজিল। তার ওই টুইটের জবাবে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখায় চীন।

এমনকি চীনে আর্সেনালের ম্যাচের সম্প্রচারও বন্ধ করা হয়। যদিও ওজিলের সমর্থনে এগিয়ে আসেন বহু মানুষ।

কিন্তু ওই কঠিন সময়ে ওজিলের পাশে দাঁড়ায়নি আর্সেনাল। বরং ওজিলের টুইটের সঙ্গে ক্লাবের কোনো সম্পর্ক নেই বলে বিবৃতি প্রকাশ করে ক্লাব কর্তৃপক্ষ। এতদিন পর সেই ঘটনায় কতটা হতাশ হয়ে পড়েছিলেন তা জানালেন জার্মানির বিশ্বকাপজয়ী তারকা।

সন্ত্রাসবাদ ঠেকানোর অজুহাতে চীনে উইগুর মুসলিমদের ওপর পাশবিক অত্যাচার চালানোর অনেক অভিযোগ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেসব খবর থেকে জানা যায়, লাখ লাখ উইগুর মুসলিমদের জোর করে বিশেষ প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে বন্দি করে রাখা হয়েছে। সেসব দেখে স্থির থাকতে পারেননি ওজিল।

তুর্কি বংশোদ্ভুত এই ফুটবলার তখন এক টুইটে লেখেন, ‘তারা (চীনারা) কোরআন পুড়িয়ে দিচ্ছে। তারা তাদের (উইগুর মুসলিমদের) মসজিদ বন্ধ করে দিচ্ছে, স্কুল বন্ধ করে দিচ্ছে, তাদের ধর্মীয় নেতাদের হত্যা করছে। পুরুষদের জোর করে ক্যাম্পে বন্দি করা হচ্ছে এবং নারীদের চীনা পুরুষদের সঙ্গে থাকতে ও তাদের বিয়ে করতে বাধ্য করছে। কিন্তু মুসলমানরা চুপ করে আছে। তারা কোনো আওয়াজ তুলছে না। তারা তাদের (উইগুর মুসলিমদের) ত্যাগ করেছে। তারা কি জানে না, অন্যায় করা আর সহ্য করা একই কথা?’

তবে চীনের দাবি, উইগুররা যাতে ধর্মীয় জঙ্গিবাদে না জড়ায় সেলক্ষ্যে তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে। পশ্চিমা সরকার ও মিডিয়াগুলো অবশ্য এর তীব্র বিরোধিতা করে আসছে। এসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে উইগুর মুসলিমদের জোর করে বন্দি করে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের।  

এদিকে ওজিলের টুইটের পর এক বিবৃতিতে আর্সেনানের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় মেসুত ওজিলের করা মন্তব্য তার ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন করে, এর সাথে ক্লাবের মতাদর্শের কোনো সম্পর্ক নেই। আর্সেনাল সবসময়ই একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। ’ 

লন্ডনের ক্লাবটির এই বিবৃতি চীনের সামাজিক মাধ্যম ওয়েইবোতে প্রকাশিত হয়। এমনকি আর্সেনালের হাজারো সমর্থক ওই সময় ক্লাবের বিবৃতির প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে। অনেকে আবার ওজিলের বিরুদ্ধে আরো কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানায় ক্লাব কর্তৃপক্ষের প্রতি।  

ওজিলের পক্ষে না দাঁড়ালেও সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসারের নির্যাতনে কৃষ্ণাঙ্গ বাস্কেটবল খেলোয়াড় জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর প্রতিবাদে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে আর্সেনাল। এই বিষয়টা নিয়েই ক্ষুব্ধ ওজিল ‘দ্য অ্যাথলেটিক’কে বলেন, ‘সব মানুষই সমান। কে মুসলিম, কে খ্রিস্টান, কে ইহুদী কিংবা কে সাদা বা কালো এটা কোনো ব্যাপার না। আমরা সবাই সমান। ’

নিজের করা বিতর্কিত টুইট ও আর্সেনালের ভূমিকা নিয়ে ওজিল বলেন, ‘আমি যা বলেছি তা চাইনিজদের বিরুদ্ধে নয়। এটা ছিল যে বা যারা উইগুর মুসলিমদের সঙ্গে এসব করছে এবং যারা তাদের এ কাজে সহায়তা করছে তাদের বিরুদ্ধে, যেমন অন্যান্য মুসলিম দেশগুলো। আমি আর্সেনালকে অনেক দিয়েছি, মাঠে এবং মাঠের বাইরেও। ফলে তাদের প্রতিক্রিয়ায় আমি হতাশ হয়েছিলাম। তারা দাবি করেছিল যে তারা রাজনীতিতে জড়িত হয় না কিন্তু এটা রাজনীতি নয় এবং তারা অন্য অনেক ইস্যুতে ঠিকই জড়ায়। ’

এরপরই ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনের প্রসঙ্গে ওজিল বলেন, ‘আমেরিকায়, আমরা দেখলাম জর্জ ফ্লয়েডকে হত্যা করা হলো এবং পুরো বিশ্ব ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলন নিয়ে মুখ খুললো। এটা সঠিক সিদ্ধান্ত। আমরা সবাই সমান এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করা অবশ্যই ভালো কাজ। বহু কৃষ্ণাঙ্গ খেলোয়াড় এবং সমর্থক আছে আর্সেনালের এবং ক্লাব তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে যা খুবই ভালো ব্যাপার। কিন্তু আমি আশা করি মুসলিমদের ক্ষেত্রেও মানুষ একই কাজ করবে কারণ আর্সেনালেরও বহু মুসলিম খেলোয়াড় ও সমর্থক আছে এবং বিশ্বের এখন এটা বলার সময় হয়েছে যে, মুসলিম লাইভস ম্যাটার। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০২০
এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।