ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

‘ট্রমায় ভুগছে’ ফেনী ট্রমা সেন্টার

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২০
‘ট্রমায় ভুগছে’ ফেনী ট্রমা সেন্টার ফেনী ট্রমা সেন্টার। ছবি: বাংলানিউজ

ফেনী: রয়েছে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ), অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার, প্যাথলজির জন্য আছে উন্নতমানের যন্ত্রপাতিও। কিন্তু নেই সেগুলোর চালিকা শক্তি বিদ্যুৎ সংযোগ। রোগী এবং চিকিৎসকদের জন্য নেই পানি সরবরাহও। এভাবেই অচলাবস্থার মধ্য দিয়ে চলছে ফেনী ট্রমা সেন্টার। কোনোভাবে চালু আছে শুধু বহির্বিভাগের সেবা। দুরাবস্থা দেখলে মনে হয় যেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি নিজেই ‘ট্রমায়’ ভুগছে।

মহাসড়কে দুর্ঘটনাকবলিত মানুষের জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি চালু করলেও এখানে কার্যত কোনো সেবা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।

জানা যায়, চালু হওয়ার পর দীর্ঘ প্রায় ১৪ বছরেও কোনো হাড়ভাঙা ও দুর্ঘটনায় আহত (ট্রমায় আক্রান্ত) রোগীর চিকিৎসা হয়নি ওই সেন্টারে।

বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় পাঁচ বছর আগে সংযোগ কেটে দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। নেই পানির সরবরাহও। সাম্প্রতিক বেতন ভাতা হলেও গত একবছর বন্ধ ছিলো ওই ট্রামা সেন্টারটি। প্রতিদিন বহির্বিভাগে হাতে গোনা রোগী আসে চিকিৎসাসেবা নিতে।

জেলা স্বাস্থ্যবিভাগের দেওয়া তথ্য মতে, ফেনী ট্রমা সেন্টারে ২২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ রয়েছেন। দুই চিকিৎসক, নার্স, ফার্মাসিস্টসহ মোট নয়জন কর্মকর্তা-কর্মচারী এখানে কর্মরত রয়েছেন। বর্তমানে দৈনিক গড়ে ১৫-২০ জন সাধারণ রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসে।

ফেনী পৌর শহরের মহিপাল সংলগ্ন ট্রমা সেন্টারটিতে গিয়ে দেখা যায়, তেতলা ভবনটির অধিকাংশ কক্ষই ছিলো বন্ধ। দুপুর ১২টা বাজলেও সেবা নিতে আসেনি কোনো রোগী।

আবুল কাশেম নামে স্থানীয় এক ব্যাবসায়ী বলেন, এখানে সাধারণত ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত রোগীরাই আসে। হাড়ভাঙা ও দুর্ঘটনায় আক্রান্ত কোনো রোগী আসে না বললেই চলে।

জরুরি বিভাগে একজন চিকিৎসক রোগীদের সঙ্গে কথা বলে প্রেসক্রিপশন  দিচ্ছিলেন। তিনি ছাড়াও পাশের দুইটি কক্ষে পাওয়া গেলো একজন ফার্মাসিস্ট ও একজন উপ-সহকারী চিকিৎসা কর্মকর্তাকে। তিনটি কক্ষে চিকিৎসক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা থাকলেও কোথাও বৈদ্যুতিক ফ্যান ও বাতি জ্বলছিলো না।

ট্রমা সেন্টারটিতে দুইটি অপারেশন থিয়েটার, রেডিওলজি বিভাগ, ল্যাব, রোগীদের ওয়ার্ড ও কেবিন থাকলেও তা খোলাই হয় না দীর্ঘদিন। বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় কক্ষগুলোত যেন ভুতুড়ে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

নিচতলার তিনটি কক্ষ ছাড়া বাকিগুলোতেই ঝুলছিলো তালা। ১৪ বছর আগে চালুর পর থেকে কক্ষগুলো ব্যবহৃত হয়নি। কক্ষগুলোতে মূল্যবান যন্ত্রপাতি, এক্স-রে ও চিকিৎসা সরঞ্জাম পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। শৌচাগারসহ হাসপাতালের কোথাও নেই পানির ব্যবস্থা। চিকিৎসক ও কর্মচারীদের খাওয়ার ও ব্যবহারের পানি বাইরে থেকে সংগ্রহ করতে হয়।

সেন্টারটিতে কর্মরত  চিকিৎসক (এমও) সানজিদা খানমের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন আগে ট্রমা সেন্টারটি প্রতিষ্ঠা করা হলেও পুরোপুরি চালু না হওয়ায় এখানে রোগীদের আনাগোনা কম। পরিপূর্ণভাবে চালু হলে রোগী আসত এবং ভালো সেবাও পাওয়া যেতো।

তিনি বলেন, সারাদিনে এখানে ১৫-২০ রোগী আসে। দিনের বাকি সময় অলস কাটে এখানকার কর্মকর্তাদের। ট্রমা সেন্টারটি মূলত চালু করা হয় মহাসড়কে দুর্ঘটনাকবলিত মানুষের সেবার জন্য। কিন্তু বর্তমানে এখানে কোনো রোগীর সেবা দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে স্থানীয়দের নিরুপায় হয়ে যেতে হচ্ছে মহাসড়ক থেকে দূরের ফেনী জেনারেল হাসপাতালে।

মহিপাল এলাকার স্থানীয় ব্যবসায়ী মাহবুবুল আলম বলেন, প্রতিদিন সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনায় লোকজন আহত হয়। কিন্তু ট্রমা সেন্টারে গিয়ে কোনো চিকিৎসক পাওয়া যায় না। কখনো পাওয়া গেলেও তারা চিকিৎসা না দিয়েই ফেনী সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। এ কারণে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগীদের এখন ট্রমা সেন্টারে নেওয়া হয় না।

এ ব্যাপারে ট্রমা সেন্টারটির চিকিৎসক (এমও) সানজিদা খানম বলেন, জনবল ও অবকাঠামোগত অবস্থা ঠিক না থাকায় রোগীদের ফেরত পাঠাতে হয়। যন্ত্রপাতি ও চিকিৎসার সরঞ্জাম থাকলেও সেসব ব্যবহারের জন্য প্রশিক্ষিত জনবল নেই। অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যুৎ আর পানির নেই এখানে।

তিনি আরও বলেন, ট্রমা সেন্টারটি বর্তমানে শুধু বহির্বিভাগ হিসেবে চালু রয়েছে। বহির্বিভাগের সাধারণ রোগীদের জন্য সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে কিছু ওষুধ দেওয়া হয়। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসনের কোনো ব্যবস্থা নেই। সেন্টারে কোনো নৈশপ্রহরী না থাকায় রাতের বেলায় এটি সম্পূর্ণ অরক্ষিত পড়ে থাকে।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, ফেনী ট্রমা সেন্টারটি ২০০৬ সালের ৩ অক্টোবর চালু করা হয়। ২০ শয্যার এ ট্রমা সেন্টারে একজন অর্থোপেডিক পরামর্শক চিকিৎসক, একজন আবেদনবিদ ও একজন আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তাসহ (আরএমও) ২২ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী থাকার কথা। কিন্তু বর্তমানে একজন চিকিৎসকসহ আটজন কর্মচারী রয়েছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ফেনীর সিভিল সার্জন ড. মো. আবদুল মোমেন বলেন, ট্রমা সেন্টারটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করার বিষয়টি সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। ইতোপূর্বে এ বিষয়ে অনেকবার মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি লেখা হয়েছে। এটি পুরোপুরি চালু করলে মহাসড়কে দুর্ঘটনাকবলিত মানুষদের সেবা দেওয়া যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১১৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২০
এসএইচডি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।