একইভাবে ২০১৮ সালে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীর সংখ্যা ছিলো ১২ হাজার ৭৬৪ জন এবং মৃত্যুবরণ করেন ৬ হাজার ৮৪৬ জন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হিসাব অনুসারে বাংলাদেশে ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীদের প্রায় অর্ধেকই মৃত্যুবরণ করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জরায়ু মুখ ও স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ সচেতনতা। নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগ নিরাময় বা মৃত্যুরোধ করা সম্ভব। কেননা প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করা সম্ভব হলে এ রোগ নিরাময় করা যায়।
এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ২০১৪ সাল থেকে প্রতি বছরের ১৯ থেকে ২৫ জানুয়ারি জরায়ু মুখ ক্যান্সার প্রতিরোধ সপ্তাহ পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সী সব বিবাহিত নারীর বিনামূল্যে ভায়া ও সিবিই টেস্ট পরিচালনা করে আসছে। সে লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) তত্ত্বাবধায়নে জাতীয় জরায়ু মুখ ও স্তন ক্যান্সার নির্ণয় কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। এই কেন্দ্রটির তত্ত্বাবধায়নে দেশব্যপী ৪৩১টি কেন্দ্র, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা সদর হাসপাতাল, নির্বাচিত উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে জরায়ু-মুখ ক্যান্সার ও স্তন ক্যান্সার নির্ণয় কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সেন্টার ফর সার্ভিক্যাল অ্যান্ড ব্রেস্ট ক্যান্সার স্ক্রিনিং অ্যান্ড ট্রেনিং প্রকল্পের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আশরাফুন্নেসা জানান, জরায়ু মুখ ক্যান্সার এমন একটি মরণব্যাধী যা প্রাথমিকভাবে সাধারণত কোনো দৃশ্যমান পূর্ব লক্ষণ প্রকাশ করে না কিন্তু নিয়মিত পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করা গেলে এই ক্যান্সারের সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব। জরায়ু মুখ ক্যান্সারের ক্ষেত্রে ভায়া নামক পরীক্ষার মাধ্যমে জরায়ু মুখ ক্যান্সার পূর্বাবস্থা নির্ণয় করা যায় ও ভবিষ্যতে ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে সেটিও শনাক্ত করা সম্ভব। স্তন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে সিবিই নামক পরীক্ষার মাধ্যমে স্তন ক্যান্সার প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয় করা সম্ভব যা প্রশিক্ষণের পর নারীরা নিজেই করতে পারে। এই পরীক্ষাগুলো জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য খুবই সহজ ব্যাথামুক্ত ও কার্যকর।
তাছাড়া এ সংক্রান্ত সেবার পরিধি ও মান উন্নয়ন এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিএসএমএমইউ’তে ১৯ থেকে ২৫ জানুয়ারি ‘জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ সপ্তাহ’ শুরু হয়েছে।
এ উপলক্ষে রোববার (২০ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণের বটতলা থেকে জাতীয় জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সার স্ক্রিনিং ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উদ্যোগে র্যালি বের হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া’র নেতৃত্বে র্যালিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অংশ প্রদক্ষিণ করে।
এরপর এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, সমাজের অর্ধেক অংশই হলো নারী। জরায়ু ও স্তন ক্যান্সার বড় ধরনের একটি ঘাতকব্যাধি। শুরুতে এই ক্যান্সার নির্ণয় করতে পারলে অনেক মা-বোনদের জীবন রক্ষা করা যাবে। বাংলাদেশ সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত জাতীয় জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সার স্ক্রিনিং ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে জরায়ু ও স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীদের মৃত্যুহার কমাতে ও রোগটি প্রতিরোধ করতে বিরাট ভূমিকা পালন করবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৯
এমএএম/আরআর