ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

বাগেরহাট সদর হাসপাতালে সংকট থাকলেও থেমে নেই সেবাদান

এস.এস শোহান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২, ২০২০
বাগেরহাট সদর হাসপাতালে সংকট থাকলেও থেমে নেই সেবাদান বাগেরহাট সদর হাসপাতাল, ছবি: বাংলানিউজ

বাগেরহাট: নানা সংকট, সীমাবদ্ধতা ও করোনা সংক্রমণের ভয় উপেক্ষা করে প্রতিনিয়ত সেবা দিয়ে যাচ্ছেন বাগেরহাট সদর হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স,  কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।

করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও চিকিৎসক ও নার্সদের আন্তরিক সেবায় খুশি রোগীরাও।

দেশে করোনা সংক্রমণের শুরুর দিকে ১৮ লাখ মানুষের এ জেলার প্রধান এ হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা অনেক কম ছিল। মার্চ-এপ্রিলের দিকে হাসপাতালের বহির্বিভাগের প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ রোগী চিকিৎসা নিতেন। কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতা ও রোগীদের হাত ধোয়ার ব্যবস্থা, ডক্টরস সেফটি চেম্বারসহ নানা ইতিবাচক উদ্যোগে জুন-জুলাইয়ে প্রতিদিন সেই রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৩৫০ থেকে ৪৫০ জনে পৌঁছেছে। মার্চ-এপ্রিলে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২০-২৫ এ নামলেও সেই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৮০ থেকে ৯০ জনে।

৫০ শয্যা নিয়ে ১৯৭০ সালে বাগেরহাট জেলা সদরের মুনিগঞ্জে এ হাসপাতালের যাত্রা শুরু হয়। পরে ১৯৯৭ সালে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও ৫০ শয্যার জনবলে চলছে হাসপাতালের কার্যক্রম। আর বর্তমানে সেই ৫০ শয্যার জনবলও অর্ধেকে নেমে এসেছে। তারপরও চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা। এছাড়া এ হাসপাতালের সঙ্গে অন্য ভবনে রয়েছে ৫০ শয্যার কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতাল। সেখানে সাময়িক সময়ের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক থাকলেও রয়েছে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর সংকট।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ৫০ শয্যার লোকবল অনুযায়ী হাসপাতালে ২৪ জন চিকিৎসকের ১৩টি পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে সিনিয়র ও জুনিয়র কনসালট্যান্টের ১২টি পদের মধ্যে ছয়টি এবং মেডিকেল অফিসারদের ১২টি পদের সাতটি পদ শূন্য রয়েছে। তৃতীয় শ্রেণির ৪১ পদের মধ্যে ২৩টি এবং চতুর্থ শ্রেণির ২১টি পদের মধ্যে চারটি পদ শূন্য রয়েছে।  

চিকিৎসকের শূন্য পদগুলো হচ্ছে সিনিয়র কনসালট্যান্ট গাইনি, সিনিয়র কনসালট্যান্ট চক্ষু, সিনিয়র কনসালট্যান্ট অ্যানেসথেশিয়া, জুনিয়র কনসালট্যান্ট কার্ডিওলজি, জুনিয়র কনসালট্যান্ট রেডিওলজি ও জুনিয়র কনসালট্যান্ট অর্থ্রোটমি, মেডিকেল অফিসার তিনজন, মেডিকেল অফিসার (ইউনানী) একজন, ডেন্টাল সার্জনি একজন, রেডিওলজিস্ট একজন এবং প্যাথলজিস্ট একজন। চিকিৎসক ও জনবল সংকটের পাশাপাশি রয়েছে নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ ও ইনজেকশনের সংকট। এর মধ্যে হাসপাতালের পাঁচজন নার্সসহ মোট ১০ জন কর্মী করোনায় আক্রন্ত হয়েছেন।

এতসব সীমাবদ্ধতা ও করোনা সংক্রমণের ভয় উপেক্ষা করে রোগীদের সেবা দিচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। হাসপাতালে এসে চিকিৎসক ও নার্সদের আন্তরিক সেবা পেয়ে খুশি রোগী ও রোগীদের স্বজনরা।

রোগী ও রোগীর স্বজনরা বলেন, হাসপাতালে আগের থেকে সেবার মান বৃদ্ধি পেয়েছে। চিকিৎসকরা এখন অনেক আন্তরিকতার সঙ্গে রোগীদের সেবা দেন। করোনা পরিস্থিতিতে মোবাইল ফোনেও অনেক সেবা নিয়েছি। চিকিৎসকরা এভাবে আন্তরিক থাকলে রোগীরা অনেকটা ভালো থাকবেন।

তরিকুল ইসলাম ঠান্ডু নামের ব্যক্তি বলেন, সারা শরীরে ব্যথা ও গ্যাসের সমস্যা থাকায় চারদিন ধরে চাচিকে ভর্তি রেখেছিলাম হাসপাতালে। চিকিৎসকদের আন্তরিক চিকিৎসায় আজ সুস্থ হয়েছেন চাচি। এখন বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।  

হাতভাঙ্গা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকা বাবুল বলেন, কয়েকদিন আগে হাতভাঙ্গা নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলাম। চিকিৎসকরা নিয়মিত আসছেন। ভালো চিকিৎসা পেয়েছি। দু-একদিনের মধ্যে হয়ত রিলিজ পাব। বাগেরহাট সদর হাসপাতাল, ছবি: বাংলানিউজ

বাগেরহাট সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. বেলফার হোসেন বলেন, শত সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমরা রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। হাসপাতালের প্রায় ১০ জন কর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এরপরেও করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি রোগীদের সব ধরনের সেবা দিতে। হাসপাতালে রোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে আগের তুলনায়। চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই মিলে চেষ্টা করছি বাগেরহাটের মানুষকে প্রয়োজনীয় সেবা দিতে।

বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা. কে এম হুমায়ুন কবির বলেন, বাগেরহাট জেলা সদর হাসপাতালটির একশ’ শয্যার প্রশাসনিক অনুমোদন রয়েছে। এর পাশাপাশি আমরা ৫০ শয্যার করোনা হাসপাতাল পরিচালনা করছি। কিন্তু এখানে জনবল রয়েছে মাত্র ৫০ শয্যার। ৫০ শয্যার জনবল নিয়ে আমরা ১৫০ শয্যার সেবা দিচ্ছি। অনুমোদিত জনবলের মধ্যে চিকিৎসক সংকট থাকলেও নার্স মোটামুটি ফুলফিল রয়েছে। কিন্তু পরিচ্ছন্নতা কর্মীর প্রবল সংকট রয়েছে। এর মধ্যে আমাদের একজন চিকিৎসক, দু’জন নার্স, একজন ড্রাইভার, একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মীসহ কয়েকজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তারপরও আমরা চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছি। কোনো রোগী চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন না।

বাংলাদেশ  সময়: ১০৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২, ২০২০
এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।