ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

এক ডোজ টিকা নিতে খরচ ১৫শ’ টাকা!

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২১
এক ডোজ টিকা নিতে খরচ ১৫শ’ টাকা! ছবি: বাংলানিউজ

হাতিয়া (নোয়াখালী) থেকে: নোয়াখালীর মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে লাগোয়া দ্বীপ হাতিয়ার একটি ইউনিয়ন চানন্দী। প্রশাসনিক দপ্তর দ্বীপে হওয়ায় নৌকা করে এসে কাজ সারতে হয় ওই ইউনিয়নের বাসিন্দাদের।

করোনা টিকা নিতে ওই দ্বীপের মানুষদের পোহাতে হচ্ছে অনেক ঝক্কি-ঝামেলা, খরচ করতে হচ্ছে অর্থ।  

চানন্দীর বাসিন্দা নাজিম উদ্দিন। বৃহস্পতিবার (০৯ সেপ্টেম্বর) হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিকা বুথে গিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে।  
 
তিনি জানালেন, এক ডোজ করোনা টিকা নিতে তার খরচ পড়ছে ১৫শ’ টাকা। দুই ডোজ মিলিয়ে খরচ পড়বে ৩ হাজার টাকা।

খরচের হিসাব তিনি বুঝিয়েও দিলেন। জানালেন, চানন্দীতে তার বাড়ি থেকে চেয়ারম্যান ঘাটে আসতে মোটরসাইকেল ভাড়া দিতে হয়েছে ২শ’ টাকা। সেখান থেকে মেঘনা নদী পার হয়ে দ্বীপে আসতে স্পিডবোট ভাড়া দিতে হয়েছে ৪শ’ টাকা। এরপর মোটরসাইকেলে হাতিয়ার মূল সদর উছখালীর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসতে মোটরসাইকেলে আরও ১৫০ টাকা। মোট ৭৫০ টাকা। ফিরতেও তার একই খরচ লাগবে। এছাড়া টিকা নিতে আসা আর যাওয়ার মধ্যেই তার পুরো দিন শেষ হয়ে যাবে বলেও জানান।  

তার হিসাব মতে করোনা টিকার দুই ডোজ নিতে দ্বীপের একজন বাসিন্দার খরচ পড়ে যাচ্ছে ৩ হাজার টাকা।  

এই খরচের কারণেই দ্বীপের অসহায় ও গরীব শ্রেণীর বড় অংশ টিকাবঞ্চিত থাকছে। কারণ ৩ হাজার টাকা খরচ করে টিকা নেওয়ার সামর্থ অনেকেরই নেই।  

ইউনিয়ন পর্যায়ে বুথ স্থাপনের দাবি:
দ্বীপের বাসিন্দারা দাবি করেছেন, চানন্দীর মতো দ্বীপ এলাকায় ইউনিয়ন পর্যায়ে যেন টিকার বুথ স্থাপন করা হয়। তাহলে গরিব মানুষের অর্থ খরচ হবে না, ভোগান্তিও পোহাতে হবে না।

নাজিম উদ্দিন নামের ওই বাসিন্দা বলেন, গণটিকার কার্যক্রমেও দ্বীপের মানুষ খুব একটা সুফল পাচ্ছে না। তিনি তার ইউনিয়নের কথা উল্লেখ করে বলেন, চানন্দীতে ৪০ হাজার মানুষের বসবাস। সেখানে গণটিকার আওতায় আনা হয়েছে মাত্র ৬ হাজার মানুষকে। দ্বীপে যাতায়াত ব্যয়বহুল। শুধু উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে টিকার বুথ না রেখে যদি ইউনিয়ন পর্যায়ে বুথ স্থাপন করা যায়, তাহলে এখানকার মানুষের দুর্ভোগ কমবে।  

নিঝুম দ্বীপ থেকে টিকা নিতে আসা কবির আহম্মদ বলেন, টিকার প্রথম ডোজ নিতে আসা-যাওয়ায় খরচ ৭শ’ টাকা। এভাবে খরচ করে কতজন টিকা নিতে পারবে? দ্বীপে গরীব মানুষের সংখ্যা বেশি।  

মাস্কে অনীহা, টিকায় আগ্রহ:
দ্বীপের লঞ্চঘাট, ট্রলার ঘাট, রাস্তা কিংবা বাজার কোথাও মানুষের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। তবে টিকা নেওয়ার জন্য মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। ভিড় সামলাতে হাসপাতালের কর্মীদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।  

হাসপাতালের মেডিক্যাল টেকনোলোজিস্ট মো. মাইন উদ্দিন বলেন, একদিনে চারটি বুথে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৫৩০ জন মানুষকে করোনার টিকা দেওয়া হয়েছে। দ্বীপের মানুষ টিকা নিতে আগ্রহী। হাতিয়া পৌরসভা ও এর আশের লোকজন টিকা নিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু খরচ ও যাতায়াতের কথা চিন্তা করে চরের এবং দূরের ইউনিয়নের লোকজন টিকা নিতে আসছে না।  

হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিকা কার্যক্রমের ইনচার্জ জাফরুল আমিন জানান, এ উপজেলায় অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড টিকার ১ম ডোজ নিয়েছেন ৯ হাজার ৩৭৮ জন। আর ২য় ডোজ নিয়েছেন ৭ হাজার ২২৬ জন।

গণটিকা কার্যক্রমের ৩৩টি বুথে সিনোফার্মার ১ম ডোজ টিকা নিয়েছেন ১৯ হাজার ২৯৯ জন, ২য় ডোজ নিয়েছেন ১০ হাজার ৫৮১ জন।  

দ্বীপে করোনার সংক্রমণ কম ছিলো না:
মূল ভূখণ্ড থেকে পৃথক দ্বীপ হলেও করোনা আঘাত হেনেছিল চানন্দীতে। করোনায় প্রাণও হারিয়েছেন অনেকেই।  

হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ও উপজেলা করোনা ফোকাল পার্সন ডা. মাহতাব উদ্দিন জানান, এখন পর্যন্ত এ উপজেলায় করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন ০৪ জন, আক্রান্ত হয়েছেন ১৯২ জন। তবে সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণের কোনো ঘটনা পাওয়া যায়নি।

তবে স্থানীয়রা বলছেন, উপজেলা স্বাস্থ্যবিভাগ যে তথ্য দিয়েছে, তাতে করোনার পুরো পরিসংখ্যান আসেনি। করোনা আক্রান্ত হয়ে নোয়াখালী জেলা শহর ও ঢাকায় চিকিৎসা করাতে গিয়েও অনেকে মারা গেছেন। তাদের হিসfব এখানে আসেনি। এছাড়া করোনা উপসর্গ নিয়ে দ্বীপে অর্ধ শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২১
এসএইচডি/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।