ঢাকা: বাংলাদেশে থাইরয়েডে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর থেকেও দ্বিগুণ বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ এন্ড্রোক্রাইন সোসাইটির থাইরয়েড টাস্কফোর্স।
শুক্রবার (২৪ মে) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ হলে বিশ্ব থাইরয়েড দিবস-২০২৪ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানানো হয়।
থাইরয়েড টাস্কফোর্সের কোঅর্ডিনেটর ও বাংলাদেশ এন্ড্রোক্রাইন সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহজাদা সেলিম বলেন, রোগ হিসেবে আমরা ডায়াবেটিসকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি। কিন্তু বাংলাদেশে থাইরয়েডে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর থেকেও দ্বিগুণ। দেশে যদি আনুমানিক দেড় কোটি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগী থাকে তাহলে থাইরয়েডে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা হবে ৩ থেকে ৪ কোটি।
তিনি আরও বলেন, থাইরয়েডের হরমোন ঘাটতি হলে শিশুদের দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। পরবর্তী সময়ে দৈহিক বৃদ্ধির সমতা আনা গেলেও মেধার উন্নতি করা সম্ভব হয় না; অর্থাৎ শিশু-কিশোরদের হাইপোথাইরয়েডিজম হলে তা দ্রুত সমাধান করা না গেলে বুদ্ধি-বৃত্তির বিকাশ স্থায়ীভাবে ব্যাহত হবে।
বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন নেই, থাইরয়েডের পরিপূর্ণ চিকিৎসা বাংলাদেশেই রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই থাইরয়েডের সমস্যার জন্যই অনেক দম্পতির সন্তান হয় না। এজন্য বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর চিকিৎসার জন্য দম্পতিরা ভারত, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে গিয়ে থাকেন। কিন্তু তাদের অন্য কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন নাই। সচেতনতা বাড়ানো হলে, বেশি বেশি করে প্রচার করলে মানুষ থাইরয়েড সম্পর্কে সচেতন হবে এবং দেশেই সুচিকিৎসা নেবে।
দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু বলেন, একটি জাতি মেধাবী হবে কি-না সেটা নির্ভর করে এই থাইরয়েডের ওপর। হরমোন সমস্যার জন্য আমাদের সন্তান বুদ্ধ্যঙ্ক (মানসিক বয়স এবং সাধারণ বয়সের অনুপাতকে বোঝায়) হচ্ছে সেটা আমরা বুঝতেও পারছি না। এ ব্যাপারে সচেতনতা বাড়াতে হবে। এর জন্য অনেক পথ রয়েছে। সংবাদ মাধ্যমের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম রয়েছে, সেখানেও সচেতনতা বাড়াতে হবে।
এ সময় অন্য বক্তারা বলেন, থাইরয়েড গ্রন্থিটি গলার সামনের দিকের অবস্থিত। গ্রন্থিটি দেখতে প্রজাপতি সাদৃশ এবং এটি শ্বাসনালির সামনে থাকে। যদিও এটি একটি ছোট গ্রন্থি, কিন্তু এর কার্যকারিতা ব্যাপক। থাইরয়েড গ্রন্থি কর্তৃক নিঃসৃত হরমোন মানব পরিপাক প্রক্রিয়ার অন্যতম ভূমিকা পালন করে। ভ্রূণ অবস্থা থেকে আমৃত্যু থাইরয়েড হরমোনের প্রয়োজন অপরিহার্য। বর্তমানে বিপুল জনগোষ্ঠী থাইরয়েড রোগে আক্রান্ত। এদের অর্ধেকের বেশিই জানে না যে, তারা থাইরয়েড সমস্যায় ভুগছেন। বাংলাদেশে থাইরয়েড সমস্যার সব ধরনকে একসঙ্গে হিসাব করলে তা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশের কাছাকাছি হবে। প্রাপ্ত বয়স্ক নারীদের প্রায় ২ শতাংশ এবং পুরুষদের প্রায় ০.২ শতাংশ হাইপারথাইরয়েডিজম (থাইরয়েড হরমোনের বৃদ্ধিজনিত সমস্যা) রোগে ভোগেন। ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সের মধ্যে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ, নারীদের মধ্যে ৩.৯ শতাংশ থেকে ১.৪ শতাংশ হারে হাইপোথাইরয়েডিজম (থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতিজনিত সমস্যা) থাকতে পারে। আরও প্রায় ৭ শতাংশ নারী ও পুরুষ সাবক্লিনিক্যাল হাইপোমাইরয়েডিজমে ভুগে থাকেন।
বক্তারা আরও বলেন, নবজাতক শিশুদেরও থাইরয়েডের হরমোন ঘাটতিজনিত সমস্যা হতে পারে। এর হার ১০ হাজার জীবিত নবজাতকের জন্য ২-৮ হতে পারে। বাড়ন্ত শিশুরাও থাইরয়েড হরমোন ঘাটতিতে ভুগতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মির্জা শরীফুজ্জামান, থাইরয়েড টাস্কফোর্সের সদস্য সচিব ডা. আফিয়া যায়নব তন্বী, ডা. সৈয়দ আজমল মাহমুদ।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৩ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০২৪
ইএসএস/এসআইএ