ঢাকা: অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশের স্বাস্থ্যখাতে একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলেও তা সফলভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব হয়েছে এবং চিকিৎসা খাতের সংস্কার কাজ পরবর্তীতেও অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর মিন্টু রোডের শহীদ আবু সাঈদ আন্তর্জাতিক কনভেনশন হলে অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরে স্বাস্থ্যখাতের অর্জন এবং ভবিষ্যৎ সংস্কার পরিকল্পনা বিষয়ক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
নূরজাহান বেগম বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম কাজ ছিল আন্দোলনে শহীদদের তালিকা প্রণয়ন ও প্রকাশ এবং আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা। মোট ৪০ জন জুলাই আহতকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হয়। যাদের মধ্যে থাইল্যান্ডে ২৬ জন, সিঙ্গাপুরে ১৩ জন এবং রাশিয়ায় একজন রোগী চিকিৎসা গ্রহণ করেন। এ সব রোগী চোখ, অঙ্গহানি, ব্রেইন এবং স্পাইনাল কর্ডের গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত।
তিনি বলেন, গত ২৭ জুলাই পর্যন্ত স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ কর্তৃক মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশের ভিত্তিতে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার নিমিত্তে প্রেরণের লক্ষ্যে ১০৪ জন রোগীর তালিকা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তারমধ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক ৩৮ জন রোগীকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সহযোগিতায় মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশের আলোকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আরও আহত রোগীকে বিদেশের হাসপাতালে পাঠানোর কার্যক্রম চলমান রয়েছে। গত ২৭ জুলাই পর্যন্ত স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় হতে উন্নত চিকিৎসার জন্য সর্বমোট ৭৮ জনকে বিদেশে পাঠানো হয়েছে।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, চিকিৎসকদের পেশাগত মর্যাদা ও কর্মপরিবেশ উন্নয়নের অংশ হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকার প্রায় সাত হাজার চিকিৎসককে পদোন্নতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সুপার নিউমারারি পদ সৃষ্টি করে চিকিৎসকদের ব্যাপক পরিসরে পদোন্নতির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বিপুল সংখ্যক চিকিৎসককে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, পরিচালক, জুনিয়র কনসালটেন্ট ইত্যাদি পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি) এর মাধ্যমে ৮৬টি বিষয়ে প্রায় ৮০০ চিকিৎসককে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শূন্য পদে পদোন্নতির কার্যক্রম শেষে সুপার নিউমারারি পদে আরও প্রায় ছয় হাজার চিকিৎসককে বিভিন্ন পদে পদোন্নতি প্রদান করা হবে। পাশাপাশি ৪৩ হাজার সিনিয়র নার্সের মধ্যে কয়েকজনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের কাজে ধীরগতির বিষয়ে স্বীকার করে তিনি বলেন, বিভিন্ন পক্ষ একে অন্যের বিরুদ্ধে মামলা করায় কাজের গতি আরও কমে গেছে। চিকিৎসকদের সুপার নিউমারি পদোন্নতি ও দীর্ঘদিন একই পদে থাকা সিনিয়র স্টাফ নার্সদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে মামলার ঘটনা ঘটেছে। অনেক ক্ষেত্রে বদলি বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। তবে আমরা ডিজিটাইজেশনের দিকে এগোচ্ছি, যেন পদোন্নতিতে কোনো ধরনের বাণিজ্য না হয়।
অঙ্গ প্রতিস্থাপন আইন নিয়ে জটিলতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশে না গিয়ে যেন দেশেই অঙ্গ প্রতিস্থাপন সম্ভব হয়, সে জন্য আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সংশোধিত আইন ইতোমধ্যে উপদেষ্টা পরিষদে পাস হয়েছে। আগামী সপ্তাহেই প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
চিকিৎসা শিক্ষায় মানোন্নয়ন বিষয়ে নূরজাহান বেগম বলেন, মেডিকেল কলেজের অনেক হোস্টেলে থাকার মতো পরিবেশ নেই। তাই ১৯টি নতুন ছাত্রাবাস তৈরির উদ্যোগ নিয়েছি, যাতে ১০ হাজার শিক্ষার্থী থাকতে পারবে। সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। বেসরকারির পাশাপাশি অনেক সরকারি কলেজেও মানসম্মত পড়াশোনার পরিবেশ নেই। কিছু কলেজ মার্জ করার পরিকল্পনাও রয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের ক্ষতির চেয়ে বরং শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
বেসিক সাবজেক্টের শিক্ষক সংকট মোকাবিলায় শতভাগ বেতন বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান উপদেষ্টা বলেন, এখানে অতিরিক্ত উপার্জনের সুযোগ না থাকায় অনেকেই আসতে চায় না।
দেশে মানসম্মত ফিজিওথেরাপির অভাব রয়েছে উল্লেখ করে নূরজাহান বেগম বলেন, আমরা চীনকে অনুরোধ করেছি সহযোগিতা করার জন্য। এরই মধ্যে ২৭ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং আরও ১৫ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। আমরা চেয়েছি সৎ, দক্ষ এবং নির্দলীয় ব্যক্তিদের নিয়োগ দিতে। তবে এটি কঠিন ছিল, তবুও বিভিন্নভাবে কাজ করা হয়েছে।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, চিকিৎসা খাতের সংস্কার কাজ পরবর্তীতেও অব্যাহত থাকবে এবং যেসব জায়গায় কাজ শুরু হয়েছে, তা ভবিষ্যতে আরও এগিয়ে যাবে।
আরকেআর/আরআইএস