শরীরের বেহাল অবস্থার কারণ জানালো- চিকুনগুনিয়া। ২০ দিন ধরে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ব্যথা আর যন্ত্রণায় ভুগছে রহমত।
রাজধানীরজুড়ে চলছে চিকুনগুনিয়া রোগের প্রকোপ। নগরীর ঘরে ঘরে এ ভাইরাস জ্বরের যন্ত্রণায় ভুগছেন মানুষ। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি পরিবারে এক বা একাধিক সদস্য চিকুনগুনিয়া জ্বরে আক্রান্ত। যারা এখনও এ জ্বরে আক্রান্ত হননি তারাও রয়েছেন আতঙ্কে।
প্রথম দিকে চিকুনগুনিয়া রোগপ্রবণ বলে রাজধানীর কয়েকটি এলাকাকে চিহ্নিত করা হয়। তবে এ রোগের প্রার্দুভাব দেখে পুরো ঢাকাতেই চিকুনগুনিয়া রোগের জীবাণু ছড়িয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন রাজধানীবাসী।
সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে প্রতিদিন শত শত রোগী চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাসেবা নিতে আসছেন। এ জ্বর থেকে পরিত্রাণ পেতে আসা রোগীদের সামলাতে হাসপাতালগুলো হিমশিম খাচ্ছে।
জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ব্যথা-যন্ত্রণায় কাতর নগরবাসী চিকুনগুনিয়ার জন্য সম্পূর্ণ দায়ী করছেন সিটি করপোরেশন ও সরকারকে। বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা জানান, তিন মাস পার হতে চললো রাজধানীতে চিকুনগুনিয়ার ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। এরমধ্যে সিটি করপোরেশনকে মশার ওষুধ নিয়ে কোনো এলাকায় আসতে দেখা গেলো না। বর্ষার সিজন হওয়ায় তাদের সৃষ্টি করা গর্ত এখন নর্দমায় পরিণত হয়েছে। সেই সব নর্দমায় ডিম পাড়ছে চিকুনগুনিয়ার জীবাণুবাহী অসংখ্য মশা।
মিরপুর-১০ এর সেনপাড়া পর্বতার স্থানীয় বাসিন্দা আফাজ উদ্দিন। তার পরিবারের ছেলের বউ, স্ত্রী ও আট বছরের নাতি চিকুনগুনিয়া জ্বরে আক্রান্ত। পরিবারের এসব সদস্যদের সেবা করার মতো অবশিষ্ট লোক আর সুস্থ নেই বলে জানান আফাজ উদ্দিন।
তিনি বলেন, প্রথমে ছেলের বউ আর স্ত্রী চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত হলো। ঈদে বাসায় ভালো খাবার দাবার রান্না হয়নি। ঈদের দুই দিন পর নাতিটারে ধরলো। ছোট মানুষ ব্যথা সহ্য করতে পারতেছে না, কান্নাকাটি করেই যাচ্ছে। দুইটা মেয়র থাকতে মশার কামড়ে এমন কষ্ট সহ্য করতে হবে মেনে নেওয়া যায় না।
আজিমপুর ছাপড়া মসজিদ এলাকার জয়ন্ত বিশ্বাস, তার বাবা ও স্ত্রী তিনজনেই চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত। বাকি রয়েছে বুড়ো মা ও দুই বছরের ছেলে।
জয়ন্ত বিশ্বাস জানান, অল্প একটু কাজ করে মিডিয়ায় শো-আপ করা দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রের কাজ! নগরবাসী সেবা পেলো কি পেলো না তা দেখার সময় নেই তাদের। এ জ্বরের যে কি কষ্ট, কি যন্ত্রণা; আমি সহ্য করতে পারছি না। ছেলেটার হলে কী করবো ভাবছি!
মশাবাহিত রোগের প্রকোপ রোধে মে থেকে সেপ্টেম্বর পযর্ন্ত নগরীর বিভিন্ন স্থান পরিষ্কার রাখা, সচেতনতা সৃষ্টি করতে র্যালি, টিভি স্ক্রল, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ও পোস্টারিং করার কথা ছিলো ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের। মশক নিধন কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে দাবি দুই সিটি করপোরেশনের। তবে নগরবাসীর অভিযোগ, মশা নিধনে সিটি করপোরেশনের কার্যকর কোনো কর্মসূচি দেখেননি।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বি. জে. ডা. এস এম এম সালেহ ভুঁইয়া অভিযোগ অস্বীকার করে বাংলানিউজকে বলেন, যে কোনো সময়ের তুলনায় মশা নিধনে এবার বেশি কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। চিকুনগুনিয়ার ভাইরাস ছড়ানোর পর থেকে আমরা বেশি বেশি লার্ভিসাইড ওষুধ ছিটিয়ে দিচ্ছি। তবে আমাদের প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে। যেমন, খালের ধারে বস্তি ও টং ঘর, খাল উদ্ধার করে পরিষ্কার করা হলো, কয়েকদিন পর দেখা যায় খাল আগের অবস্থায় ফিরে এসেছে।
চিকনগুনিয়াসহ যে কোনো মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধ করতে জনগণের সহযোগিতা দরকার বলে জানান ডা. এস এম এম সালেহ ভুঁইয়া।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৫ ঘণ্টা, জুলাই ০২, ২০১৭
এমসি/এমজেএফ