সঙ্গে রয়েছেন তার আরো দু’জন বন্ধু। হেঁটে খানিকটা সামনে গিয়ে তিনজনে দাঁড়ালেন একটি গাছের নিচে।
খানিকক্ষণ পরে সিগারেট ফেরিওয়ালার কাছ থেকে কিনলেন সিগারেট। বেশ আয়েশি ভঙ্গিতে ধরালেন। বাঙালিয়ানার রূপটা মুহূর্তেই ফিকে হয়ে গেলো সিগারেটের জ্বলন্ত আগুনে।
এটি ছবির হাট বা পাশের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের খুব পরিচিত দৃশ্য বলে জানান এখানে নিয়মিত আসা লোকজন।
প্রতিদিন অসংখ্য নারীকে এসব এলাকায় ধূমপান করতে দেখা যায়। তাদের মধ্যে আছেন একদম নিম্ন শ্রেণী থেকে শুরু করে সমাজের উচ্চ পর্যায়ের নারীরাও। এক সময় এ নারীরা তাদের ছেলে বন্ধুদের দিয়ে সিগারেট কেনালেও এখন নিজেরাই সে কাজটিও করেন সহজেই।
আগের তুলনায় ছবির হাট ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নারী ধূমপায়ীর সংখ্যা বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। ছবির হাটে ছবি আঁকায় ব্যস্ত এক তরুণীর হাতেও দেখা যায় সিগারেট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তরুণী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রথম বছর হলে সিট না পাওয়ায় আজিমপুর কলোনি এলাকায় একই অনুষদের সিনিয়র দুই মেয়ের সঙ্গে বাসা ভাড়া নেন। তাদেরই একজন ছিলেন ধূমপায়ী। রুমমেটের বেশ স্টাইল করে সিগারেট খাওয়া দেখে শখ হয় তারও। ফ্যাশনেবল মেয়েরাই সিগারেট খান। ফ্যাশনটা ঝালাই করতেই প্রথমে তার সিগারেট খাওয়া। পরে ধীরে ধীরে সিগারেটে আসক্ত হয়ে পড়েন তিনি।
জানা গেছে, রাজধানীর নারী তরুণ ধূমপায়ীদের বেশিরভাগই প্রথমে স্ট্যাটাস রক্ষার্থে ফ্যাশনের অংশ হিসেবে সিগারেট খাওয়া শুরু করেন। যা পরে আসক্তিতে পরিণত হয়। ধূমপান থেকে নানা ধরনের মরণনেশায়ও আসক্ত হয়ে পড়ছেন অনেক নারী।
অন্যদিকে ধূমপানের সঙ্গে সঙ্গে দরিদ্র অনেক নারী সিগারেট বিক্রিতেও জড়িয়ে পড়ছেন। তাদেরই একজন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ফেরি করে সিগারেট বিক্রেতা আছিয়া জানান, সিগারেটে মুনাফা বেশি হয়। তাই তিনি তা বিক্রি করেন।
আছিয়া বলেন, ‘সারাদিন পঞ্চাশ কাপ চা বিক্রি কইরা যে লাভ হয় ২০টা সিগারেট বিক্রি করলে তার থেকে বেশি লাভ হয়। আর এইখানে যে মাইয়ারা সিগারেট খাইতে আসে, তারা আমার কাছ থেইকাই বেশি কেনে। মাইয়ারাতো মাইয়াগো কাছ থেইকা কিনতে বেশি পছন্দ করবো’।
বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে যে, ধূমপায়ী নারীর বন্ধ্যা হওয়ার আশঙ্কা ৬০ শতাংশেরও বেশি। তামাকের সঙ্গে গর্ভপাতের গভীর সম্পর্ক রয়েছে এবং ভ্রূণের স্বাস্থ্য সমস্যারও সৃষ্টি করে ধূমপান। এটি নিউরাল টিউব ডিফেক্টের ঝুঁকি কিছুটা বাড়ায়। ফুসফুসে ক্যান্সারেরও অন্যতম কারণ এই ধূমপান।
সিগারেট খেকেই এক সময় নারী ধূমপায়ীরা গাঁজা, মদ, হেরোইনের মতো নেশায় আসক্ত হন বলে জানান অন্য এক তরুণী। ছবির হাটে সিগারেটে টান দিতে দিতে তিনি বলেন, ‘এটি সিগারেট নয়। সিগারেটের শলাকায় গাঁজা ভরা আছে। এই ছবির হাটের বিভিন্ন ভ্রাম্যমাণ চায়ের দোকানে ৩০ টাকা থেকে ৫০ টাকা দিলেই পাওয়া যায়। এক সময় শুধু সিগারেট খেতাম, তাও বন্ধুরা খেতো বলে। কিছুদিন পর তাদের সঙ্গে গাঁজা খাওয়া শুরু করলাম। এখন নিয়মিত গাঁজা খাই, নেশা হয়ে গেছে। চাইলেও আর ছাড়তে পারছি না’।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৭
ইউএম/এএসআর