ঢাকা: দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। করোনা প্রতিরোধে দেশব্যাপী চলছে কঠোর লকডাউন।
স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে অন্যতম প্রধান উপায়গুলো হচ্ছে, সরকারের পক্ষ থেকে যত বেশি সম্ভব করোনা টেস্টের ব্যবস্থা করা, আক্রান্ত বা সম্ভাব্য আক্রান্ত ব্যক্তিদের আইসোলেশন (বিচ্ছিন্ন), কোয়ারেন্টিন (সঙ্গনিরোধ) করা যেন তার দ্বারা আর কেউ সংক্রমিত না হতে পারে। এর পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায়ে মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা।
সম্প্রতি করোনা পজিটিভ হয়েছেন মিরপুর ১২ নম্বরের বাসিন্দা ফেরদৌস নামের এক ব্যক্তি। করোনা সনাক্তের পর তিনি আইসোলেশনে রয়েছেন।
আইসোলেশন বা চিকিৎসার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোন দিক নির্দেশনা বা পরামর্শ দেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, টেস্টের পর শুধু আমার পজিটিভ রিপোর্টের এসএমএস এসেছে। এছাড়া আর কেউ আমার সাথে কোনো ধরনের যোগাযোগ করেনি। কেউ কোন দিক নির্দেশনাও দেয়নি। শুধু ফেরদৌস নয়, অধিকাংশ করোনা রোগীর ক্ষেত্রেই একই ঘটনা ঘটছে।
করোনা ভাইরাস টেস্টের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ লক্ষণীয় হচ্ছে না, যারা করোনা আক্রান্ত হয়েছেন বলে মনে করছেন, শুধু তারাই স্বেচ্ছায় করোনা টেস্ট করাচ্ছেন। ফলে অনেকেই সংক্রমিত হয়েও শনাক্তের বাইরে থেকে যাচ্ছেন এবং তারা বুঝে বা না বুঝেই অন্যদের আক্রান্ত করছেন।
অন্যদিকে আবার যারা করোনা পজিটিভ হচ্ছেন, তাদেরকে আইসোলেশনে রাখার বিষয়েও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তরের নেই কোনো উদ্যোগ। এর ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি আইসোলেশনে থাকছেন, না রাস্তাঘাটে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সেই বিষয়েও নেই কোনো তদারকি। সম্প্রতি লকডাউন চলাকালে চেকপোস্টে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাছে করোনা পজিটিভ হয়েও বাসার বাইরে বের হওয়ার কয়েকটি ঘটনা নজরে আসে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যত বেশি টেস্ট করা যায়, ততোই ভালো। করোনা টেস্ট করে আক্রান্ত ব্যক্তিকে যদি দ্রুত অন্যদের থেকে আলাদা করা যায়,তাহলে তার থেকে অন্যরা সংক্রমিত হবে না। বেশি বেশি করোনা টেস্ট এবং আক্রান্ত ব্যক্তিদের আইসোলেশন করার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের যথেষ্ট সামর্থ্য বা যথাযথ পদক্ষেপের অভাব রয়েছে বলেও মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, করোনা ভাইরাসবাহী লোকজনকে আমরা যদি অন্যদের থেকে আলাদা করতে না পারি, তাহলে সেই ভাইরাসবাহীত লোক দ্বারা অন্যের শরীরে সংক্রমণ ছড়াবেই। এ কারণেই আমরা বলছি, প্রচুর সংখ্যক করোনার টেস্ট করা দরকার। প্রতিদিন আমরা যদি অন্তত এক থেকে দেড় লাখ করোনা পরীক্ষা করতে পারতাম, তাহলে বেশিরভাগ ভাইরাসবাহীত লোককে শনাক্ত করা যেত। ভারত, পাকিস্তান শ্রীলঙ্কা এবং নেপাল থেকেও আমাদের করোনা টেস্টের পরিমাণ কম। টেস্ট করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শুধু আফগানিস্তানের ওপরে রয়েছে।
টেস্ট করে রোগী শনাক্ত, রোগীকে আলদা করা, তার সংস্পর্শে কারা এসেছে তাদেরকে চিহ্নিত করা, তাদেরকে কোয়ারেন্টাইন রাখা এবং যাদের চিকিৎসা প্রয়োজন তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, এটাইতো এখন কাজ, এসব না করে শুধু বক্তৃতা দিলেইতো করোনা প্রতিরোধ হবে না বলেও যোগ করেন তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আমরা করোনার উৎসস্থলে হাত দিচ্ছি না। করোনা রোগে ভাইরাসের উৎস হচ্ছে করোনা রোগী। করোনা রোগের ভাইরাস আকাশ থেকেও পড়ে না, অন্য কোথাও থেকেও আসে না। কেউ করোনা আক্রান্ত হলে, আমরা যদি তাকে আইসোলেটেড করতে পারি, তাহলে তার থেকে অন্যরা আর সংক্রমিত হবে না। অন্যদিকে একজন আক্রান্ত রোগী যদি রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় তার দ্বারা অন্যরা আক্রান্ত হবেই।
তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ওপর। তারা মনে করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় লকডাউন দিলেই করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও মনে করছে হাসপাতালে রোগী এলে চিকিৎসা করাই শুধু তাদের দায়িত্ব। কিন্তু বিষয়টাতো এমন নয়। আমাদেরকে সকলে মিলে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। করোনা ভাইরাসের উৎস থেকে করোনা নিয়ন্ত্রণের ওপরে আমাদেরকে জোর দেওয়া প্রয়োজন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৩ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০২১
আরকেআর/এজে