কিন্তু অতিরিক্ত ঔষধের কারণে দেহে সৃষ্টি হতে পারে মাদকতা বা আসক্তি। এমনকি সে আসক্তি হতে পারে হেরোইনের আসক্তির চেয়েও বেশি।
সম্প্রতি ইউকে অ্যাডিকশন ট্রিটমেন্ট সেন্টার(ইউকেএটি) প্রকাশিত এক রিপোর্টে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্যই উঠে এসেছে। রিপোর্টে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের মাদকাসক্তি পুনর্বাসনকেন্দ্রের প্রেসক্রিপশন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বর্তমানে মাদকাসক্তদের ২২ শতাংশই আসছে অতিরিক্ত ঔষধ গ্রহণ করার কারণে। বেশিরভাগ মানুষ ঔষধ গ্রহণের মাত্রা সম্পর্কে জানে না।
গবেষণাটিতে গত দুই বছরে যুক্তরাজ্যের মাদকাসক্তি পুনর্বাসনকেন্দ্রের প্রেসক্রিপশন পর্যালোচনা করে এ তথ্য উদঘাটন করা হয়। প্রেসক্রিপশন পর্যালোচনায় অতিরিক্ত ব্যথানাশক ঔষধের ব্যবহারের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। যেমন, কোডেইন এবং বেনজো ডায়াজিপাইন।
এই ঔষধগুলো গ্রহণের ফলে সৃষ্ট মাদকতার পরিমাণের মাত্রা অ্যালকোহল বা মদে আসক্ত ব্যক্তিদের মাদকতার চেয়ে বেশি। কেননা ঔষধগুলোর উপর অতি-নির্ভরতা সৃষ্টির হারও বেশি।
ইউকেএটি-এর থেরাপিস্টদের মতে, ঔষধ গ্রহণের মাত্রা সম্পর্কে সরকারের উচিত অতি শিগগির জনগণকে সঠিক ধারণা দেওয়া। তারা বারংবার বলছেন, “কেউই সতর্কীকরণ মাত্রা জানে না”, তাই অবস্থার ব্যাপক অবনতি খুব দ্রুতই ঘটতে পারে।
গত ৬ মাসের এক গবেষণায় ইউকেএটি ৪৮ জন কোডেইন এবং বেনজোডায়াজিপাইন-আসক্ত রোগীর পরীক্ষালব্ধ ফলাফলে ২৬ জন গাঁজা ও ১৭ জন জুয়া বা গেইমে আসক্তের সাথে তুলনা করেছে।
সংস্থাটি প্রতিমাসে ১৪০ জন মাদকাসক্তকে চিকিৎসা দিয়ে থাকে। যাদের মধ্যে ৬৪ ভাগ অ্যালকোহল এবং কোকেইন এবং ৬ ভাগ হচ্ছে অতিরিক্ত ঔষধ বা প্রেসক্রিপশন ঔষধ গ্রহণে আসক্ত রোগী।
এছাড়া যখন চিকিৎসা শুরু করা হয় তখন দেখা যায়, প্রেসক্রিপশন ঔষধ গ্রহণে আসক্তকে নিরাময়ে সময় লাগে ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ। অথচ হেরোইন আসক্তদের নিরাময়ে এর অর্ধেক সময় লাগে।
ইউকেএটি-র ভাষ্যমতে, ফার্মাসিউটিক্যাল ঔষধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া অনেক বেশি। এধরণের ঔষধের দাম অন্যান্য যে কোনো ওষুধের চেয়ে কম আর সহজলভ্য। যেমন, ১টি ডায়াজিপাম ঔষধের দাম ১ পাউন্ড। কিন্তু ০.১ গ্রাম হেরোইনের দাম ১০ পাউন্ড।
“যতদিন পর্যন্ত মানুষের অতিরিক্ত ঔষধ গ্রহণের মানসিকতার বদল না ঘটবে, ততদিন পর্যন্ত আসক্তদের সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। ”—এমনটিই বলেছেন ইউকে অ্যাডিকশন ট্রিটমেন্ট সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা ‘এইট্যান অ্যালেকজান্ডার’।
তিনি বলেন মানুষ বিশ্বাস করে, প্রেসক্রিপশনের ঔষধ বা ঔষধের দোকান থেকে কেনা ঔষধ কোনোভাবেই মাদকতা বা আসক্তির জন্ম দ্যায় না।
তিনি আরও বলেন, “আমরা এমনও রোগীকে আমাদের এখানে ভর্তি করি যারা জানেই না যে, তারা কোডেইন অথবা বেনজো গ্রুপের ড্রাগের কারণে আসক্ত। কেননা তারা ড্রাগগুলো ডাক্তারের কাছ থেকেই বা প্রেসক্রিপশনের মাধ্যমে পেয়ে থাকে। ”
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, প্রেসক্রিপশনের পরামর্শের চেয়ে ঔষধের গ্রহণের মাত্রা ও পরিমাণ বেশি হয় তখনই একে অপব্যবহার হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং মাদকতা বা আসক্তির শুরু হয়। আর এক্ষেত্রে মাদকতা ছাড়াও চরম ঝুঁকি সৃষ্টি হয়, সৃষ্টি হয় কিডনি নষ্ট হওয়ার মতো খারাপ বিষয়ের।
বাংলাদেশ সময়: ০২৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০১৭
এমএ/জেএম