ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

সংক্রমণ ছড়াচ্ছে বলেই ভারতীয় ধরন পাওয়া যাচ্ছে: ডা. মুশতাক

রেজাউল করিম রাজা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৪ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২১
সংক্রমণ ছড়াচ্ছে বলেই ভারতীয় ধরন পাওয়া যাচ্ছে: ডা. মুশতাক

ঢাকা: সংক্রমণ ছড়াচ্ছে বলেই ভারতীয় ধরন (ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট) পাওয়া যাচ্ছে, সংক্রমণ না ছড়ালে ভারতীয় ধরন পাওয়া যেত না বলে মন্তব্য করেছেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন।  

শুক্রবার (১৮ জুন) সন্ধ্যায় দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বাংলানিউজকে এ কথা বলেন।

ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, করোনা ভাইরাসের ভারতীয় ধরনের সামাজিক সংক্রমণ দেশে অনেক আগেই হয়েছে। করোনা ভাইরাসের ভারতীয় ধরন এখন দেশের সব জায়গাতেই পাওয়া যাচ্ছে। কোনো ভাইরাস যখন পরিবর্তিত হয়, তখন ভাইরাসের সর্বশেষ ধরনটি পাওয়া যায়। আমাদের দেশে প্রথমে ছিল আলফা ভ্যারিয়েন্ট, এরপর পাওয়া গেল বিটা ভ্যারিয়েন্ট। এখন পাওয়া যাচ্ছে ডেল্টা। সুতরাং ডেল্টা ধরনের কারণেই যে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে বিষয়টা তেমন নয়। সংক্রমণ ছড়িয়েছে বলেই ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যাচ্ছে। আমরা যদি সংক্রমণ ছড়াতে না দিতাম তাহলে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যেত না।

তিনি আরও বলেন, ভারতের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট পৃথিবীর ১০০ টার বেশি দেশে পাওয়া গেছে। এসব দেশের সবগুলোতেই তো শনাক্ত এবং মৃত্যুর হার একই রকম নয়। কোনো দেশে সংক্রমণ বেশি হয়েছে আবার কোন দেশে সংক্রমণ অনেক কম হয়েছে। এটা নির্ভর করছে সেই দেশের সংক্রমণ ছাড়ানোর পরিবেশের ওপর। সুতরাং ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের ওপরে দোষ চাপিয়ে আমাদের সবার নিরাপদ থাকার কোনো সুযোগ নেই। আমরা মনে করছি, আমাদের সবকিছুতো ঠিকই ছিল কিন্তু এই ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট এসে সবকিছু গোলমাল করে দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা এমন নয়, সংক্রমণ ছড়াচ্ছে বলেই করোনা ভাইরাসের আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে এবং করোনা ভাইরাসের সর্বশেষ সংক্রমণ হচ্ছে এই ভারতীয় ধরন।  

করোনা ভাইরাসের বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণ প্রসঙ্গে উল্লেখ করে তিনি বলেন, করোনা শনাক্ত হওয়ার রোগীদের ব্যবস্থাপনার দিকে প্রথমেই আমাদের নজর দিতে হবে। শনাক্ত হওয়া প্রতিটা রোগীকে আইসোলেশনের মাধ্যমে চিকিৎসার বিষয়ে ফলোআপ করতে হবে। এসব রোগীর যেন গুরুতর অবস্থায় না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। দুই নম্বর হচ্ছে, আমাদের সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। তিন নম্বর হচ্ছে, টিকা দেওয়া। যদিও এই মুহূর্তে আমরা সবাইকে করোনা ভাইরাসের টিকা দিতে পারছি না। করোনা রোগীর ব্যবস্থাপনাকে আমাদের এক নম্বর গুরুত্ব হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। স্বাস্থ্য বিভাগ এবং প্রশাসনের মাধ্যমে করোনা আক্রান্ত রোগীদের আইসোলেশনে করতে সার্বিক সহায়তা প্রদান করতে হবে।

এই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আরো বলেন, করোনা আক্রান্ত রোগীরা যেন নিশ্চিত হতে পারে আমার করোনা শনাক্ত হয়েছে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে এবং সমাজের পক্ষ থেকে আমাকে ঘরে থাকতে যাবতীয় সহায়তা প্রদান করা হবে। আক্রান্ত রোগীর থাকা-খাওয়া এবং চিকিৎসার কোনো সমস্যা হবে না এটাও নিশ্চিত করতে হবে। এখনো সারাদেশে প্রতিদিন করোনা সংক্রমণের সংখ্যা তিন হাজারের কিছু উপরে রয়েছে, এই পরিমাণ রোগীকে ব্যবস্থাপনা করা খুব কঠিন কিছু নয়, এটা আমরা প্রথম ঢেউয়ের সময়ে মোকাবেলা করেছি।

দেশে গত কয়েকদিন থেকে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আক্রান্তের পাশাপাশি বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। শুক্রবার (১৮ জুন) ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ৫৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদিন নতুন করে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছে ৩ হাজার ৮৮৩ জন। এর আগের দিন বৃহস্পতিবার মারা গিয়েছিল ৬৩ জন এবং তিন হাজার ৮৪০ জন আক্রান্ত হয়েছিল। বুধবার মারা গিয়েছিল ৬০ জন এবং নতুন করে আক্রান্ত হয়েছিল তিন হাজার ৯৫৬ জন। মঙ্গলবার  মৃত্যু হয়েছিল ৫০ জনের এবং নতুন করে শনাক্ত হয়েছিল ৩ হাজার ৩১৯ জন।

বাংলাদেশ সময়: ২১২৮ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২১
আরকেআর/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।