ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

ঢামেকের করোনা ইউনিটে লোক নিয়োগে টাকার খেলা

আবাদুজ্জামান শিমুল, সিনিয়র  করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৩ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০২০
ঢামেকের করোনা ইউনিটে লোক নিয়োগে টাকার খেলা ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে করোনা রোগীদের সেবার কাজে সহযোগিতার জন্য যে ১৬৫ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাদের প্রায় সবার কাছ থেকেই ঘুষ নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

প্রায় দুই মাস আগে ১৬৫ জনকে দৈনিক ভিত্তিতে নিয়োগ দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

 

বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নেমেছে একটি জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা।

সূত্র জানিয়েছে, নিয়োগ পাওয়া প্রায় প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেওয়া হয়েছে।

ঢামেকের অনেক কর্মীই লোক নিয়োগে এই টাকার খেলা সম্পর্কে জানেন। কিন্তু তারা মুখ খুলতে চান না।  

সূত্রের দাবি, এই করোনাকালে রোগীদের সেবায় সহযোগিতার জন্য যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তারা টাকার বিনিময়ে চাকরি পেয়েছেন। সুতরাং তারা কতটা সৎভাবে কাজ করবে তা তো বোঝাই যায়। ১৬৫ জনের মধ্যে বেশ কয়েকজন আছেন মাদকাসক্ত। এছাড়া মোবাইল ফোন চোরও আছেন দুএকজন। মেডিক্যালের তার চুরি করে জেল খেটেছেন এমন লোককেও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।  

দৈনিক ভিত্তিতে নিয়োগের সময় ৪০ জনের একটি তালিকা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হাতে দেন ঢামেকের চতুর্থ শ্রেণী সমিতির সভাপতি আবু সাঈদ। সেই ৪০ জনকেই নিয়োগ দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এই ৪০ জনের মধ্যে শামীম ও হানিফ চৌধুরী মাদকাসক্ত।

সূত্র জানায়, শামীম নতুন ভবনের ৯০১ নম্বর ওয়ার্ডে ডিউটি করেন। তিনি ডিউটিতে থাকা অবস্থায় প্রায় সময় ওয়ার্ড থেকে প্রতিদিন ৬ থেকে ৭টি মোবাইল চুরি হয়। প্রতিটি মোবাইলের দাম ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা, এরকম দাবি করেছিলেন ভুক্তভোগী রোগীর স্বজন ও রোগীরা।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই সূত্র জানায়, এক কর্মকর্তা নতুন ভবনের কেবিনে ভর্তি ছিলেন। তার মোবাইলটাও চুরি হয়ে যায়। হাসপাতালে অনেকেই মনে করেন মোবাইল চুরির সঙ্গে জড়িত আছেন শামীম। কারণ নতুন ভবন পুরোটাই করোনা ইউনিট। এমনিতে বাইরের লোক হাসপাতলের করোনা ইউনিটে একদমই প্রবেশ করে না।

নতুন ভবনের ওয়ার্ড মাস্টার রিয়াজ জানান, ২০১৫ সালে নতুন ভবনের ডাক্তার ক্যান্টিনের পিছে সার্ভারের তার চুরি করার সময় শামীমকে হাতেনাতে আটক করা হয়। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি মামলা করে। ওই মামলায় তিনি জেল খেটে বেরিয়ে আসেন।

সূত্রটি আরও জানায়, টাকার বিনিময় নিয়োগে পিছিয়ে নেই অবসরে থাকা সাবেক সভাপতি আব্দুল খালেক। তিনিও টাকা নিয়ে আনুমানিক ১০ থেকে ১২ জনকে চাকরি দিয়েছেন। এদের মধ্যে বিল্লালসহ বেশ কয়েকজন ঢাকা মেডিক্যালের করোনা ইউনিট-২- এ ডিউটি করে থাকেন। তারা নিয়োগ পেয়েছেন খালেকের লোক বলে। তারা কোনো ডিউটি করেন না। ওয়ার্ড মাস্টারের রুমে সারাদিন আড্ডা দেন।  

এ ব্যাপারে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণী সমিতির সভাপতি আবু সাঈদ জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৪০ জনের একটি তালিকা আমার কাছে চেয়েছিল। আমি সেই ৪০ জনের নাম দিয়েছি। তাদের সবারই চাকরি হয়েছে। এরা হাসপাতালে স্টাফদেরই আত্মীয়-স্বজন।  সবার সঙ্গে কথা বলেই আমি তালিকা দিয়েছিলাম।

নিয়োগ প্রক্রিয়ায় টাকা নেওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, আমার তালিকার কারো কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়নি। অন্যদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে কি না আপনারা দেখতে পারেন।  

এই ৪০ জনের তালিকার মধ্যে হানিফ ও শামীম নামে দুই জন মাদকাসক্ত ও শামীম তার চুরির কারণে জেল খেটে বেরিয়েছেন, এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হতে পারে। তবে আমার দেওয়া তালিকায় তাদের নাম আছে কি না বলতে পারি না।

এ বিষয়ে ঢামেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন বলেন, আমরা যাদের নিয়োগ দিয়েছি তাদের আগেই বলেছি তোমাদের চাকরি স্থায়ী না। যখন তখন তোমাদের চাকরি চলে যেতে পারে। এই চাকরির জন্য তোমরা যদি কাউকে টাকা দিয়ে থাকো, তা প্রমাণিত হলে তোমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তারা যদি টাকা দিয়ে থাকে তাহলে নিজেরাই প্রতারিত হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দৈনিক ভিত্তিতে নিয়োগের প্রজ্ঞাপন দেওয়া হয়নি। কারণ প্রজ্ঞাপন দিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করলে করোনাকালে হাসপাতালে হুলস্থুল লেগে যেত। তবে হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারী সভাপতি সাইদ তাদের পরিচিত কিছু লোক দিয়েছেন। তাদেরই অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাইদের তালিকায় মাদকাসক্ত কিংবা চুরি করে জেল খাটা লোক আছে কি না তা আমার জানা নেই।  

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৩ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০২০
এজেডএস/এজে
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।