ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

করোনা পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের উদ্বেগ বাড়ছে

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৯ ঘণ্টা, জুলাই ৭, ২০২১
করোনা পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের উদ্বেগ বাড়ছে বিধিনিষেধের মধ্যে রাজধানীতে টিসিবির পণ্য কিনতে লোকজনের ভিড়। ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: করোনার বর্তমান পরিস্থিতির উর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় উদ্বেগ বাড়ছে। দ্রুতগতিতে বেড়ে চলা এই পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়াবে তা নিয়ে বিচলিত সরকার।

সরকারের একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, সারা দেশের হাসপতালগুলোতে করোনা আক্রান্ত রোগীর চাপ এবং মৃত্যু বাড়তে থাকার সঙ্গে সঙ্গে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে উদ্বেগও বাড়ছে। প্রতিনিয়ত রোগী বাড়তে থাকায় হাসপতালে বেড ও অক্সিজেনের চাহিদাও বাড়ছে। এটা সরকারের উদ্বেগের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

করোনার নতুন ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট বর্তমানে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ভারতে প্রথম শনাক্ত এই ভ্যারিয়েন্ট অতিসংক্রমণশীল। এ কারণে প্রতিদিন মৃত্যু ও আক্রান্তের নতুন রেকর্ড তৈরি হচ্ছে।  

গত ৪ জুলাই একদিনে ১৫৩ জন প্রাণ হারান। ওই দিন শনাক্ত হয়েছিলো ৮ হাজার ৬৬১ জন। পর দিন ৫ জুলাই মারা যান ১৬৪ জন এবং আক্রান্ত ৯ হাজার ৯৬৪ জন। গত ৬ জুলাই আক্রান্ত হয়েছেন ১১ হাজার ৫২৫ জন। বুধবার (৭ জুলাই) মৃত্যু হয়েছে ২০১ জনের, যা সর্বোচ্চ রেকর্ড। পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

অতি সংক্রমণশীল এই ভ্যারিয়েন্টটি শুধু বাংলাদেশেই নয়, বর্তমানে সারা বিশ্বেই ছড়িয়ে পড়ছে। গত ৩ জুলাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস অ্যাধনম ঘেব্রেইয়েসাস বলেছেন, কমপক্ষে ৯৮টি দেশে ভারতে প্রথম শনাক্ত করোনা ভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়েছে। ভ্যারিয়েন্টটি অত্যন্ত বিপজ্জনক। এটির কাঠামোগত এবং চারিত্রিক রূপান্তর ঘটে চলেছে।  

এদিকে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গত ১ জুলাই থেকে ৭ দিন ধরে মানুষের চলাফেরায় বিধিনিষেধ জারি থাকলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসছে না। যদিও এই বিধিনিষেধের ইতিবাচক প্রভাব পড়তে আরও সময় প্রযোজন। এ কারণে সরকার চলমান বিধিনিষেধ ১৪ জুলাই পর্যন্ত বাড়িয়েছে।  

সরকারের ওই সূত্রগুলো আরও জানায়, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর গত জুন থেকে সংক্রমণ গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে এটি ভয়ঙ্কর পর্যায়ে পৌঁছেছে। এ কারণে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে উদ্বেগ আরও বেড়েছে। কারণ গ্রামের মানুষের মধ্যে শহরের চেয়ে সচেতনতা তুলনামূলক কম।

সোমবার (৫ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা আক্রান্ত রোগীদের অর্ধেকের বেশি গ্রামের। অর্থাৎ ৫০ শতাংশের বেশি রোগী গ্রাম থেকে এসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আমরা গত রোববার (৪ জুলাই) ৪৫টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ও চিকিৎসকদের সঙ্গে দীর্ঘ তিন ঘণ্টার বেশি কথা বলেছি। তারা বলেছেন, রোগীর অধিকাংশের বেশি গ্রামের। রোগীরা হাসপাতালে আসছেন রোগে আক্রান্ত হওয়ার বেশ পরে, যখন পরিস্থিতি অনেক খারাপ হয়ে যাচ্ছে।  

করোনা পরিস্থিতির এই মারাত্মক অবস্থায় চলে যাওয়ার জন্য জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মানুষের মাত্রাতিরিক্ত অসচেতনতামূলক চলাফেরা ও অবহেলাকে দায়ী করছেন। সরকারের নীতিনির্ধারকরাও এটা মনে করেন।  

গত ৩ জুলাই জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত রোজার ঈদে মানুষের গাদাগাদি করে ঢাকার বাইরে যাওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, তখন আমরা নিষেধ করেছিলাম। যার যার অবস্থানে থাকার আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু অনেকেই শুনলো না, ফলাফলটা কী হলো! যদি সবাই কথা শুনতো, ঢাকার বাইরে না যেতো তাহলে হয় তো এই পরিস্থিতি হতো না।

এ বিষয়ে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি তো আসলেই উদ্বেগজনক, প্রতিদিন এতো মানুষ মারা যাচ্ছে। সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে, আসলে এর জন্য তো অসচেতনতা দায়ী। মানুষের সচেতন হওয়া দরকার ছিলো। সবারই একটা দায়িত্ব ছিলো নিজের সুরক্ষা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, উদাসীনতা না দেখানো। সরকারের পক্ষ থেকে যা যা পদক্ষেপ নেওয়ার দরকার নেওয়া হচ্ছে। কঠোর বিধিনিষেধ চলছে, এর একটা ফল আসতে ১০-১৫ দিন সময় লাগবে। তবে সবাইকে আরও সচেতন হতে হবে।  

এ বিষয়ে বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক প্রফেসর এবিএম আব্দুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, বড় সমস্যা যেটা সেটা হচ্ছে জনগণ স্বাস্থবিধির তোয়াক্কা করে না। অনেকেই মনে করে করোনা ভাইরাস বলে কিছু নেই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করা, মাস্ক পড়া ছাড়া এর থেকে রক্ষা পাওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং হেল্থ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. লেলিন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানতে চায় না। স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে বেশি অনিহা রয়েছে। মূল বিষয় হচ্ছে, চলাচলে একজন থেকে আরেকজনকে দূরে রাখা। মানুষ সেভাবে চলতে চায় না। এটা বড় সমস্যা।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৪ ঘণ্টা, জুলাই ০৭, ২০২১
এসকে/এজে 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।