কাতারের বিশ্বকাপ স্বত্ব পাওয়াটাই ছিল বিতর্কিত। সে সময়ের ফিফা প্রেসিডেন্ট সেপ ব্লাটার ফুটবলের বিশ্বায়নে প্রতিটি অঞ্চলকে প্রাধান্য দিতে মরুর দেশটি বাছাই করেছিলেন।
সেই যে শুরু, এরপর বিতর্ক যেন কোনোভাবেই কাতারের পিছু ছাড়ছে না। আয়োজনকে ঘিরে নেতিবাচক সংবাদে কিছুদিন পর পরই শিরোনাম হতে হয় দেশটিকে। সর্বশেষ উঠে এসেছে ভয়ানক এক তথ্য। গত ১০ বছরে বিশ্বকাপকে ঘিরে কাতারের অবকাঠামো উন্নয়নে সাড়ে ৬ হাজারের বেশি দক্ষিণ এশীয় শ্রমিক মারা গেছে। এদের মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কারই বড় অংশ। অনুসন্ধান করে এমনটি নিশ্চিত করেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।
কাতারের সরকারি তথ্যই বলছে ২০১০ সালের ডিসেম্বরে শুরু হওয়া এই যজ্ঞে দ. এশীয়ার পাঁচটি দেশের অভিবাসী শ্রমিকদের প্রতি সপ্তাহে গড়ে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। যেখানে বিশ্বকাপ উপলক্ষে ২০ লাখ প্রবাসী শ্রমিক এখন কাতারে অবস্থান করছেন।
ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এ চারটি দেশের মোট ৫ হাজার ৯২৭ অভিবাসী কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। কাতারের পাকিস্তানি দূতাবাস থেকে জানা গেছে, এ সময় কাতারে পাকিস্তানের ৮২৪ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।
কাতারে অভিবাসী শ্রমিকদের মৃত্যু এর চেয়ে আরও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ এ পাঁচটি দেশ ছাড়াও ফিলিপাইন, কেনিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে শ্রমিকরা কাতারে যান। যদিও ২০২০ সালের শেষের কোনো তথ্য জানা যায়নি।
গত ১০ বছরে কাতার বিশ্বকাপকে ঘিরে নতুন ৭টি স্টেডিয়াম তৈরির পাশাপাশি আরও অনেক বড় কাজ হাতে নিয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্তত ডজনখানেক প্রকল্প রয়েছে। নতুন বিমানবন্দর, রাস্তা, গণপরিবহন, হোটেল ও নতুন শহর নির্মাণেও হাত দিয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা ফেয়ারস্কোয়ার প্রজেক্টস এর পরিচালক নিক ম্যাকগিহান জানান, ২০১১ সাল থেকে কাতারে যেসব প্রবাসী শ্রমিক মারা গেছেন, তাঁদের অধিকাংশই কাতার বিশ্বকাপ আয়োজনের সুযোগ পাওয়ার পর সেখানে গেছেন।
তথ্য মতে জানা যায় ৩৭ জন শ্রমিক মৃত্যুবরণ করেছেন বিশ্বকাপের স্টেডিয়াম বানানোর কাজ করতে গিয়ে। যদিও বিশ্বকাপ আয়োজন কমিটি এর মধ্যে ৩৪ জনের মৃত্যুকেই কাজের বাইরের ঘটনায় মৃত্যু বলছে। যদিও বিশেষজ্ঞরা এসব দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
অন্যদিকে গত ১০ বছরে যত মৃত্যু হয়েছে, তার অধিকাংশকেই স্বাভাবিক মৃত্যু বলে দাবি করেছে কাতার। গার্ডিয়ান যে তথ্য পেয়েছে, সে অনুযায়ী বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের যতজন মারা গেছেন, তার ৬৯ ভাগকে স্বাভাবিক মৃত্যু বলা হয়েছে। ১২ ভাগের মৃত্যু সড়ক দুর্ঘটনায়। শুধু ৭ ভাগের মৃত্যুর সঙ্গে কাজের পরিবেশ জড়িত। আর ৭ ভাগ কর্মী আত্মহত্যা করেছেন। ভারতীয়দের ক্ষেত্রে ৮০ ভাগই নাকি স্বাভাবিক মৃত্যু।
একটি গ্রাফ দিয়ে গার্ডিয়ান জানিয়েছে মৃত্যু হওয়া শ্রমিকদের মধ্যে বাংলাদেশি রয়েছে ১০১৮ জন। তবে সবচেয়ে বেশি ভারতের ২৭১১ জন। নেপালের ১৬৪১ জন। পাকিস্তান ৮২৪ ও শ্রীলঙ্কার ৫৫৭ জন। প্রতিটি দেশের নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে এসব তথ্য সংগ্রহ করেছে সংবাদ সংস্থাটি।
বাংলাদেশি শ্রমিক মোহাম্মদ শহীদ মিয়ার মৃত্যু হয় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে। তার ঘরে পানি ঢুকে শর্টসার্কিট ঘটে এই দুর্ঘটনা হয়।
নেপাল থেকে আসা ঘাল সিং রাই পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে বিশ্বকাপের স্টেডিয়াম এডুকেশন সিটিতে কাজ নিয়েছিলেন। ১০০০ পাউন্ড বেতনে আসা এই শ্রমিক এক সপ্তাহের মধ্যে আত্মহত্যা করেন।
ভারতের শ্রমিক মধু বোল্লাপাল্লের পরিবার বিশ্বাসই করতে পারছে না ৪৩ বছর বয়সীর কিভাবে সাধারণ মৃত্যু হয়। তার মরদেহ ঘরের মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখা যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২১
এমএমএস