ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

‘বাসায় মরে যেতাম, তবু হাসপাতালে যেতাম না’

আবাদুজ্জামান শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১১ ঘণ্টা, মে ১০, ২০২০
‘বাসায় মরে যেতাম, তবু হাসপাতালে যেতাম না’

ঢাকা: দৈনিক সময়ের আলোর স্টাফ রিপোর্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি বেশ কয়েকদিন ধরে জ্বর-সর্দি-কাশিতে ভুগছেন। কোনোমতেই কমছে না তার অসুখ। করোনা পরীক্ষা করিয়েছেন। তবে রিপোর্ট হাতে পাননি।

শ্বাসকষ্ট হচ্ছে বলে শনিবার (০৯ মে) সকাল ১১টার দিকে মামুন যান ঢামেকের করোনা ইউনিটে ভর্তি হওয়ার জন্য। বাসায় অনেক দিন অবস্থান করলেও রোগের কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছিল না।

সেখানে গিয়ে তার নতুন অভিজ্ঞতা হলো। তিনি দেখলেন, ঢামেকের করোনা ইউনিটে রোগীরা এতটাই অবহেলিত যে, যা তার কল্পনাতেও আসেনি। এক পর্যায়ে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, যদি তিনি মরেও যান এরপরও এ হাসপাতালে থাকবেন না। সিদ্ধান্ত মোতাবেক সেদিন তিনি চলে আসেন হাসপাতাল থেকে বাসায়। বাসায় এসে ঢামেকের করোনা ইউনিটের পরিস্থিতি নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানান সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে।

তার অভিজ্ঞতার বিষয়টি অনুমতি নিয়ে পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

‘আসসালামু আলাইকুম। জানি সবাই ভালো আছেন। আমি হাসপাতালে যাওয়ার পর থেকে আপনারা আমার সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রেখেছেন এজন্য কৃতজ্ঞ। তবে সত্যি বলতে কি, এমন অভিজ্ঞতা হবে জানলে বাসায় মরে যেতাম তবুও হাসপাতালে যেতাম না। হাসপাতালে যাওয়ার পর ওয়ার্ড মাস্টার রিয়াজ ভাইয়ের কাছে পরিচয় দেয়ার পর উনি মোটামুটি ভর্তির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। কিন্তু ভর্তির সামগ্রিক কাজ শেষ হতে বিকাল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত বেজে যায়।

সাড়ে তিনটা বাজে এ দরজা ও  দরজা হয়ে তিনতলায় পাঠালেন। তিন তলায় যাওয়ার পর বলা হলো চিকিৎসকের কাছে গিয়ে ফাইল দেখিয়ে নিয়ে আসতে। পরে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে ঘণ্টাখানেক লাইনে দাঁড়িয়ে ফাইল দেখালাম। এর পরে আসলাম আবার নার্সের কাছে। আমি কোন রুমে থাকবো সেটা জিজ্ঞেস করতে। নার্স একটি রুম দেখিয়ে বললেন একটা বেডে গিয়ে থাকতে। কিন্তু সেই রুমটিতে যাওয়ার পর দেখি কোনো বেড ফাঁকা নেই । আমি আবার এসে নার্সকে বিষয়টি জানালাম। নার্স আমাকে বললেন কিছুক্ষণ পর বেড ফাঁকা হবে। অর্থাৎ ওই রুমে ১০ থেকে ১২টি বেড আছে, কিছুক্ষণের মধ্যে দুই একজন রোগী মারা যাবেন তখন বেড ফাঁকা হবে। নার্সের কথা সত্যি হতে বেশি সময় লাগেনি। আমি আধা ঘণ্টার মতো বাইরে এ দরজায় ও দরজায় ওয়েট করতে করতে দুজন মারা যান। তখন নার্স আমাকে বলেন, ওই যে দুজন মারা গেছেন তাদের কোন একজনের বেডে গিয়ে ওঠেন। সবচাইতে অবাক করার বিষয় হলো, একটি বেডে প্রস্রাব করে রেখেছে এবং সেখানে আজকের মধ্যে কোনো চাদর দেওয়া হবে না। আরেকটি বেডের অবস্থাও একই। সেখানেও কোনো চাদর দেওয়া হবে না। আমাকে এভাবেই থাকতে হবে।

আগামীকাল পরিষ্কার চাদর আসলে আমাকে  দেওয়া হবে। এমনকি বেডগুলোতে কোনো জীবাণুনাশক কিছু ছেটানো হয়নি। তখন আমি নার্সকে বললাম, এই অবস্থায় কীভাবে ওই বেডে থাকবো যেখানে চাদর পর্যন্ত নেই। তখন নার্সরা বললেন আমাদের কিছু করার নাই। চাদর না আসা পর্যন্ত আপনাকে দেওয়া যাবে না। এভাবেই আজকে রাত থাকতে হবে। আমি শেষমেষ বাধ্য হয়ে প্রস্রাবে ভেজা ওই বেডে না থেকে বাসায় ফিরে আসি। এমন বাস্তবতার মুখোমুখি আর কোনো সাংবাদিক ভাই হয়েছেন কি-না আমি জানি না। আমরা অন্তত আর কোনো সাংবাদিককে ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তির জন্য পরামর্শ না দেই। সবার জন্য শুভকামনা। আরো অনেক কিছু লেখার ছিল। সারাদিন শরীরের উপর অনেক ধকল যাওয়ায় আর পারলাম না। ভবিষ্যতে অনেক বিস্তারিত লিখবো। ’

এ বিষয়ে ঢামেকের বার্ন ইউনিটের নার্স ইনচার্জ দিপুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি শুনে তিনি জানান, এটাতো খুবই দুঃখজনক ঘটনা। বিষয়টি কারা করেছে কেন করেছে এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিছনার চাদরসহ অন্যান্য সবকিছুই দেওয়া আছে তাদের কাছে।

বিষয়টি ঢামেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিনকে জানানো হলে তিনি ওই হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের নার্স ইনচার্জ দিপুকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১০ ঘণ্টা, মে ১০, ২০২০
এজেডএস/এইচএডি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।