ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

কর্তৃপক্ষকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মেয়াদ শেষেও দায়িত্বে

মুশফিক সৌরভ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৪৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৯
কর্তৃপক্ষকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মেয়াদ শেষেও দায়িত্বে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল (ফাইল ফটো)

ব‌রিশাল: অধিদফতরের নিয়মানুযায়ী মেয়াদ শেষ হলেও বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করেছেন বিভিন্ন ওয়ার্ড ইনচার্জরা। নির্ধারিত সময় শেষ হলেও অনেকেই ওয়ার্ড ইনচার্জের পদ ছাড়তে নারাজ।

এমনকি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে উদ্যোগ নিলেও অনেক ইনচার্জ বিভিন্নভাবে তদবির-লবিং শুরু করে দিয়েছে। তবে হাসপাতাল প্রশাসন বলছে, নিয়মানুযায়ী সবাইকে চলতে হবে।

তার পরও রোগীদের সেবার ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো বিষয় থাকলে তাও বিবেচনা করা হবে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের মে মাসে হাসপাতাল থেকে বিপুল পরিমাণ ওষুধ চুরি ও বাইরে পাচারের একটি ঘটনা প্রকাশ পায়। যে ঘটনায় হাসপাতালের মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডের তৎকালীন ইনচার্জ সেবিকা বিলকিস জাহানের সরাসরি জড়িত থাকার বিষয়টি সামনে বেরিয়ে আসে। এরপর এ ঘটনায় দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু হলে নার্সিং স্টাফদের দীর্ঘ বছর ওয়ার্ড ইনচার্জের দায়িত্ব পালনের বিষয়ে একটি আদেশ জারি করে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতর।

যেখানে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতরের আওতাধীন কর্মরত সিনিয়র স্টাফ নার্স, স্টাফ নার্স, নার্সিং সুপারভাইজার ও অন্যান্য নার্সিং কর্মকর্তাদের প্রতি ২ বছর পর পর ওয়ার্ড ইনচার্জের দায়িত্ব পরিবর্তন করার জন্য বলা হয়।

কিন্তু সে আদেশ যথাযথভাবে বাস্তবায়নে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় প্রশাসনিক জটিলতার সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ১৩ জুন নার্সিং ও মিডওয়াইয়ারি অধিদফতরের তৎকালীন মহাপরিচালক তন্দ্রা শিকদার সাক্ষরিত এক নোটিশে প্রতি ২ বছর পরপর ওয়ার্ড ইনচার্জের দায়িত্ব পরিবর্তন করার জন্য সব নার্সিং পারসোনেলদের ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে পুনরায় অনুরোধ জানানো হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন যোগদানের পর একবার ও সর্বশেষ গত ২২ আগস্ট আরও একবার নোটিশে দায়িত্বের মেয়াদ শেষ হওয়া ওয়ার্ড ইনচার্জের অব্যাহতি দেওয়ার নার্সিং সেবা তত্ত্বাবধায়ককে নির্দেশ দেন তিনি। পাশাপাশি যারা দায়িত্ব হস্তান্তরের গড়িমসি করবে তাদের তালিকা তৈরি করে হাসপাতালে পরিচালকের মাধ্যমে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতরের মহা-পরিচালকের কাছে পাঠনোর নির্দেশ দেওয়া হয়।  ওই নোটিশের পর শেবাচিম হাসপাতালের সেবা তত্ত্বাবধায়কও সব ইনচার্জকে বিষয়টি অবহিত করে ২৪ আগস্ট নোটিশ দেন।

আর আগের নোটিশগুলো যেন-তেনভাবে এড়িয়ে গেলেও এবারে নোটিশের পরই দেখা দেয় জটিলতা। ২ বছরের বেশি দায়িত্ব পালন করা ইনচার্জরা এ সংক্রান্ত নোটিশ পেয়েও কোনো ভ্রুক্ষেপ করছেন না। অনেকে মৌখিকভাবে ইনচার্জের দায়িত্ব হস্তান্তর করতে চাইলেও অনেকে শুরু করে দিয়েছেন তদবির। আর এতেই বেঁকে বসেছে হাসপাতাল প্রশাসন।

সেবা তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, শেবাচিম হাসপাতালে ইনডোর-আউটডোর মিলিয়ে প্রায় ৪০টির মতো ওয়ার্ড ও বিভাগে সমানসংখ্যক নার্সিং স্টাফ ওয়ার্ড ইনচার্জের দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকজন বাদে প্রায় সবাই ২ বছরের বেশি সময় ধরে ইনচার্জের দায়িত্বে রয়েছেন।  এরমধ্যে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটর (আইসিইউ) ফরিদা বেগম, মেডিসিন-৩ এর শামসুন্নাহার বেগম, নবজাতকের জয়নব বেগম, স্ক্যানার মাহফুজা বেগম, ক্যাথল্যাবের শামীমা আক্তার, শিশু সার্জারির সুরাইয়া খানম, শিশু ওয়ার্ডের জেসমিন আক্তার, সার্জারি-১ সংগীতা সরকার, আউটডোর চক্ষু শাহানাজ, টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) নাছিমা, মহিলা অর্থোপেডিকের নাসিমা, অর্থোপেডিক পুরুষ ওয়ার্ডের জাহানারা বেগম, কেবিন শাহানাজসহ ২০ জনের অধিক নার্সিং স্টাফ রয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এরমধ্যে কেউ কেউ স্ব-ইচ্ছায় ওয়ার্ড ইনচার্জের দায়িত্ব হস্তান্তর করতে চাইলেও বেশিরভাগেই তদবির ও নিজের ইনচার্জ থাকার পক্ষে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরছেন। বিশেষ করে আইসিইউ, মেডিসিন, সার্জারি, লেবারসহ গুরুত্বপূর্ণ ওয়ার্ডগুলোর ইনচার্জদের দায়িত্ব বারবার পরিবর্তন না হলে সঠিক সেবা থেকে রোগীর বঞ্চিত হওয়ার সঙ্কাও রয়েছে।  তাই রোগীসহ সংশ্লিষ্টরা এ পরিবর্তনকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।

তবে সেবা তত্ত্বাবধায়ক সেলিনা আক্তার বাংলানিউজকে জানান, এ সরকারের একটি নির্দেশনা, যা অমান্য করার কোনো সুযোগ নেই। যাদের ওয়ার্ড ইনচার্জের দায়িত্ব পালনের মেয়াদ ২ বছরের বেশি হয়ে গেছে। তাই তাদের অব্যাহতি দিতেই হবে। নয়তো এ কারণে প্রশাসনিক নানান জটিলতা দেখা দিচ্ছে।

তিনি বলেন, ওয়ার্ড ইনচার্জের দায়িত্ব গেলেও কেউ তো আর নিজের চাকুরি বা যোগ্যতা হারাচ্ছেন না, তাহলে আপত্তি কিসের। আর রোগীদের কথা চিন্তা করে যদি কোনো ইনচার্জ ওই ওয়ার্ডের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়, তাহলে তাকে ওই ওয়ার্ডেই রাখা হবে, শুধু ইনচার্জের দায়িত্ব অপর একজনে পালন করবে।  এতে আমাদের কাজে স্বচ্ছতা বাড়বে।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন বলেন, যদি কোনো ওয়ার্ডের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইনর্চাজের (ব্যাকআপ) স্থান পূরণ করা না যায়, সে ক্ষেত্রে আলাদা ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। তবে যে আইন তৈরি হয়েছে সেটা অবশ্যই জনকল্যাণের জন্য আর তা মানতে হবে। এতে স্বেচ্ছাচারিতাও বন্ধ হবে বলে মনে করেন তিনি।

বাংলা‌দেশ সময়: ১৮২৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৯
এমএস/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।