ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

পশু হাসপাতালে ওষুধ নেই, কর্মচারীদের জমজমাট ব্যবসা

আবাদুজ্জামান শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪১ ঘণ্টা, জুন ৬, ২০১৬
পশু হাসপাতালে ওষুধ নেই, কর্মচারীদের জমজমাট ব্যবসা ছবি: জি এম মুজিবুর-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: রাজধানী ঢাকায় পশু-পাখি প্রেমীর সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। আর অসুস্থ হলে এসব প্রাণীদের চিকিৎসার জন্য বেসরকরি ক্লিনিক ছাড়াও রয়েছে সরকারি হাসপাতাল।



এসব হাসপাতালে বিনামূল্যে পশু-পাখির চিকিৎসা সেবা পাওয়ার কথা থাকলেও টাকা ছাড়া চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না পশু-পাখি প্রেমীরা।

শনিবার (৪ জুন) গুলিস্তান ৪৮, কাজী আলাউদ্দিন রোডে বঙ্গ মার্কেটের বিপরীত পাশে কেন্দ্রীয় ভেটেরিনারি হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, পোষা পাখি, ছাগল, বিড়ালের চিকিৎসা করাতে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছেন অনেকে।

বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে অধিকাংশই অভিযোগ করেন, সরকারি হাসপাতাল হলেও টাকা ছাড়া এখানে চিকিৎসা পাওয়া যায় না।

হাসপাতালের মূল ফটকে দাঁড়াতেই হোঁচট খেতে হয়। দরজায় ছোট সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে ‘বিনা অনুমতিতে প্রবেশ নিষেধ’।

ভেতরে ঢুকতেই যেখানে গরু-মহিষ-ঘোড়ার প্রজনন সংক্রান্ত চিকিৎসা দেওয়া হয়, সেখানে চোখে পড়ে আবর্জনার স্তূপ। হঠাৎ চোখে পড়লে ডাস্টবিন বলেও ভুল হতে পারে।

মূল ফটক থেকে হাসপাতালের ভেতরে যাওয়ার পথটিও সংস্কার করা হয়নি দীর্ঘ সময়। হাসপাতালের ভেতরের অবস্থাও শোচনীয়।

ছাগলের প্রজনন সংক্রান্ত চিকিৎসা নিতে লালবাগ থেকে এসেছেন মো. কবির হোসেন। হাসপাতালের সেবা সম্পর্কে জানতে চাইলে এক বাক্যে তিনি বলেন, সরকারি হাসপাতালের কোনো বাপ-মা নাই। কিভাবে চলে দেখারও কেউ নাই। নিয়ম হলো বিনামূল্যে চিকিৎসা পাওয়া যাবে। ১শ’ টাকা দিয়ে তারপর চিকিৎসা নিতে হলো।

বিষণ্ন মুখে এগিয়ে আসেন মীর ইয়ামিন। তিনি বসবাস করেন যাত্রাবাড়ী এলাকায়। কথার জের ধরে বলেন, পোষা প্রাণী অসুস্থ হলে মনে হয়, নিজেই অসুস্থ।

তিনি এসেছে দুইটি জার্মান সেফার্ড ও একটি ডোবারম্যান কুকুর নিয়ে। জানালেন, প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে এক কর্মচারী ১২শ’ টাকা দাবি করেছেন। এত টাকা কেন জানতে চাইলে জবাবে বলেন, চিকিৎসা দিয়েছি ১২শ’ টাকা লাগবে।

এসব প্রসঙ্গে কথা হয় ভেটেরিনারি অফিসার ডা. মাকসুদুল হাসান হাওলাদারের সঙ্গে।

তিনি বলেন, কুকুর ও বিড়ালের জন্য সরকার থেকে প্রতিশেধক সরবরাহ করা হয় না। অল্প কিছু ওষুধ বরাদ্দ রয়েছে, ফলে বেশিরভাগ ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়।

দেখা হয় অস্ত্রোপচারের সময় অবশ করার জন্য দুই ডোজ ওষুধ। কিন্তু ফার্মেসি থেকে এক বোতল ওষুধ কিনতে হবে। সেক্ষেত্রে কর্মচারীরা দুই ডোজ ওষুধ নিয়ে সামান্য টাকা নেয়। কিন্তু ১২শ’ টাকা চাওয়ার কথা না।

মোট ৩.৪ একর জমির ওপর অবস্থিত ৩ তলা হাসপাতাল ভবনে রয়েছে আউট/ইন পেসেন্ট শেড, পোস্ট মর্টেম শেড, অপারেশন থিয়েটার, ডরমেটরি ভবন। এছাড়াও কর্মকর্তাদের জন্য রয়েছে ৫ তলা ও কর্মচারিদের জন্য ৪ তলা আবাসিক ভবন।

চিকিৎসার দায়িত্বে রয়েছে একজন চিফ ভেটেরিনারি অফিসার, একজন ভেটেরিনারি অফিসার, দুইজন অতিরিক্ত ভেটেরিনারি অফিসার, সাতজন ভেটেরিনারি সার্জন, একজন এনেসথেসিওলজিস্ট, একজন রেডিওলজিস্ট, একজন ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিস্ট, কম্পাউন্ডার, ড্রেসার, এক্স-রে, অপারেটর মিলিয়ে ১৪ জন এবং প্রশাসন শাখার ১৫ জন কর্মচারী।

হাসপাতালের চিকিৎসা বিবরণী অনুযায়ী, ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে ১২ হাজার ৬৪৪টি বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর চিকিৎসা দেওয়া হয়, ৪৭ লাখ ২১ হাজার ২১৭টি হাঁস-মুরগি-পাখির চিকিৎসা এবং ৫৮৮টি অস্ত্রোপচার করা হয়। ২০১১-১২ অর্থ বছরে ১২ হাজার ৭৪৪টি বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর চিকিৎসা দেওয়া হয়, ৪৬ লাখ ৮৩ হাজার ৬৫১টি হাঁস-মুরগি-পাখির চিকিৎসা এবং ১ হাজার ৯২২টি অস্ত্রোপচার করা হয়।

২০১২-১৩ অর্থ বছরে ২৩ হাজার ৬৩টি বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর চিকিৎসা দেওয়া হয়, ৯ লাখ ৪৭ হাজার ১০৮টি হাঁস-মুরগি-পাখির চিকিৎসা এবং ১ হাজার ৩৬০টি অস্ত্রোপচার করা হয়। ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে ২৩ হাজার ৫৩৯টি বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর চিকিৎসা দেওয়া হয়, ১ লাখ ৬১ হাজার ৭৩টি হাঁস-মুরগি-পাখির চিকিৎসা এবং ৭২২টি অস্ত্রোপচার করা হয়। ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে ২৬ হাজার ৩৬৯টি বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর চিকিৎসা দেওয়া হয়, ৬ লাখ ৬৮ হাজার ১৯০টি হাঁস-মুরগি-পাখির চিকিৎসা এবং ১ হাজার ৯৩৭টি অস্ত্রোপচার করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৩ ঘণ্টা, জুন ০৬, ২০১৬
এজেডএস/এটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।