বাগেরহাট: একজনের শরীরের সঙ্গে অন্যজনের শরীরে মেশানো। বুথের বাইরে টিকা গ্রহীতাদের উপচে পড়া ভীড়।
সোমবার (১২ জুলাই) বেলা ১১টায় বাগেরহাট সদর হাসপাতাল সংলগ্ন কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালের সামনে টিকা গ্রহীতাতের এই চিত্র দেখা যায়। তবে স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, যারা আজকের জন্য ম্যাসেজ পেয়েছেন শুধুমাত্র তারা এলে এই ভিড় হতো না। যাদের টিকার ম্যাসেজ দেওয়া হয়নি, তারা আসায় অতিরিক্ত ভিড় হয়েছে।
বাগেরহাট জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, দুই দফায় সিনোফার্মের পাওয়া ২৮ হাজার ৪০০ টিকা রয়েছে বাগেরহাটে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ৮ তারিখ থেকে বাগেরহাট সদর হাসপাতাল সংলগ্ন ৫০ শয্যা করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে পাঁচটি বুথে এই টিকা দেওয়া হচ্ছে। ৮, ১০ এবং ১১ জুলাই এই তিনদিনে নিবন্ধিত ২ হাজার ৬৩০ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে।
টিকা গ্রহীতারা বলছেন, সকাল ৭টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। চার ঘণ্টা দাঁড়িয়েও টিকা দিতে পারিনি। এখানে বসার জায়গা নেই, প্রচুর রোদে দাঁড়িয়ে আমাদের খুব কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। একটু পানির ব্যবস্থা নেই এখানে। আবার স্বাস্থ্যবিধিও মানছে না কেউ।
ষাটগম্বুজ থেকে টিকা নিতে আসা সুজয় দে বাংলানিউজকে বলেন, সকাল ৮টা থেকে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে খুব খারাপ অবস্থা আমাদের। এভাবে দাঁড়িয়ে থেকে অনেকেই অসুস্থ্য হয়ে পড়ছেন।
টিকা নিয়ে বের হওয়া হাজেরা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, সকাল ৮টায় আসতে বললেও এসেছিলাম ৭টায়। তারপরও প্রায় তিন ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে টিকা দিতে পেরেছি। এজন্য সবাইকে ধন্যবাদ।
লাইনে দাঁড়ানো আব্দুল গফফার ও সুব্রত পাল বাংলানিউজকে বলেন, এতো অব্যবস্থাপনা চিন্তা করা যায় না। সবাইকে এক জায়গায় এনে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন না করে, এলাকায় এলাকায় টিকা দেওয়ার দাবি জানান তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিকা নিতে আসা এক ব্যক্তি বলেন, আমরা প্রায় দুই হাজার লোক সকাল থেকে এখানে ভিড় করছি। সবাই মাস্ক পরা থাকলেও, সামাজিক দূরত্ব নেই আমাদের মধ্যে। কেউ কেউ বারবার মাস্ক খুলছেন এবং লাগাচ্ছেন। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি তো রক্ষা হচ্ছেই না, আবার যদি কারও মধ্যে করোনা ভাইরাস সুপ্ত অবস্থায় থাকে সেক্ষেত্রে অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কেউ কেউ বলছে সিরিয়াল ব্রেক করেও লোক প্রবেশ করানো হচ্ছে টিকা দান বুথে। সেখানো মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি।
বাগেরহাট রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির যুব প্রধান শরিফুল ইসলাম জুয়েল বাংলানিউজকে বলেন, ৮ জুলাই থেকেই আমাদের ৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক এখানে কাজ করছে। কিন্তু টিকা নিতে আসা লোকের চাপ এতো বেশি যে আমরা তাদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছি। টিকা গ্রহীতারা বসে অপেক্ষা করবে এমন কোনো জায়গা ছিল না। আমরা বসার জন্য একটি প্যান্ডেলও করেছি। লোক এতো বেশি যে সবাইকে বসতেও দেওয়া যাচ্ছে না। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি সকলকে স্বাভাবিকভাবে টিকা দিয়ে বাড়ি ফেরাতে।
বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা. কে এম হুমায়ুন কবির বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিদিন ৪০০ মানুষকে টিকা দেওয়ার সক্ষমতা আছে। আমরা ৪০০ মানুষকেই ম্যাসেজ দিয়েছি। কিন্তু ম্যাসেজ না পেয়েও কিছু মানুষ টিকা কার্ড নিয়ে হাসপাতালে এসেছে। এর ফলে এই ভিড়ের সৃষ্টি হয়েছে। আমরা তাদের না আসতে অনুৎসাহিত করছি। মাইকিং করে তাদের না আসার জন্য বলে দেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, যারা রেজিস্ট্রেশন করেছেন তারা সবাই টিকা পাবেন। তাড়াহুড়ো করার কিছু নেই। আমাদের পর্যাপ্ত টিকার মজুত রয়েছে। এই টিকা দেওয়া শেষ হলে আমাদের আরও টিকা বরাদ্দ দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৩ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০২১
এনটি