ভেজালমুক্ত দুধ বিক্রিকে তাই কেবল সততা নয়, বরং ‘বিরল নজির’ বলাটাও বাড়াবাড়ির চোখে দেখা হয় না।
এমন ‘বিরল’ বিক্রেতারই দেখা মিললো রাজধানীর মিরপুর ১১ নম্বরে।
মোগরেবের এই নির্ভেজাল দুধ পেতে তাই নিয়মিত ভিড় জমে তার গোয়ালের কাছে। মিরপুর-১১ নম্বরের সি ব্লকের ৫নং অ্যাভিনিউয়ের ১৪ নম্বর বাড়ি মোগরেবের। বাবা মৃত ফজলুল করিম। তিল তিল করে এই ব্যবসা গড়ে তুলেছেন তিনি। প্রাথমিকভাবে দু’টি গাভী দিয়ে এই দুধ বিক্রির ব্যবসা শুরু করলেও এখন গাভীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫-এ।
মোগরোবের সঙ্গে আলাপে জানা গেল, ২০০৩ সালে পৈতৃক সম্পদ হিসেবে প্রথম দু’টি গাভী পান তিনি। তার বাবা মৃত ফজলুল করিম জনসেবক হিসেবে খ্যাতি পেয়েছিলেন। কোরবানির জন্য তিনি গরু কিনতেন এক বছর আগে। কিনতেন গাভীও। ওই গাভীর দুধ তিনি লাভ ছাড়াই বিক্রি করতেন। কখনো কখনো বিনামূল্যেও সেই নির্ভেজাল দুধ খাওয়াতেন এলাকাবাসীদের।
বাবার সেই শখের ব্যবসাই চালিয়ে যাচ্ছেন মোগরোব। দু’টি গাভী থেকে তার দুধ বিক্রির ব্যবসা এখন ৩৫টি বিদেশি বিভিন্ন জাতের গরুতে সম্প্রসারিত হয়েছে। দুধ পাচ্ছেন ২০টি গাভী থেকে। প্রতিদিন দু’বেলায় ২১০ লিটার দুধ বিক্রি করেন মোগরোব। সকাল ৭টা থেকে ৯টায় পর্যন্ত ১২০ লিটার আর বিকেল ৪টা থেকে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত বিক্রি করেন ৯০ লিটার দুধ। নির্ভেজাল প্রতি লিটার দুধের দাম ৯০ টাকা।
তার এখানে দুধের দাম সাধারণ বাজারের চেয়ে বেশি হওয়ার বিষয়ে মোগরোবের বক্তব্য, বাজারে গাভীর খাবার ও ওষুধের দাম অনেক বেড়ে গেছে। তার এখানে ভেজালেরও সুযোগই নেই। তাই দাম একটু বেশি।
মোগরোবের কাছ থেকে নিয়মিত দুধ কেনেন চাকরিজীবী মো. দীপু। তিনি এই এলাকায় ৫ বছর ধরে থাকেন। দীপুর কথা, ‘আমার মনে হয় আমি যেন আমার নিজ গোয়াল থেকে গাভীর দুধ খাচ্ছি। আমি আসার পর দুধ দোহানো হয় আমার চোখের সামনেই। বাজারের দুধে আস্থা পাই না। তাই এখানে দাম একটু বেশি হলেও কিনতে কোনো আপত্তি দেখি না। ’
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন ফাতেমা বেগম। তার বক্তব্য, ‘আমি আগে সাভারের ডেইরি ফার্মে গিয়ে দুধ আনতাম। এখানকার নির্ভেজাল দুধের সন্ধান পাওয়ার পর থেকে দেখছি ওখানকার দুধেও কিছুটা ভেজাল ছিল। এখন নিশ্চিন্ত মনে এই দুধ নিচ্ছি নিয়মিত। ’
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৪ ঘণ্টা, ০৬ জুলাই, ২০১৭
জিএমএম/এইচএ/