ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

করোনা রোধে আমরা উৎসে হাত দিচ্ছি না: ডা. বে-নজির

রেজাউল করিম রাজা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৪ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০২১
করোনা রোধে আমরা উৎসে হাত দিচ্ছি না: ডা. বে-নজির

ঢাকা: ‘করোনা মহামারি প্রতিরোধে রোগের উৎপত্তিস্থলে আমরা হাত দিচ্ছি না’ বলে উল্লেখ করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ

বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বাংলানিউজকে এ কথা বলেন।

ডা. বে-নজীর আহমেদ বলেন, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে আমরা বিরাট ঝুঁকিতে রয়েছি।

প্রথমত আমরা সময়মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করছি না। করোনা মহামারি একটা যুদ্ধের মতো। যুদ্ধে যদি সময়ক্ষেপণ করা হয় তাহলে শত্রুরা এসে আপনাকে আক্রমণ করে মেরে ফেলবে। যুদ্ধের সময় আপনি যদি সকল প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও গুলি না চালান, তাহলে প্রতিপক্ষ আপনাকে ঠিকই আক্রমণ করে মেরে ফেলবে। বর্তমান পরিস্থিতিও অনেকটাই এমন, আমরা অনেক দেরি করে ফেলছি। এর আগে আমরা চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং সাতক্ষীরায় সময়ক্ষেপণ করেছি। দ্বিতীয়ত আমরা করোনা নিয়ন্ত্রণে করোনার উৎসে হাত দিচ্ছি না। করোনা রোগে ভাইরাসের উৎস হচ্ছে করোনা রোগী। করোনা রোগের ভাইরাস আকাশ থেকেও পড়ে না, অন্য কোথাও থেকেও আসে না। আমরা করোনার উৎস নিয়ন্ত্রণে কিছু করছি না।

তিনি আরও বলেন, যখন কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়, তখন যদি আমরা তাকে আইসোলেটেড করতে পারি, তার থেকে আর যদি সংক্রমণ না ছড়ায়, তাহলে অন্যান্য বিষয় কিছুটা ঢিলেঢালা হলেও যেমন রাস্তায় যদি ভাইরাস না থাকে, তাহলে কেউ মাস্ক না পড়লেও করোনা ভাইরাস আর ছড়াবে না, অন্যরাও আর সংক্রমিত হবে না। অন্যদিকে একজন আক্রান্ত রোগী যদি রাস্তায়, বিভিন্নস্থানে ঘুরে বেড়ায়, চলাফেরা করেন তাহলে অন্যরা যতই  মাস্ক পরুক না কেনো, কোন এক সময় কোন কারণে মাস্ক খুললেই সে আক্রান্ত হবে। তাই করোনা ভাইরাসের উৎস থেকে নিয়ন্ত্রণে আমাদেরকে জোড় দেওয়া প্রয়োজন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এ উপদেষ্টা বলেন, প্রতিদিন দেশে যে পরিমাণ করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়, তাদের তালিকা আমাদের কাছে রয়েছে, তাদের টেলিফোন নম্বরও রয়েছে। তাদেরকে ফোন করে ঠিকানা জেনে নিয়ে যদি সেখানে একটি করোনা প্রতিরোধ টিম তৈরি করে প্রেরণ করা হয়, এই টিমের দায়িত্ব হবে,তাকে আইসোলেটেড করা, তার চিকিৎসা খাবার-দাবারসহ সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া। এটা করলে আক্রান্ত রোগীরাও যথেষ্ট পরিমাণ খুশি হবেন যে সরকার তার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। অন্যদিকে সেই রোগী দ্বারা অন্য কেউ সংক্রমিত না হওয়ার ফলে সংক্রমণও কমে আসবে।

করোনা প্রতিরোধে সমন্বিতভাবে টিম গঠন করার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ধরা যাক ঢাকা শহরে করোনা প্রতিরোধে ৫০০ টিম তৈরি করা যেতে পারে। এই টিম তৈরি করা কঠিন কিছু নয়। এই টিমে একজন ডাক্তার, নার্স, স্বেচ্ছাসেবী, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, রাজনৈতিক কর্মী, বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা থাকতে পারে। যেমন ঢাকা শহরের মোহাম্মদপুরে আজ যদি ৫ জন করোনায় আক্রান্ত হয়, তাহলে মোহাম্মদপুর এলাকায় একটি টিম প্রেরণ করা যেতে পারে। এই টিম করোনা আক্রান্ত রোগীদের বাসায় গিয়ে তাদের সার্বিক খোঁজ-খবর এবং চিকিৎসা প্রদান করবে। আক্রান্ত রোগীর বাসায় আইসোলেশন করার মতো ব্যবস্থা রয়েছে কিনা সেটাও দেখা, যদি না থাকে তাহলে তাকে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করবে। সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাবে। সেই রোগীরা যখন সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে আসবে তখন অন্যরাও উৎসাহিত হবে। এর ফলে কেউ করোনা আক্রান্ত হলে সেটা গোপন করবে না।

তিনি আরও বলেন, করোনার উৎস বন্ধ না করার ফলে উৎস থেকেই করোনা ছড়িয়ে যাচ্ছে। একজন করোনা আক্রান্ত রোগী ঢাকা শহরে চলাফেরা করলে সে কোথায় এবং কতজনকে আক্রান্ত করবে সেটা বের করা অত্যন্ত কঠিন, তার থেকে আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে তাকে যদি আইসোলেটেড করা যায়,তাহলে তার থেকে আর অন্যরা আক্রান্ত হবে না। সুতরাং আমাদেরকে এই মহামারি প্রতিরোধে উৎস স্থল বন্ধ করতে হবে। কিন্তু আমরা সেই জায়গায় কাজ করছি না।

বাংলাদেশ সময়: ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০২১
আরকেআর/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।