ঢাকা: ২০ বছর বয়েসী তাসলিমা বেগম একজন গৃহিণী। তার স্বামী মো. মামুন চাকরিসূত্রে ঢাকায় থাকেন।
এদিকে, বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই অসুস্থবোধ করতে থাকেন তিনি। সাধারণ ডাক্তারের কাছে গিয়ে চিকিৎসা করান। এরপরেও রোগ ভালো হয় না। এরই মধ্যে তিনি আবার গর্ভবতীও হন। সেবিকা আঁখি আকতার আসেন তার বাড়িতে।
তাসলিমার গলায় ফোঁড়ার মতো গোলাকার ফোলা অবস্থা দেখে যক্ষ্মার সন্দেহ হয় তার। বান্দরবানে একজন যক্ষ্মা (টিবি) রোগের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়, তাসলিমাকে।
ওই ডাক্তার যক্ষ্মা রোগের কিছু পরীক্ষা দেন এবং তারা এসব পরীক্ষা চট্টগ্রাম থেকে করিয়ে নিয়ে আসেন। এতে গ্ল্যান্ড টিবি শনাক্ত হয়।
এরপর ওই স্বাস্থ্যকর্মীর কাছে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী, চিকিৎসা নেন তাসলিমা। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে রোগীর চিকিৎসা শুরু হয়। কয়েক মাস ধরে চলে তার চিকিৎসা। স্বাস্থ্যকর্মী ও সেবিকাদের পরিচর্যায় আজ তাসলিমা পুরোপুরি সুস্থ।
পার্বত্য বান্দরবানের সদর উপজেলার শেরেবাংলা গ্রামে বসেও এ ধরনের চিকিৎসা পেয়ে রীতিমতো অভিভূত তাসলিমা। সে খুবই খুশি। স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতি তার যেন কৃতজ্ঞতার শেষ নেই!
তাসলিমা জানালেন, স্বাস্থ্যকর্মীদের সেবা ও যক্ষ্মা বিষয়ে এই সুদূর পাবর্ত্য জেলায় কোনো সেবা না থাকলে হয়ত আমি এতদিন আর বাঁচতাম না।
বান্দরবান সদরের মধ্যমপাড়া গ্রামের উমং চিং মারমা কাশির সমস্যা থাকায় বাড়ির কাছে যক্ষ্মা বিষয়ে সরকারের দেওয়া মাঠপর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীর সঙ্গে দেখা করেন।
মেডিকেল অফিসার তার লক্ষণ দেখে কফ পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন। উমং চিংকে তিনি সরকারের যক্ষ্মা কর্মসূচি বাস্তবায়নকারী ব্র্যাকের অফিসে যেতে বলেন।
এরপর সেখানে থাকা স্বাস্থ্যসেবিকা তাকে দুটি কফপট দিয়ে একটি কফপটে সকালের কফ এবং অফিসে এসে অন্য আরেকটি কফপটে স্পটকফ দেওয়ার পরামর্শ দেন।
কফ নিয়ে যথারীতি তিনি ব্র্যাক অফিসে হাজির হন। ওখানে গিয়ে তার মতো আরো কয়েকজনের সঙ্গে দেখা হয়। তারাও তার মতোই কাশি সমস্যা থাকায় কফ নিয়ে এসেছেন।
দুই ধরনের কফ নেওয়ার পর স্বাস্থ্যকর্মী তাকে বলেন, কফগুলো পরীক্ষা করে আপনাদের রেজাল্ট জানিয়ে দেওয়া হবে।
এ সময় তার মোবাইল ফোন নম্বরও রেখে দেওয়া হয়। ওইদিনই বিকেলেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তার পরীক্ষার ফলাফল জানতে পারেন। তার কফে যক্ষ্মার জীবাণু পাওয়া গেছে।
এর পরদিন সকালে তাকে আবার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসতে বলা হয়। সেখান থেকে তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী, শুরু হয় তার চিকিৎসা। কয়েকমাস ধরে স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বাস্থ্যসেবিকাদের নিয়মিত ওষুধ সেবনে সুস্থ হয়ে ওঠেন চিং মারমা। বর্তমানে তিনি পুরোপুরি সুস্থ।
তাসলিমা উমং চিং মারমাই শুধু নন; পার্বত্য জেলা বান্দরবানে রাশেদ হোসেন, মোহাম্মদ কালু, মিজানুর রহমানের মতো অনেক যক্ষ্মা রোগীই যক্ষ্মার চিকিৎসা পেয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন। নতুন জীবনে নতুন উদ্যমে সবাই নেমে পড়েছেন স্বাভাবিক কাজকর্মে।
বান্দরবান জেলায় সরকারি স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে অংশীদার হিসেবে ব্র্যাক ‘জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
জাতীয় যক্ষ্মা কর্মসূচিতে ব্র্য্যাকের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. শায়লা ইসলাম বলেন, যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত করণ এবং তাদের সুস্থতার কাজে তাদের সফলতা ৯৪ শতাংশ। তারা যেভাবে কাজ করছেন তাতে যক্ষ্মা রোগের সব ধরনের নির্দেশকেই তারা সন্তোষজনক মানে রয়েছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ০২২৪ ঘণ্টা, মে ১২, ২০১৫
আইএইচ/এবি