ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

দেশে চীনা করোনা ভ্যাকসিনের ট্রায়ালে ৪ মাস লাগবে: ডা. নজরুল 

রেজাউল করিম রাজা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৯ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০২০
দেশে চীনা করোনা ভ্যাকসিনের ট্রায়ালে ৪ মাস লাগবে: ডা. নজরুল 

ঢাকা: আগামী চার মাসের মধ্যে চীনের সিনোভেক কোম্পানির তৈরি করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) ভ্যাকসিন ট্রায়াল শেষ হবে বলে জানিয়েছেন দেশের অন্যতম শীর্ষ ভাইরোলজিস্ট এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম।  

রোববার (১৯ জুলাই) চীনের তৈরি এ টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার (ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল) অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি)।

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) এ ট্রায়াল করবে।  

চীনের তৈরি করোনা ভাইরাসের টিকা দেশে ট্রায়ালের সুবিধা কী এবং কেন করা হচ্ছে- এসব বিষয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেন অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম।  

বাংলানিউজ: কোনো ভ্যাকসিনের ট্রায়াল কীভাবে সম্পন্ন হয়।  

অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম: বাংলাদেশে চীনের তৈরি এই করোনা ভ্যাকসিনের তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম পর্যায়ের এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা ইতোমধ্যে তারা সম্পন্ন করেছে। প্রথম পর্যায়ের ট্রায়াল এনিমেলের উপর করা হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল স্বল্পপরিসরে করা হয় মানুষের উপর। সেখানে সেফটি অ্যান্ড ইমিউনিটির বিষয়গুলো দেখা হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালে যদি দেখা যায় এই টিকা মানুষের শরীরের জন্য নিরাপদ এবং যথেষ্ট ইমিউনিটি সিস্টেম তৈরি করছে তখন তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালে বেশিসংখ্যক মানুষের উপরে টিকা প্রয়োগ করা হয়।  

বাংলানিউজ: কাদের উপর এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে?

অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম: আমাদের দেশে যে সব স্বাস্থ্যকর্মী করোনা হাসপাতালে বিভিন্নভাবে সরাসরি আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের উপরে চীনের এই টিকা প্রয়োগ করা হবে। তারা ৪ হাজার ২শ জনের উপরে এই টিকা প্রয়োগের কথা বলছেন। এরমধ্যে অর্ধেককে টিকা দেওয়া হবে এবং অর্ধেককে প্লাসিবো (রোগীকে মানসিকভাবে আশ্বস্ত করার পদ্ধতি, যে তাকে ওষুধ প্রয়োগে চিকিৎসা করা হচ্ছে) দেওয়া হবে। কোনো টিকা পরীক্ষা করার নিয়ম হচ্ছে এটাই।  

যাদের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে এবং যাদের প্লাসিবো দেওয়া হবে তারা কেউ জানবে না তাদের ভ্যাকসিন না প্লাসিবো দেওয়া হয়েছে। এরপর দেখা হয় ইফেক্ট কী হচ্ছে। ইফেক্ট ক্যালকুলেশন করে দেখা হয় কার মধ্যে কী ধরনের ইফেক্ট তৈরি হয়েছে। তারপর আবার কোন ব্যক্তিকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে আর কাকে প্লাসিবো দেওয়া হয়েছে সেই কোড বের করা হয়। তখন পরিপূর্ণ অ্যানালাইসিসটা বোঝা যায়। চীনের ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রেও এমনটাই করা হবে।

বাংলানিউজ: ট্রায়ালের জন্য ঢাকার সাতটি হাসপাতাল নির্ধারণ করা হয়েছে। সব হাসপাতাল ঢাকার মধ্যে কেন? ঢাকার বাইরে কেনো ট্রায়াল হচ্ছে না?  

অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম: ঢাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে কারণ কাজগুলো করা অনেক কঠিন। এছাড়া ঢাকার মধ্যে যথেষ্ট স্বাস্থ্যকর্মী ডাক্তার ও নার্স পাওয়া যাচ্ছে। ওরা ট্রায়াল করছে যারা করোনা ভাইরাসে ভালোমতো এক্সপোজড হচ্ছে। ‌ মনে করেন যদি দিনাজপুর, কুমিল্লা ও ঢাকায় একটি গ্রুপ নেওয়া হয়, তাহলে এসব ভিন্ন এলাকায় এক্সপোজার রেট কেমন সেটা তো বোঝা যাবে না। বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রকম এক্সপোজড হবে। সেজন্যই ঢাকার এই মেডিক্যাল পারসনদের নেওয়া হচ্ছে যারা হেভিলি এক্সপোর্ট হয়েছে।  

এছাড়াও ঢাকাতে নেওয়ার আরেকটা অন্যতম কারণ হচ্ছে যেন এটা কন্ট্রোলের মধ্যে থাকে। তাই অনেক দূরে এই ট্রায়াল করলে কন্ট্রোল করা কঠিন হয়ে যেতে পারে। যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ আনুষঙ্গিক অন্য বিষয় বিবেচনা করেই ঢাকার হাসপাতালগুলোকে নির্বাচন করা হয়েছে।  

বাংলানিউজ: চীনের এই ভ্যাকসিনের ট্রায়াল কত দিনে সম্পন্ন হতে পারে?

অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম: একটা ইনজেকশন দেওয়ার পরে আবার সেকেন্ড ইনজেকশন দেওয়া হবে। এর আগে দেখা হবে যাকে ইনজেকশন দেওয়া হচ্ছে তার শরীরে আগে থেকেই করোনা ভাইরাসের এন্টিবডি রয়েছে কিনা। যদি কারো শরীরে আগেই এন্টিবডি থাকে, তাহলে তাকে বাদ দেওয়া হবে‌ এবং যাদের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়নি শুধু তাদেরই নেওয়া হবে। এগুলো অনেক সময়সাপেক্ষ বিষয়। চার মাসের মধ্যে এই কাজ সম্পন্ন হবে বলে তারা জানিয়েছে।

বাংলানিউজ: চীনের মানুষ ও চীনের করোনা ভাইরাসের জেনেটিক কোড কি একই রকম? এই ভ্যাকসিনের যদি সফলতা আসে তাহলে বাংলাদেশের মানুষের কি উপকার হবে? 

অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম: চীনের মানুষের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের জেনেটিক কোড পার্থক্য রয়েছে। আমাদের দেশের ভাইরাসের সঙ্গেও চীনের ভাইরাসের পার্থক্য হবে। তবে আমাদের দেশের মানুষের উপর প্রয়োগ করে যদি দেখা যায় যথেষ্ট পরিমাণ এন্টিবডি তৈরি হচ্ছে, তাহলে এটা আমাদের দেশে কার্যকর হবে। এ সব বিষয় বিবেচনা করেই আমাদের দেশের মানুষের উপর চায়নিজ ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে। আমাদের দেশে এই ট্রায়াল করার উদ্দেশ্য হচ্ছে চীনের এই ভ্যাকসিন সফল হলে আমরা পাবো। তাদের সঙ্গে আমাদের সেই রকম একটা বোঝাপড়া হয়েছে।  

বাংলানিউজ: চীনের করোনা ভ্যাকসিন সফল হলে কাদের এটা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেওয়া হবে?

অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম: আমাদের দেশে কাদের এই ভ্যাকসিন দেওয়া হবে সেটা এখনো ঠিক হয়নি। আমাকে যদি বলা হয়, তাহলে আমি বলবো যারা বেশি মাত্রায় এক্সপোজড হয়েছেন, বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন, যাদের এক্সপোজ হওয়ার সুযোগ বেশি, তাদেরই যেন আগে এই ভ্যাকসিন দেওয়া হয়‌। তারপর অন্যদের দেওয়া। আর যদি ভ্যাকসিন যথেষ্ট পরিমাণে পাওয়া যায় তাহলে অত বাছাবাছি করে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। কোটি কোটি ভ্যাকসিনের ডোজ প্রয়োজন হবে। যে কোম্পানি এটি তৈরি করছে তাদের সক্ষমতার বিষয়টাও বিবেচনা করতে হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০২০
আরকেআর/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।