এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সামাজিক নানান জটিলতা ও বাঁধার কারণে মা ও শিশুদের না পেয়ে টিকার বাক্স নিয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে স্বাস্থ্য সহকারীদের। ফলে বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক ক্ষেত্রে তিনভাগের একভাগ টিকাও দিতে পারছেন না বলে দাবি করেছেন স্বাস্থ্য সহকারীরা।
জানা যায়, স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) কার্যক্রমের আওতায় শিশুর জন্মের পর থেকে ১৫ দিনের মধ্যে টিকাদান কার্যক্রম শুরু করা হয়। যেভাবে সর্বোচ্চ আঠারো মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে জীবন রক্ষাকারী দশটি রোগের টিকা দিতে হয়। এছাড়া জাতীয় প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে ভিটামির ‘এ প্লাস’ ক্যাম্পেইন এবং হাম-রুবেলার টিকা দেওয়া হয়। সরকারিভাব এসব কার্যক্রম মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নের কাজটি করে থাকেন স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিদর্শকরা।
স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিদর্শকদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, করোনার বর্তমান পরিস্থিতিতে অস্থায়ী কেন্দ্রগুলোতে টিকা নেওয়ার হার কমে গেছে গর্ভবতী নারী, কিশোরী ও শিশুদের।
স্বাস্থ্য সহকারীরা জানান, করোনার ভয়ে মায়েরদের ডেকেও আনা যাচ্ছে না। অপরদিকে অস্থায়ী কেন্দ্র বসানো বাড়ির মালিকরাও তাদের বসতে দিচ্ছেন না। এতে করে তাদের কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে না। আর বাড়ির মালিকরা বলছেন, করোনার কারণে সরকারের প্রচারণা মেনে ভিড় এড়াতে স্বাস্থ্য কর্মীদের বাড়িতে বসতে দিচ্ছেন না তারা। এতে করে স্বাস্থ্য সহকারী সংগঠনের নেতারাও বেশ উদ্বিগ্ন।
স্বাস্থ্য সহকারী অ্যাসোসিয়েশন বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক তরুণ দাস মুন্সি বলেন, করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া যেসব বাড়িতে অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্র বসানো হতো, করোনা আতঙ্কে নিরাপদ শারীরিক দুরত্বের দোহাই দিয়ে সেসব বাড়িতেও বসতে দেওয়া হচ্ছে না। ফলে বর্তমানে স্বাস্থ্য সহকারীরা তাদের টেবিল-চেয়ার নিয়ে খোলা মাঠ, বাগান কিংবা কোনো এক পুকুরপাড়ে বসে টিকাদান কর্মসূচি চলমান রাখার কাজটি করছেন।
তবে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে করোনা আতঙ্কে কেউ টিকা নিতেও আসতে চাচ্ছেন না। কিন্তু নির্ধারিত বয়সের মধ্যেই দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকায় গর্ভবতী নারী, কিশোরী ও শিশুদের জন্য এসব টিকা নেওয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আবার যখন টিকা নিতে আসছেন না, তখন তাদের বোঝাতে গেলে করোনা সংশ্লিষ্ট নানান অযুহাত শুনতে হয় স্বাস্থ্য সহকারীদের।
তিনি বলেন, ঝুঁকি নিয়েই আমরা প্রতিদিন আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। দু’দিন স্বাস্থ্য শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার কথা থাকলেও বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় সেটি ব্যাহত হচ্ছে। তবে আমরা দু’দিন কমিউনিটি ক্লিনিকে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার কাজ করছি। পাশাপাশি সপ্তাহে চারদিন অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্র বসিয়ে ইপিআই কার্যক্রম চালিয়ে রাখার চেষ্টা করছি। এর বাইরে বিদেশ ও অন্যজেলা থেকে আগত ব্যক্তিদের হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিতকরণসহ তাদের সচেতন করার কাজটিও স্বাস্থ্য সহকারীরাই প্রথম সারিতে দাঁড়িয়ে করছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে বর্তমান পরিস্থিতিতে ১৫ দিন আগে আমরা দু’টি ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই), একটি মাস্ক ও একজোড়া গ্লোভস পেয়েছি। যারমধ্যে মাস্কটি একবার পড়া গেলেও গ্লোভস নিম্নমানের হওয়ায় তা শুরুতেই পড়তে গিয়ে ছিরে গেছে অনেকের। আর চোঁখের নিরাপত্তায় কোন চমশা দেওয়াই হয়নি। ফলে বিভাগের ২ হাজার ১০০ স্বাস্থ্য সহকারী ঝুঁকি নিয়েই কাজ করছে।
বরিশাল সদরের কড়াপুর ইউনিয়নের রায়পাশা ওয়ার্ডের এক স্বাস্থ্যকর্মী বলেন, ‘আমার আওতায় ৮টি কেন্দ্র আছে। এপ্রিলের প্রথম সপ্তহে দু’টি কেন্দ্রে কেউই টিকা নিতে আসেনি। আর কিছু কিছু জায়গায় একভাগেরও কম শিশু-গর্ভবতী নারী এসেছেন টিকা নিতে। অর্থাৎ আগে যেখানে প্রতিদিন ৫০ জন আসতেন, সেখানে এখন ৬ থেকে ৭ জন আসছেন।
এদিকে, বিভাগের ৮ হাজার ৪৮৪টি অস্থায়ী কেন্দ্রের সবগুলোতেই টিকাদানের হার কমে গেছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য সহকারী অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও বরিশাল সদরের চড়বাড়িয়া ইউনিয়নের স্বাস্থ্যকর্মী জিয়াউল হাসান কাবুল।
তবে টিকাদানের হার কমে যাওয়ায় বর্তমান অবস্থায় স্বাস্থ্য সহকারী ও সেবাগ্রহীতাদের সমস্যা না করে কিছুদিনের জন্য হলেও এ কার্যক্রম স্থগিত রাখা উচিত বলে মনে করেছেন নেতারা।
এ নিয়ে বরিশালের সিভিল সার্জন ডা. মনোয়ার হোসেন জানান, সরকারের নির্দেশনা রয়েছে কোন মতেই এ কর্মসূচি বন্ধ করা যাবে না। কারণ সঠিক সময়ে টিকা না দিলে রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শ্যমাল কুমার মণ্ডল জানান, করোনার আতঙ্কে টিকাদান কেন্দ্রগুলোয় উপস্থিতি কমেছে, এটা আমরাও শুনেছি। তবে এ কার্যক্রম চলমান না রাখার বিকল্প নেই।
১৮ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত দ্বিতীয় ধাপে বিভাগের ১৯ লাখ ৫০০ (৯ মাস থেকে ১০ বছরের নিচে) শিশুকে হাম-রুবেলা টিকাদান কার্যক্রম হাতে নেওয়া হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে তা স্থগিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৫ ঘণ্টা, মে ০১, ২০২০
এমএস/ওএইচ/