ঢাকা: বেশ করে ঘুমোলেন। জেগে অনুভব করলেন, ‘অকারণে’ উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিয়েছে, মাথা ধরে আছে কিংবা মেজাজ খারাপ।
এমনি অস্বাভাবিকভাবে যিনি ঘুমান তাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় স্লিপ অ্যাপনিয়া বা নাকডাকা ‘রোগে আক্রান্ত’ বলে চিহ্নিত করা হয়। স্বজন থেকে সহকর্মী সবাই এই ‘রোগে আক্রান্ত’ ব্যক্তির ভয়ে থাকেন। কিন্তু অনেক সময় খোদ ‘আক্রান্ত’ ব্যক্তিই স্বীকার করতে চান না যে, তিনি নিজেও ভুগছেন- অন্যকেও ভোগাচ্ছেন।
এই রোগে ভোগাটা আত্মমর্যাদাবোধ হানির কোনো বিষয় না হলেও অনেকে মূলত এ কারণেই নাক ডাকার কথা স্বীকার করতে চান না। এমনকি চিকিৎসকের শরণাপন্নও হোন না। কিন্তু এ কারণে যে তিনি কতোটা ভয়াবহ বিপদে পড়ছেন তা অনুভবই করছেন না।
আক্রান্ত ব্যক্তি নাক ডাকার কারণে কোন পর্যায়ে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন- সে নিয়ে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে প্রভাবশালী একটি মার্কিন সাময়িকী।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, স্লিপ অ্যাপনিয়া আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে, কিন্তু এটা অনিরাময়যোগ্যই থেকে যাচ্ছে। আর সেটা আক্রান্ত ব্যক্তির উদাসীনতার কারণেই। কিন্তু এই উদাসীনতা অন্য সমস্যার পাশাপাশি আক্রান্ত ব্যক্তিকে হৃদযন্ত্রের জটিলতায়ও ভোগাতে পারে।
যে সমস্যায় নাক ডাকা হয়
বেশ কিছু অসুখ বা কারণে নাক ডাকার অভ্যাস হয়ে যায়। এরমধ্যে নাকের অসুখ যেমন- পার্টিশনের হাড় বাঁকা থাকলে, নাকে পলিপ, টিউমার, অ্যালার্জি থাকলে, নাক বন্ধ থাকলে; গলার অসুখ যেমন- বড় টনসিল, জিহ্বার তালুতে প্যারালিসিস, এবং অতিরিক্ত মেদ বেড়ে গেলে, মদ্যপান ও ধূমপান, পানমশলা, খইনি খেলে, গুড়াকুর নেশা, ড্রাগে আসক্তি ইত্যাদি এ বদঅভ্যাসের জন্য দায়ী।
আক্রান্ত ব্যক্তি এক ঘুমে শতোবারও নাক ডাকতে পারেন, আবার এক-দুই মিনিট বা তার বেশিও নাক ডাকতে পারেন। নাক ডাকার কারণে যেসব মাংসপেশী শ্বাস নেওয়ার কাজ করে তারা সংকেত পাওয়া থেকে বঞ্চিত থাকে। প্রতিবারের নাক ডাকায় মস্তিষ্ক অল্প সময়ের মধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তিকে জাগিয়ে দেয়, যেন তিনি শ্বাস টানতে পারেন। আর এভাবে তার ঘুম দারুণভাবে বিঘ্নিত হয়।
নাক ডাকার ভয়াবহতা
মাথা ব্যথা
নাক ডাকার কারণে মস্তিষ্কে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন যেতে না পারলে সেখানে কার্বন ডাইঅক্সাইড প্রবেশ করে। এ কারণে রক্তনালীগুলো ফুলে যায়। আর তাতে ঘুম থেকে ওঠার পরপরই মাথা ব্যথা শুরু হয়।
মেজাজ খারাপ
নাক ডাকার কারণে প্রতিনিয়ত ঘুমে ব্যাঘাত ঘটতে থাকলে স্বভাবতই মেজাজ খিটখিটে হতে থাকে। হতে পারে ব্যক্তিত্ব পরিবর্তনও। ঘুমে ব্যাঘাত বিষণ্নতায়ও ভোগাতে পারে।
হৃদযন্ত্রের জটিলতা
নাক ডাকার কারণে শরীরে উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিতে পারে। আর এ কারণে শরীরের রক্তকণিকায় অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়, ফলে জটিলতা দেখা দিতে পারে হৃদযন্ত্রে।
স্মৃতি বিভ্রাট
নাক ডাকার কারণে ঘুমের অস্বাভাবিকতা ও মস্তিষ্কে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ না হওয়ার কারণে স্মৃতি বিভ্রাটসহ এ ধরনের জটিলতায় ভুগতে পারেন আক্রান্ত ব্যক্তি।
নাক ডাকার চিকিৎসা
প্রথমত আক্রান্ত রোগীর আত্মমর্যাদাবোধ হানির ভয় ঝেড়ে এ সমস্যা দূর করতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আক্রান্তের উচিত হবে অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেলা, অ্যালকোহল, ধূমপান, অতিরিক্ত চা-কফি পান ও ঘুমের ওষুধ সেবন এড়িয়ে চলা; এক পাশে কাত হয়ে ঘুমানোর অভ্যাস করা এবং নাক বন্ধ থাকার সমস্যা কমাতে ওষুধ ব্যবহার করা। সর্বোপরি এ সমস্যা কাটাতে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
বাংলাদেশ সময়: ০৬০০ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০১৫
এইচএ