যশোর: ২০১৫ সালে যশোরের কেশবপুর উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের মধ্যে দুটি ইউনিয়ন ভেঙে আরও দুটি নতুন ইউনিয়ন গঠন করে গেজেট জারি হয়। সে অনুযায়ী গত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ১১টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোটের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়।
সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার উন্নয়ন বরাদ্দ কিংবা ভর্তুকি সহযোগিতার ক্ষেত্রে ১১টি ইউনিয়নের নামেই হয়।
তবে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সব কার্যক্রমে নব গঠিত দুটি ইউনিয়ন বঞ্চিত হয়। এক্ষেত্রে স্থানীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা সমন্বয় করে অন্য ইউনিয়নের সঙ্গে নব গঠিত ইউনিয়ন দুটিকে যুক্ত করে সেবা দিয়ে থাকেন।
সম্প্রতি করোনার টিকা রেজিস্ট্রেশন করতে গিয়ে সুরক্ষা অ্যাপে নব গঠিত সাতবাড়িয়া ও হাসানপুর ইউনিয়নের নাম পাওয়া যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে নব গঠিত ওই দুই ইউনিয়নের জনগণ করোনা টিকার রেজিস্ট্রেশন করতে পারছেন না। যদিও, কেউ কেউ মিথ্যা তথ্য দিয়ে পুরাতন ইউনিয়নের নাম দিচ্ছেন। এ মিথ্যার আশ্রয় কয়জনেই বা নেন।
সর্বশেষ সরকার সারাদেশের প্রত্যেক ইউনিয়ন পরিষদে গণটিকা কার্যক্রম চালালেও নব গঠিত দুটি ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে টিকা কার্যক্রম বন্ধ ছিল। তবে, পাশ্ববর্তী ইউনিয়নে টিকা বুথে বরাদ্দ টিকার অর্ধেকটা নব গঠিত ইউনিয়নের বাসিন্দারা পেয়েছেন।
সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের কোমরপোল গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল আহাদ বাংলানিউজকে বলেন, টিকা দেওয়ার ইচ্ছা নিয়েই রেজিস্ট্রেশন করেছিলাম। তবে, শুক্রবার (৬ আগস্ট) জানতে পারলাম আমাদের ইউনিয়নে টিকা কার্যক্রম হবে না। টিকা দিতে হলে পাশ্ববর্তী ত্রিমোহিনী ইউনিয়নে যেতে হবে। সেখানের মেম্বার ও চেয়ারম্যান অপরিচিত হওয়ায় টিকা নিতে যাইনি।
স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন দুটি ইউনিয়নে টিকা কার্যক্রম না চললেও পাশ্ববর্তী ইউনিয়ন থেকে তাদের অর্ধেক টিকা ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে যশোরের কেশবপুর উপজেলার এক নম্বর ত্রিমোহিনী ইউনিয়ন ভেঙে ১০ নম্বর সাতবাড়িয়া ইউনিয়ন করা হয়েছে। নতুন এ ইউনিয়নের গ্রামগুলো হলো: বেগমপুর, বাওড় মর্শিনা, সাতবাড়িয়া উত্তর, সাতবাড়িয়া দক্ষিণ, কড়িয়াখালী, কোমরপোল, জাহানপুর, চালিতাবাড়িয়া, দত্তনগর, ভালুকঘর উত্তর ও ভালুকঘর দক্ষিণ।
এছাড়া কেশবপুর উপজেলার চার নম্বর বিদ্যানন্দকাঠি ইউনিয়ন ভেঙে ১১ নম্বর হাসানপুর ইউনিয়ন করা হয়। এ ইউনিয়নের গ্রামগুলো হলো: বুড়িহাটি উত্তর, বুড়িহাটি দক্ষিণ, কাবিলপুর, আওয়ালগাতী, হাসানপুর, কাকিলাখালী, টিটাবাজিতপুর, নেহালপুর, রেজাকাটি, মহাদেবপুর, বগা, মোমিনপুর ও সফসেকনপুর।
নবগঠিত সাতবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের কম্পিউটার সেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা অসীম কুমার বাংলানিউজকে বলেন, সারাদেশের সব বিভাগের সেবা পাচ্ছি কোথাও সমস্যা নেই। শুধুমাত্র স্বাস্থ্য বিভাগেই এ সমস্যা।
তিনি বলেন, যেকোনো সরকারি অফিসের ওয়েবসাইটে ঢুকে সাতবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের নাম পাওয়া যায়, কিন্তু করোনা টিকা রেজিস্ট্রেশনে সুরক্ষা অ্যাপে সেটা হচ্ছে না।
এদিকে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের একটি সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলার ৯১টি ইউনিয়ন পরিষদে তিনটি করে বুথে ৬০০ করে টিকা দেওয়া হয়েছে। তবে, নব গঠিত দুটি ইউনিয়নের জনগণকে পাশ্ববর্তী ইউনিয়ন থেকে অর্ধেক টিকা দেওয়া হলেও তাদের নামে কোনো টিকার বরাদ্দ হয়নি।
যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন বাংলানিউজকে বলেন, ‘নব গঠিত দুটি ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে টিকা কার্যক্রম না চালানো হলেও পাশ্ববর্তী ইউনিয়ন থেকে তারা টিকা পেয়েছেন।
সরকারি সব দপ্তরে নব গঠিত ইউনিয়ন দুটির মানুষ সেবা পেলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কেন নিজেদের প্রাপ্য পাচ্ছেন না এমন প্রশ্নের জবারে সিভিল সার্জন শাহীন বলেন, আসলেই এটা দুঃখজনক।
তিনি বলেন, এর আগে আমি (সিভিল সার্জন) কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা পদে কর্মরত থাকাকালে ওই নব গঠিত দুটি ইউনিয়নের সমস্যা নিরসনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে লিখিত জানিয়েছি। এটা হয়তো তাদের কাছে আপডেট হয়নি। তবে, বিষয়টি সমাধানে আমি আবারও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জানাবো।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০৭, ২০২১
ইউজি/আরআইএস