ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

ভেজাল ওষুধ উৎপাদনকারী ২০ কোম্পানির লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫২ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০১৬
ভেজাল ওষুধ উৎপাদনকারী ২০ কোম্পানির লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ

ঢাকা: বহুল আলোচিত সেই ২০ ওষুধ  কোম্পানির লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। প্রয়োজনে আইন সংশোধন করা লাগলেও দ্রুততম সময়ের মধ্যে তা করে ওইসব ওষুধ কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দিয়েছে কমিটি।

 

 
রোববরা (১২ জুন) দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয়।
 
কমিটির সভাপতি শেখ ফজলুল করিম সেলিমের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক, ডা. আ ফ ম রুহুল হক, ডা. মো. ইউনুস আলী সরকার ও সেলিনা বেগম এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
 
এর আগে বিশেষজ্ঞ কমিটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে ২০টি কোম্পানির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটির কাছে। বৈঠকে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের কার্যক্রম নিয়ে অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। আলোচনা শেষে ভেজাল ওষুধ প্রস্তুতের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনে আইন ও বিধিমালা সংশোধনের সুপারিশ করা হয়েছে।
 
কমিটি সূত্র জানায়, বৈঠকে ভেজাল ওষুধ উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সুপারিশ কার্যকর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু আইনি কিছু জটিলতা থাকায় সময় লাগছে। কমিটির পক্ষ থেকে প্রয়োজনে আইন সংশোধন করে দ্রুত সুপারিশ করার তাগিদ দেওয়া হয়।
 
বৈঠকে কমিটির সুপারিশ সত্ত্বেও অভিযুক্ত কোম্পানির পক্ষে ওকালতি করে অধিদফতরের বিবৃতি পাঠানোর কারণ জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু অধিদফতরের কর্মকর্তা এ অভিযোগ করেন অস্বীকার করেন। তখন সভাপতি অধিদফতরের বিবৃতি ছাপানো পত্রিকার কাটিং বৈঠকে উত্থাপন করেন।

কমিটির সদস্যরা দাবি করেন, অধিদফতরের অর্থলোভী ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের কারণেই ভেজাল ও নিন্মমানের ওষুধ প্রস্তুত প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। তারা প্রস্তুতকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি এসব দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানান।
 
বৈঠকে ওষুধ প্রস্তুতের ক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলো কাঁচামাল থেকে শুরু করে বাজারজাতকরণ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণমূলক কৌশল হিসেবে যে প্রযুক্তি ব্যবহার করছে বাংলাদেশেও সেগুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে অনুসরণের সুপারিশ করা হয়। একইসঙ্গে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ করে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরকে শক্তিশালী ও স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের সৃজনকৃত পদে জরুরি ভিত্তিতে জনবল নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে।
 
গত ২০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠেকে বিশেষজ্ঞ তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে ভেজাল ওষুধ উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত ২০টি ওষুধ কোম্পানির ওষুধ উৎপাদনের লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ করা হয়। আর ১৪টি কোম্পানির সব ধরনের এন্টিবায়োটিক (নন-পেনিসিলিন, পেনিসিলিন ও সেফালোস্পোরিন গ্রুপ) উৎপাদনের অনুমতি বাতিল এবং ২২টি কোম্পানির পেনিসিলিন ও সেফালোস্পোরিন গ্রুপের এন্টিবায়েটিক উৎপাদনের অনুমতি স্থগিত করতে বলা হয়। এছাড়া দু’টি কোম্পানির মানবদেহে বাহ্যিকভাবে ব্যবহার্য ওষুধ, একটিকে প্রাণিসম্পদে ব্যবহার্য ওষুধ এবং অপর একটিকে সেফালোস্পোরিন বাদে অন্যান্য গ্রুপের ওষুধ উৎপাদনের অনুমতি অব্যাহত রাখার সুপারিশ করা হয়।

গত বছর সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুকের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি দীর্ঘ তদন্ত শেষে ওই প্রতিবেদন প্রণয়ন করে সংসদীয় কমিটির কাছে জমা দেয়।
 
ভেজাল ওষুধ উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো হলো- এক্সিম ফার্মাসিউটিক্যাল, এভার্ট ফার্মা, বিকল্প ফার্মাসিউটিক্যাল, ডলফিন ফার্মাসিউটিক্যাল, ড্রাগল্যান্ড, গ্লোব ল্যাবরেটরিজ, জলপা ল্যাবরেটরিজ, কাফিনা ফার্মাসিউটিক্যাল, মেডিকো ফার্মাসিউটিক্যাল, ন্যাশনাল ড্রাগ, নর্থ বেঙ্গল ফার্মাসিউটিক্যাল, রিমো কেমিক্যাল, রিদ ফার্মাসিউটিক্যাল, স্কাইল্যাব ফার্মাসিউটিক্যাল, স্পার্ক ফার্মাসিউটিক্যাল, স্টার ফার্মাসিউটিক্যাল, সুনিপুণ ফার্মাসিউটিক্যাল, টুডে ফার্মাসিউটিক্যাল, ট্রপিক্যাল ফার্মাসিউটিক্যাল এবং ইউনিভার্সেল ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড।  
 
অ্যান্টিবায়েটিক ওষুধ উৎপাদনের অনুমতি বাতিলের সুপারিশ করা ১৪টি কোম্পানি হলো- আদ-দ্বীন ফার্মাসিউটিক্যাল, আলকাদ ল্যাবরেটরিজ, বেলসেন ফার্মাসিউটিক্যাল, বেঙ্গল ড্রাগস, ব্রিস্টল ফার্মা, ক্রিস্ট্যাল ফার্মাসিউটিক্যাল, ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যাল, মিল্লাত ফার্মাসিউটিক্যাল, এমএসটি ফার্মা, অরবিট ফার্মাসিউটিক্যাল, ফার্মিক ল্যাবরেটরিজ, পনিক্স কেমিক্যাল, রাসা ফার্মাসিউটিক্যাল এবং সেভ ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড।

এদিকে গত ০৭ জুন মানসম্মত ওষুধ উৎপাদনে ব্যর্থ ওই ২০টি ওষুধ কোম্পানির ওষুধ এবং ১৪টি ওষুধ কোম্পানির অ্যান্টিবায়েটিক উৎপাদন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
 
সাতদিনের মধ্যে উৎপাদন বন্ধ করে দুই সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে স্বাস্থ্যসচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের পরিচালককে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

কোম্পানিগুলোর লাইসেন্স বাতিলের নির্দেশনা চেয়ে করা রিট আবেদনের শুনানি শেষে এ আদেশ দেন বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম সাহিদুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪২ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০১৬
এসএম/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।