এমন পরিস্থিতিতে বিড়ি শ্রমিক ও কারখানা মালিকদের অভিযোগ, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর পকেট ভারী করতেই এটা করা হচ্ছে। তাই বন্ধ করতে চাইলে সব তামাক পণ্যই বন্ধ হোক।
এসব দাবিতে এরইমধ্যে বিভিন্ন জেলায় আন্দোলন শুরু হয়েছে।
ইতোমধ্যে বিভিন্ন আলোচনায় অর্থমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন দুই বছরের মধ্যে দেশ থেকে বিড়ি’র অস্তিত্ব তুলে দেয়া হবে। তার এই ঘোষণায় ফুঁসে উঠেছে শ্রমিকরা। রংপুর, যশোর, বগুড়া, লালমনিরহাট, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, বাগেরহাটসহ বিভিন্ন জেলায় চলছে প্রতিবাদ ও অনশন কর্মসূচি।
বিড়ি মালিক সমিতির দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০১-০২ অর্থ বছরে সারাদেশে ২১৮টি ফ্যাক্টরি ছিল। কর এর বোঝা সইতে না পেরে কমতে কমতে বর্তমানে ৯১টি ফ্যাক্টরি বিড়ি উৎপাদন করছে। শুরুতে শ্রমিক ছিল ৪৮ লাখ ৬২ হাজার ২৬৮ জন। বর্তমানে এই শিল্পে ২১ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ জন শ্রমিক কর্মরত। এরমধ্যে ১৮ লাখই নারী শ্রমিক। গত ১২ অর্থ বছরে ২৭ লাখ ৩৬ হাজার ৯৪৪ জন শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে।
২০০৪-০৫ অর্থবছরের হিসাবে দেখা যায়, ২০০১-০২ অর্থ বছরে বিড়ির উপর শুল্ক ছিল ৩০ দশমিক ৯০ শতাংশ। সেটি ২০০৪-০৫ অর্থ বছরে বাড়িয়ে করা হয় ৪১ দশমিক ২০ শতাংশ। সর্বশেষ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিড়ির ওপর মোট শুল্ক হার দাঁড়িয়েছে ৬৫ শতাংশ। বিড়ির ওপর শুল্ক হার বেড়েছে ৬২.৮৮ শতাংশ। অপরদিকে সিগারেটের শুল্ক হার বেড়েছে ৩১.৮৩ শতাংশ। অর্থাৎ বিড়িকে ধ্বংস করে সিগারেটে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
বিড়ির উপর অধিক কর আরোপ করায় ধূমপায়ীরা কম দামী সিগারেটের দিকে ঝুঁকছে। ফলে ধূমপায়ীর সংখ্যা তো কমছেই না, বরং বিদেশি কোম্পানির পকেট ভারী হচ্ছে। এদেশের অর্থ বিদেশি কোম্পানিগুলো হাতিয়ে নিচ্ছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ বিড়ি মালিক সমিতির সভাপতি ও কারিগর বিড়ির মালিক বিজয় কৃষ্ণ দে বাংলানিউজকে বলেন, অর্থমন্ত্রী যে ঘোষণা দিয়েছেন সেটা নিয়মের বাইরে। ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হলে সিগারেট কী ক্ষতিকর নয়? তাহলে বন্ধ করতে চাইলে সব তামাকই বন্ধ করা হোক। আসলে উনি ২০ লাখ শ্রমিকের পেটে লাথি মারতে চাচ্ছেন। ক্ষতি হলেও আমরা চাইলে অন্য ব্যবসায় যেতে পারবো, কিন্তু শ্রমিকরা কী করবে? এজন্য সারাদেশে শ্রমিকরা প্রতিবাদ শুরু করেছে।
বিড়ি শ্রমিকের বেকার হওয়ার চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, আগে আমার ফ্যাক্টরিতে সপ্তাহে ৭ দিনই কাজ থাকতো। এখন দুই দিন কাজ করলেই চাহিদা মাফিক উৎপাদন হয়ে যায়। বর্তমানে দিনে ২৫ লাখ শলাকা বিড়ি উৎপাদন হচ্ছে।
রাজা বিড়ির মালিক মো. সাখাওয়াত হোসেন জন্টু বাংলানিউজকে বলেন, বিড়ি শ্রমিকদের ক্ষোভের বহি:প্রকাশ এনবিআর চেয়ারম্যান দেখেছেন। উনি সম্প্রতি রংপুরে এক অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। তখন তাকে রংপুর সার্কিট হাউজে বিশ্রামে থাকার কথা ছিল। কিন্তু শ্রমিকদের আন্দোলনের ফলে সেখানে থাকতে পারেননি।
তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী আমাদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচারণ করছেন। সিগারেটের সেভাবে কর আরোপ না করে বিড়ি ধ্বংস করতে চাচ্ছেন। জানি না আমরা বিড়ি মালিকরা কোন রোষানলে পরলাম। তিনি (অর্থমন্ত্রী) বিড়ি ধ্বংস করে কম দামি সিগারেট উৎসাহিত করছেন।
বাংলাদেশ জনমিত স্বাস্থ্য জরিপের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বর্তমানে বাংলাদেশে মোট পুরুষের মধ্যে তামাক সেবনে আসক্ত মানুষের সংখ্যা ৮০ শতাংশ। এরমধ্যে সিগারেটে আসক্ত ৬০ শতাংশ এবং বিড়িতে আসক্ত ২০ শতাংশ। বিভিন্ন জরিপ রিপোর্ট থেকে দেখা যায়, বাংলাদেশে তরুণ ধুমপায়ীদের মধ্যে ৯৮ শতাংশ সিগারেটে আসক্ত, আর বিড়িতে মাত্র ২ শতাংশ। অর্থাৎ মাত্র দুই শতাংশ বিড়ি ধূমপায়ীকে বিলুপ্ত করে কিভাবে ধূমপান কমাবেন তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তাই সব তামাক পণ্যের ওপরই সমান হারে কর বাড়ানো হোক।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৫ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০১৭
এসএম/জেডএম