ঢাকা: শহর ও গ্রামে টিকাদান প্রকল্পে বরাদ্দকৃত জনবলের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ পদ এবং ইপিআই সদর দপ্তরে ৪৩ শতাংশ পদ এখনো শূন্য রয়েছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলরুমে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন এবং ইউনিসেফ বাংলাদেশের যৌথ আয়োজনে ‘বাংলাদেশে টিকা কার্যক্রমের সাফল্য, বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ এবং করণীয়’ শীর্ষক গবেষণার প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন এবং ইউনিসেফ বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) এর সহায়তায় ২০২৪ সালে পরিচালিত তিনটি স্বতন্ত্র গবেষণা থেকে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, মন্ত্রণালয়ের অধীনে শহর ও গ্রামে টিকাদান প্রকল্পে বরাদ্দকৃত জনবলের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ পদ এবং ইপিআই সদর দপ্তরে ৪৩ শতাংশ পদ এখনো শূন্য রয়েছে। এছাড়া বরাদ্দকৃত জনসংখ্যাও প্রয়োজনের তুলনায় কম, কারণ আরবান ইমিউনাইজেশন স্ট্র্যাটেজি-২০১৯ এবং ইপিআই মাইক্রোপ্ল্যান-২০২৪ অনুসারে প্রতি ৫০ হাজার জনসংখ্যার জন্য ছয়জন টিকাদানকর্মী প্রয়োজন, যা বাংলাদেশে এখনো বাস্তবায়ন করা হয়নি।
এছাড়াও জনসংখ্যার ঘনত্ব অনুসারে টিকাদান কেন্দ্রের অসম বণ্টন লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে দুর্গম এবং উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় যে সংখ্যায় টিকাদানকেন্দ্র থাকা দরকার সেই সংখ্যক টিকাদানকেন্দ্র নেই। টিকাদান কর্মসূচি সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য বাজেট বরাদ্দে দেরি হচ্ছে, এছাড়া ৫ম HPNSP (Health, Population and Nutrition Sector Program) এখনো অনুমোদিত হয়নি এর ফলে টিকা ক্রয়, টিকা পরিবহন এবং বণ্টনে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।
আগামী ২০২৯ সালের পর গ্যাভি (GAVI) টিকাদান প্রকল্পে সহায়তা বন্ধ হয়ে গেলে সরকারকে নিজস্ব অর্থায়নে টিকাদান কর্মসূচি পরিচালনা করতে হবে। ইপিআই এর সাম্প্রতিক তথ্য অনুসারে ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত টিকায় বাজেট বরাদ্দ থাকলেও বিশেষ কিছু অ্যান্টিজেন যেমন পিসিভি, ওপিভি এবং এমআর টিকার সংকট দেখা যাচ্ছে।
টিকাদান কর্মীদের নিয়োগের পর টিকাদান বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকলেও রিফ্রেসার প্রশিক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। তাছাড়া সারাদেশে শহর থেকে গ্রাম পর্যায়ে টিকাদান কেন্দ্র পরিদর্শন, টিকাদান পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের অভাব পরিলক্ষিত হয়।
দুর্গম এবং উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় টিকা পরিবহন একটি বড় সমস্যা। বিশেষ করে পাহাড়ি, হাওর এবং নদীতীরবর্তী এলাকায় যানবাহনের সমস্যা থাকায় সঠিক সময়ে টিকাদান কেন্দ্রে টিকা পরিবহন সহজ হয় না। বস্তিবাসী, ভাসমান জনগোষ্ঠী, পাহাড়ি, হাওর এবং নদী তীরবর্তী এলাকায় টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রা অজানা থাকায় জিরো ডোজ এবং মিসড ডোজ শিশুদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে।
গবেষণার প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) উচ্চ কভারেজ নিশ্চিত করার জন্য সুপারিশগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে শহর ও গ্রামে টিকাদান প্রকল্পে বরাদ্দকৃত জনবলের মধ্যে যে শূন্যপদ আছে সেখানে দ্রুত নিয়োগ দেওয়া, জনসংখ্যা ভিত্তিক জনবল নীতি অভিযোজন করা, জনসংখ্যার ঘনত্বের ওপর ভিত্তি করে টিকাকেন্দ্রের সুষম বণ্টন, প্রতিটি টিকাদান কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিনের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা, ভ্যাকসিন সরবরাহ ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করা, তাছাড়া অদূর ভবিষ্যতে ভ্যাকসিনের যে সংকট দেখা দিতে পারে সে ক্ষেত্রে যথাযত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
এছাড়া ইপিআই প্রোগ্রাম মনিটরিং এবং মূল্যায়নের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের অনুপ্রাণিত করে মানসম্পন্ন তত্ত্বাবধান এবং পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে টিকাদান কর্মসূচিকে শক্তিশালী করা প্রয়োজন। ভৌগলিক এবং আর্থ-সামাজিক বৈষম্য চিহ্নিত করতে এবং শহুরে টিকাদান নীতিকে শক্তিশালী করার জন্য নিয়মিত মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।
টিকাদানের ক্ষেত্রে একটি ডাটাবেস তৈরি এবং কার্যকর করা প্রয়োজন, যা জাতীয় কর্মশক্তি পরিকল্পনার জন্য সঠিক তথ্য নিশ্চিত করবে। বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা এবং নির্দিষ্ট ভৌগলিক এলাকার মানুষের মধ্যে টিকাদান নিশ্চিত করার জন্য নির্দিষ্ট কৌশলের পরিকল্পনা (ম্যাপিং, মোবাইল ক্লিনিক, ডোর-টু-ডোর টিকাদান) বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।
প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা এবং টিকাদানের জন্য সর্বোত্তম বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিত করার পাশাপাশি অ্যাডভোকেসি, বিকল্প তহবিল উৎসের জন্য নীতি সংস্কার এবং সরকারি বেসরকারি অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করাও জরুরি।
সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন উক্ত গবেষণা সমূহের পরিচালক এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডা. নিজাম উদ্দিন আহমেদ।
সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন ইউনিসেফ বাংলাদেশ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন পরিচালিত উক্ত গবেষণা প্রকল্পের পলিসি অ্যাডভাইজার অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০২৫
আরকেআর/আরআইএস