ঢাকা শহরে অনেকটা মহামারি রূপ ধারণ করা চিকুনগুনিয়া জ্বরে আক্রান্ত রোগীরা ভুগছেন বিভিন্ন সমস্যায়। জ্বর দু’তিন দিনে ভালো হলেও গিঁটে ব্যথা, গায়ে চুলকানি, র্যাশ ওঠাসহ দেখা দিচ্ছে নানান উপসর্গ।
এ অবস্থায় ডিএসসিসি মেয়রের সময়োপযোগী উদ্যোগে হাসি ফুটেছে রাজধানীর একাংশের মানুষের মুখে। শুধু একটি ফোন কলই এখন যথেষ্ট। ০৯৬১১০০০৯৯৯ নম্বরে ফোন করলেই মিলবে ফিজিও থেরাপিস্টের সেবা। রোগী চাইলে ফোনেই পরামর্শ নিতে পারেন, আবার যদি চান থেরাপিস্টই চলে যাবেন তার বাসায়। আর এ সেবার জন্য রোগীকে একটি টাকাও গুনতে হবে না।
মেয়র সাঈদ খোকন বাংলানিউজকে বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের কাছে অনুরোধ আসবে আমরা এ স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাবো। যখন দেখবো অনুরোধের হার উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে তখন চিন্তা করবো বন্ধের বিষয়ে।
তিনি বলেন, আমার উদ্দেশ্য নাগরিকদের পাশে দাঁড়ানো। সবার হয়তো স্বাস্থ্যসেবা লাগবে না, কিন্তু ফোন করার পর যখন একজন ডাক্তারের সেবা পাবেন তখন আমার নাগরিকদের আস্থা বেড়ে যাবে, সাহস পাবেন। তারা অন্তত বলতে পারবেন আমার মেয়র আমাদের সঙ্গে আছেন।
ওয়ারির বাসিন্দা অনিক কুমার সরকারের স্ত্রী গত ২৭ মে চিকুগুনিয়ায় আক্রান্ত হন। দু’তিন দিন পরই জ্বর ভালো হয়ে যায়। কিন্তু রয়ে যা তার রেশ। শুরু হয় পা ও হাতের গিঁটে গিঁটে ব্যাথা। ডিএসসিসির এ সেবার কথা জানতে পেরে ফোন করেন হটলাইনে। নির্দেশনা অনুযায়ী গিয়ে পেয়ে যান স্বাস্থ্যসেবা।
ফিজিও থেরাপিস্টের সেবা নেওয়ার পর অনিক কুমারই জানান ডিএসসিসির কর্মকাণ্ড সম্পর্কে। তিনি বলেন, বিনা পয়সায় চিকিৎসা পাবো এটা ভাবতেও পারিনি। আমরা ফোন করি অপর প্রান্ত থেকে ঠিকানা বলে দেন। সেখানে গিয়ে প্রায় দু’ঘণ্টা থেরাপি দেওয়া হয়। এছাড়া কিছু নিয়মিত ব্যায়াম দিয়েছেন।
সিটি করপোরেশনের এই সেবা পেয়ে বলেন, এটা সত্যিই অকল্পনীয়। বিনা পয়সায় এভাবে চিকিৎসাসেবা দেবে কল্পনাও করতে পারিনি। এটা হওয়া উচিত। একইসঙ্গে এ সেবা দীর্ঘদিন চালানো উচিত।
শামসুন নাহার নামের আরেক রোগী থাকেন কাঁঠাল বাগান এলাকায়। ডিএসসিসির কল সেন্টারের সেবা প্রসঙ্গে বলেন, আমাকে গরম পানি ও ঠাণ্ডা পানির সেঁক নিতে বলেছেন। যাওয়ার আগে চিন্তাও করতে পারিনি এভাবে টাকা ছাড়াই কোনো ডাক্তার আমাকে পরামর্শ দেবেন। খুবই ভালো উদ্যোগ।
ডিএসসিসির ৫৭টি ওয়ার্ডকে ৫টি জোনে ভাগ করে ২৮৫ জন ফিজিও থেরাপিস্ট কাজ করছেন। ৫ জোনে ৫ জন কো-অর্ডিনেটর (সমন্বয়কারী) রয়েছেন এবং একজন রয়েছেন প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে। সর্বমোট ২৯১ জন ফিজিও থেরাপিস্ট ডিএসসিসিভুক্ত এলাকায় কাজ করছেন।
ফিজিওদের প্রধান সমন্বয়কারী ডা. মো. জলিল বাংলানিউজকে বলেন, রোগীরা সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত কল সেন্টারে ফোন করেন। সেখান থেকে আমাদের আঞ্চলিক সমন্বয়কারীর কাছে রোগীর নাম ঠিকানা দেওয়া হয়। একইভাবে রোগীকেও ফোনে জানিয়ে দেওয়া হয় কোন এলাকার বাসিন্দা কোথায় গেলে সেবা পাবেন।
ডিএসসিসির বিশেষ এ স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্পে মূলত রোগীর ব্যথার ধরন ও স্থায়িত্ব জানার পর যাদের পা ফোলা বা ব্যথা তাদের পাশাপাশি দু’টি পাত্রে পানি রেখে সেঁক দেওয়া হয়। ঠাণ্ডা পানিতে ১৫ মিনিট এবং গরম পানিতে ১৫ মিনিট পা ভিজিয়ে রাখলেই ব্যথা থেকে অনেকটা পরিত্রাণ পাওয়া যাবে। জানান কো-অর্ডিনেটর ডা. ইয়াসমিন আরা ডলি।
ডিএসসিসির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ২০ জুলাই হতে ৩১ জুলাই পর্যন্ত মোট ১২দিনে ৬৭ হাজার ৮৯৫টি কল আসে ডিএসসিসির হটলাইনে।
এরমধ্যে ইউনিক কলার (একই ব্যক্তি একাধিকবার ফোন করেছেন) ছিলো ৪৪ হাজার ৮৬২ জন। আর ডিএসসিসি থেকে ফেরত কল করা হয়েছে ৮ হাজার ৬০৪ জনকে। এছাড়া ২ হাজার ৫০টি এসএমএস (ক্ষুদে বার্তা) পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে ২ হাজার ৫০ জন চিকিৎসাসেবা চেয়েছেন।
এসব রোগীদের মধ্যে ৯১৪ জনের বাসায় গিয়ে চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন ডিএসসিসির ডাক্তাররা। আর ৮৮৪ জনকে ফোনেই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ২৫২ জনকে ফেরত কল দিয়ে সাড়া পাওয়া যায়নি। ইতোমধ্যে চিকুনগুনিয়া আক্রান্তদের মধ্যে ১ লাখ ৭৫ হাজার প্যারাসিটামল বিতরণ করা হয়েছে।
৩১ জুলাই ফিজিও থেরাপি সেবার উদ্বোধন করেন মেয়র সাঈদ খোকন।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০২, ২০১৭
এসএম/এএ