ঢাকা, শুক্রবার, ২৪ আশ্বিন ১৪৩২, ১০ অক্টোবর ২০২৫, ১৭ রবিউস সানি ১৪৪৭

স্বাস্থ্য

টিকাদানে প্রতি বছর ৯৪ হাজার শিশুর মৃত্যু প্রতিরোধ হয়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:১৬, অক্টোবর ৯, ২০২৫
টিকাদানে প্রতি বছর ৯৪ হাজার শিশুর মৃত্যু প্রতিরোধ হয়

গত দুই দশকে পাঁচ কোটিরও বেশি শিশুকে টিকা দেওয়া হয়েছে, যা প্রতি বছর প্রায় ৯৪ হাজার শিশুর মৃত্যু প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছে বলে একটি সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে।  

বৃহস্পতিবার (০৯ অক্টোবর) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলরুমে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের আয়োজনে ‘বাংলাদেশে টিকা কার্যক্রমের সাফল্য, বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ এবং করণীয়’ বিষয়ক এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডা. নিজাম উদ্দিন আহমেদ, ইউনিসেফ বাংলাদেশের হেলথ ম্যানেজার ডা. রিয়াদ মাহমুদ।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ইউনিসেফ বাংলাদেশের চিফ (হেলথ) ডা. চন্দ্র শেখর সোলোমন।  

সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা ও স্বাগত দেন ইউনিসেফ বাংলাদেশ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন পরিচালিত গবেষণা প্রকল্পের পলিসি অ্যাডভাইজার অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম।

সংবাদ সম্মেলন থেকে বলা হয়, ইপিআই এর মাধ্যমে পাঁচ বছরের নিচে শিশু মৃত্যুহার ৮১.৫ শতাংশ কমানো সম্ভব হয়েছে, যা শুধুমাত্র বাংলাদেশ, নেপাল, রুয়ান্ডা, ভিয়েতনাম, ইথিওপিয়া ও মালাউই, মোট ছয়টি দেশেই অর্জিত হয়েছে। গত দুই দশকে পাঁচ কোটিরও বেশি শিশুকে টিকা দেওয়া হয়েছে, যা প্রতি বছর প্রায় ৯৪ হাজার শিশুর মৃত্যু প্রতিরোধে সক্ষম হয়েছে। টিকায় বিনিয়োগকৃত প্রতি এক ডলারে ২৫.৪ ডলার রিটার্ন আসে, যা প্রমাণ করে টিকা স্বাস্থ্য ও উন্নয়নের অন্যতম সেরা বিনিয়োগ।  

বাংলাদেশ পোলিও নির্মূল, মাতৃ ও নবজাতক ধনুষ্টঙ্কার নির্মূল এবং হেপাটাইটিস নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে। কিশোরীদের মধ্যে ৯৩ শতাংশ এইচডিভি টিকা কভারেজ অর্জিত হয়েছে, যা সার্ভিকাল ক্যানসার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি নির্দেশ করছে।

টাইফয়েড জ্বর প্রতিরোধে সরকারের পক্ষ থেকে ইপিআই সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ‘টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন-২০২৫’ এর আওতায় নয় মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী সব শিশুকে টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (টিসিভি) দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। এ ক্যাম্পেইনের আওতায় মাদ্রাসা, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত সব ছাত্র-ছাত্রী (প্লে/নার্সারি, কিন্ডারগার্টেন থেকে ৯ম শ্রেণি/সমমান শ্রেণি পর্যন্ত) এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরে থাকা কমিউনিটির নয় মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী সব শিশুকেও টিসিভি টিকা দেওয়া হবে।  

আগামী ১২ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত নতুন টিকা টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (টিসিভি) ক্যাম্পেইন দেশব্যাপী পরিচালিত হবে এবং ২০২৬ সালে আরও নতুন টিকা চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।

টিকাদান কার্যক্রমের সম্প্রসারণে কিছু চ্যালেঞ্জ এখনও বিদ্যমান। টিকাদান প্রকল্পে বরাদ্দকৃত জনবলের প্রায় ৪০ শতাংশ পদ এখনও শূন্য, যার মধ্যে স্বাস্থ্য সহকারী (এইচএ), সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক (এএইচআই), স্বাস্থ্য পরিদর্শক (এইচআই), ইপিআই টেকনিশিয়ান/পর্যবেক্ষকসহ ইপিআই সদর দপ্তরের ৪৩ শতাংশ পদও শূন্য। ৪০ জেলায় টিকাদান কর্মী নিয়োগ এখনও সম্পন্ন হয়নি। জেলা পর্যায়ে কোল্ড চেইন টেকনিশিয়ানের পদে শূন্যতার হার ৫৩ শতাংশ। বাজেট বরাদ্দে দেরি এবং ৫ম এইচপিএনএসপি অনুমোদনের বিলম্ব টিকা ক্রয়, পরিবহন ও বিতরণে বাধা সৃষ্টি করছে যার ফলে জেলা পর্যায়ে টিকার ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। ভৌগোলিক অবস্থার ভিত্তিতে টিকাদান কেন্দ্র ও কর্মীদের সুষ্ঠু বণ্টন না থাকায় দুর্গম ও উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পর্যাপ্ত টিকাদান কেন্দ্র ও কর্মীর অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে।

নগর এলাকায় কার্যকর টিকাদান কৌশল ও পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় সেখানে কর্মসূচির ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। এছাড়া জনসংখ্যা নির্ভুলভাবে নির্ধারণ না হওয়ায় টিকাদানের লক্ষ্য নির্ধারণে অসামঞ্জস্যতা তৈরি হচ্ছে এবং টিকা বরাদ্দে জটিলতা দেখা দিচ্ছে।

পর্যবেক্ষণ ও প্রত্যক্ষ তদারকির অভাবের কারণে টিকার অপচয়, টিকা না পাওয়া শিশু এবং ঝরে পড়া শিশুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গ্রামাঞ্চলে টিকাদানকারী ও জনগণের মধ্যে আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগ (আইপিসি) সীমিত, আর শহরাঞ্চলে এ ধরনের যোগাযোগ কার্যত অনুপস্থিত।

জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে টিকাদান কর্মসূচিকে আরও শক্তিশালী করতে সরকারের উচিত অবিলম্বে শূন্যপদে নিয়োগ সম্পন্ন করা, সিটি করপোরেশন এলাকায় নিজস্ব টিকাদান কর্মী নিয়োগ করা এবং বাজেট বরাদ্দ ও বিতরণ দ্রুত নিশ্চিত করা। ভ্যাকসিন সরবরাহ ও সরকারি বাজেটের আওতায় কোল্ড চেইন রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থা (যা বর্তমানে ইউনিসেফের সহায়তায় পরিচালিত হচ্ছে) নিশ্চিত করতে হবে।  

পাশাপাশি, জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য লক্ষ্যভিত্তিক প্রচারণা চালানো এবং দুর্গম এলাকায় টিকাদান কার্যক্রম জোরদারে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। এছাড়া ইপিআই/এমআইএস/ডিজিএইচএস এর উচিত বাজেট বরাদ্দের মাধ্যমে ইউনিসেফ-সহায়তাপ্রাপ্ত সব ডিজিটাল উদ্ভাবন যেমন E-Tracker, VaxEPI, eVLMIS এবং GIS ভিত্তিক অনলাইন মাইক্রোপ্ল্যানিং সিস্টেম সম্প্রসারণ ও টেকসইভাবে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। একই সঙ্গে নিয়মিত প্রশিক্ষণ, পর্যবেক্ষণ ও মনিটরিং কার্যক্রম নিশ্চিত করা হলে ইপিআই কর্মসূচি আরও কার্যকর ও স্থায়ী হবে। এছাড়া সরকারি, বেসরকারি সংস্থা, এনজিও এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের মধ্যে সমন্বয় নিশ্চিত করার মাধ্যমে (বিশেষ করে শহরের টিকাদান কর্মসূচিতে) কার্যক্রমের সফল বাস্তবায়নে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

টিকাদান কার্যক্রম আরও জোরদার করতে বাংলাদেশ সরকার টিকাদানের জন্য এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ করেছে এবং ইতোমধ্যে ২৪ জেলায় টিকাদান কর্মী নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া, ইউনিসেফের সহায়তায় টিকার ঘাটতি সমস্যা আগামী নভেম্বর মাসের মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে, ফলে সারাদেশে টিকাদান কার্যক্রম আরও নির্বিঘ্নভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হবে। আগামী ১২ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত নতুন টিকা টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (টিসিভি) ক্যাম্পেইন দেশব্যাপী পরিচালিত হবে এর ফলে প্রায় পাঁচ কোটি শিশুকে টাইফয়েড জ্বর প্রতিরোধে টিকা দেওয়া হবে।

আরকেআর/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।