ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

তেল-চর্বিযুক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবারে ঝুঁকির মুখে জনস্বাস্থ্য

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪২ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০২১
তেল-চর্বিযুক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবারে ঝুঁকির মুখে জনস্বাস্থ্য

ঢাকা: অতিরিক্ত ক্ষতিকর রাসায়নিকের ব্যবহার, কৃত্রিম ও অতিরিক্ত তেল-চর্বিযুক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবারের ওপর নির্ভরতা জনস্বাস্থ্যকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে। এসব অস্বাস্থ্যকর খাবার মানবদেহে সৃষ্টি করছে দীর্ঘস্থায়ী, জটিল ও ভয়াবহ সব অসংক্রামক রোগ।

দেশে মোট মৃত্যুর ৬৭ শতাংশের কারণ অসংক্রামক রোগ। এসব রোগের চিকিৎসা করাতে গিয়ে ব্যক্তির পাশাপাশি রাষ্ট্রের ব্যয়ও ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ তথা জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণে স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ খাদ্যের যোগান নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।

মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) বিকেলে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের আয়োজনে ‘স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চিতে করণীয়’ শীর্ষক অলোচনা সভায় বক্তারা এ অভিমত ভ্যক্ত করেন।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর পর্যাপ্ত পরিমাণে শাকসবজি গ্রহণ করানো সম্ভব হলে ২.৭ মিলিয়ন মানুষের জীবন রক্ষা করা সম্ভব। স্বাধীনতার ৫০ বছরে অন্তত ১৩টি ক্ষেত্রে বিশ্বের দরবারে গৌরবোজ্জ্বল ও ঈর্ষণীয় অবস্থান তৈরি করেছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও), বাংলাদেশ ব্যাংক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ (আইসিটি) থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য বিশ্লেষণ করে ১০টি কৃষি খাতে সমগ্র বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। মৌসুমি ফল উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের তালিকায় নাম লেখানো বাংলাদেশে এখন ৭২ প্রজাতির ফলের চাষ হচ্ছে। এসব ফল ও সবজি আমাদের পুষ্টির চাহিদা মিটিয়ে দেশীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। নিরাপদ খাদ্যের যোগান নিশ্চিতে কৃষকদের ভর্তুকি প্রদান এবং নগরে শাকসবজি উৎপাদন বৃদ্ধিতে নগরকৃষি নীতিমালা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন প্রয়োজন। পাশাপাশি ঢাকাসহ বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় কৃষকের বাজার গড়ে তোলার মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্যের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা যেতে পারে।

ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের প্রকল্প কর্মকর্তা নাঈমা আকতারের সঞ্চালনায় সভায় সভাপতিত্ব করেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী। সম্মানিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (বাস্তবায়ন) এস. এম. সোহরাব উদ্দিন, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সাসটেইনেবেল এগ্রকালচার স্পেশালিস্ট মো. জাহাঙ্গীর আলম, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের বিভাগীয় প্রধান (রিসার্চ এন্ড এপিডেমিওলোজি) ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী এবং হেলথব্রিজ ফাউন্ডেশন অব কানাডার আঞ্চলিক পরিচালক দেবরা ইফরইমসন।

দেবরা ইফরইমসন বলেন, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কৃষকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমরা অনেকেই তাদের যথাযথ সম্মান দেই না। কৃষকদের ব্যাপারে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন প্রয়োজন। পাশাপাশি কৃষকরা যাতে তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পায় এই বিষয়টিও নিশ্চিত করা আবশ্যক। প্রয়োজনে তাদের নিরাপদ সবজি উৎপাদনে উৎসাহী করে তুলতে ভর্তুকি প্রদান করা যেতে পারে।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিশ্বে বাংলাদেশ সবজি উৎপাদনে তৃতীয় হলেও অনেক সময়ে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন সম্ভব হয় না। নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের জন্য কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে আনার লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অধীনে একটি প্রকল্প গৃহীত হয়েছে এবং এর আওতায় নিরাপদ সবজি চাষে কৃষকদের দক্ষ করে তোলা হচ্ছে। পাশাপাশি নিজ বসতভিটায় পারিবারিকভাবে নিরাপদ শাক সবজি উৎপাদন করা হলে নিরাপদ ও পুষ্টি সম্পন্ন খাদ্য যেমন সহজলভ্য হবে সেই সাথে অর্থনৈতিকভাবেও লাভবান হওয়া যাবে।

ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, ব্যস্ত জীবনে প্যাকেটজাত খাদ্যের চাহিদা নিয়ন্ত্রন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অসংক্রমক রোগের প্রাদুর্ভাব কমিয়ে আনতে হলে শাক সবজির উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি মানুষকে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাসের বিষয়ে সচেতন করে তুলতে হবে। এ ক্ষেত্রে মিডিয়ার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি আমাদের যে আইন ও নীতিমালাগুলো আছে সেগুলোর প্রয়োগ নিশ্চিতকরণ ও সংশ্লিষ্ট সকল বিভিাগের মাঝে সমন্বয় নিশ্চিত করা আবশ্যক।

এস এম সোহরাব উদ্দিন বলেন, কৃষকের বাজার নিরাপদ খাদ্যের যোগান নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে সক্ষম। এজন্য প্রত্যেকটি এলাকায় এ ধরনের বাজার ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আমরা কাজ করছি যাতে কৃষক ও ভোক্তা উভয়ই লাভবান হতে পারেন। পাশাপাশি কৃষকদের সঠিক সময় ও গ্রহণযোগ্য মাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগে কৃষককে উদ্বুদ্ধ করা, বছরব্যাপী সবজি উৎপাদন সম্পর্কে কৃষককে পরামর্শ প্রদান, অর্থ ও সহায়ক উপকরণ প্রদানসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে গৃহীত হয়েছে।

গাউস পিয়ারী বলেন, বাজার ব্যবস্থা এমন হওয়া প্রয়োজন যেন কৃষকরা ভোক্তাদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন। কৃষক বাজার শুধু শহরকেন্দ্রিক না করে গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত করতে হবে। করোনা মহামারির সময়ে স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ ও রোগ গ্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তা আমরা উপলব্ধি করেছি। রোগ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের বিকল্প নেই। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস গড়ে তোলার পাশাপাশি এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতেও নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে।

অনুষ্ঠানে ইপসা, ইলমা, বি-স্ক্যান, আলিফ আইডিয়াল স্কুল, টিসিআরসি, ডাস, ডিডিপি, অগ্রদূত, প্রজন্ম, শেয়ার, আলো, পিজিএস, প্রত্যাশা সামজিক উন্নয়ন সংস্থা মৌমাছি, সিয়াম, পদ্মা, আরডিএসএর কর্মকার্তাবৃন্দ আরও উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪১ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০২১
এমআইএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।