ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

করোনা প্রতিরোধ প্রকল্পে বছরে ব্যয় ৬ হাজার টাকা!

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২১
করোনা প্রতিরোধ প্রকল্পে বছরে ব্যয় ৬ হাজার টাকা!

ঢাকা: মহামারি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণ ও সরকারি অর্থায়নে এক বছর আগে একটি প্রকল্প পাস করে সরকার। ঋণের টাকা কিছুটা ব্যয় হলেও সরকারি অংশের ব্যয় হয়েছে মাত্র ৬ হাজার টাকা।

এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ কয়েকটি প্রকল্প হাতে নেয়। কিন্তু অদক্ষতার কারণে বেশির ভাগ প্রকল্পের অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট হতে পারেনি পরিকল্পনা কমিশন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের ২ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ‘কোভিড-১৯ রেসপন্স ইমারজেন্সি অ্যাসিস্ট্যান্স’ প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়। বর্তমানে প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল সময় এক বছরের বেশি অতিবাহিত হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে সংশোধিত এডিপিতে এই প্রকল্পের বরাদ্দ ছিল ৬৭৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। কিন্তু বরাদ্দের পরিমাণ এতটা থাকলেও, বাস্তবায়নকারী সংস্থা গত অর্থবছরে ব্যয় করতে পেরেছে মাত্র ৬৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রকল্প ঋণ থেকে ৬৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা এবং সরকারি তহবিল থেকে মাত্র ৬ হাজার টাকা ব্যয় করতে পেরেছে। প্রকল্পের অগ্রগতির হার মোট প্রাক্কলিত ব্যয়ের তুলনায় মাত্র ৪.৬৯ শতাংশ।

গত ১৯ আগস্ট স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সভা করে। সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) মো. হেলাল উদ্দিন। সভায় প্রকল্পটির অগ্রগতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়।

সভার কার্যবিবরণীতে দেখা গেছে, পিআইসি সভায় প্রকল্প পরিচালক জানান, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বাংলাদেশের সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ, চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নতিকরণ এবং জরুরি প্রস্তুতি ব্যবস্থা শক্তিশালী করার লক্ষ্যে এই প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের মাধ্যমে কোভিড-১৯ মহামারির সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ১ হাজার ৩৬৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয় হচ্ছে। এর মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) দেবে ৮৪৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা এবং সরকারি তহবিল থেকে ৫১৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।

সভায় পরিকল্পনা কমিশনের প্রতিনিধি জানান, বার্ষিক কর্মপরিকল্পনায় অনুমোদিত প্রকল্পের সংস্থান এবং অব্যয়িত ব্যালেন্সের অতিরিক্ত কোনো কার্যক্রম নেওয়া বা অর্থ ব্যয়ের প্রস্তাব করা যাবে না। আইএমইডির প্রতিনিধি বার্ষিক কর্মপরিকল্পনায় উল্লেখিত কম্পোনেন্টগুলো এ অর্থবছরে বাস্তবায়ন সম্ভব কিনা সে বিষয়ে জানতে চান।

আইএমইডি জানায়, প্রকল্পের কার্যক্রম বাস্তবায়নের প্রস্তাব বাস্তবভিত্তিক হতে হবে, তা না হলে অর্থবছর শেষে এডিপি বরাদ্দের অর্থ অব্যয়িত থাকার সম্ভাবনা দেখা দেবে। এছাড়া প্রকল্পের ক্রয় কার্যক্রমের গতিশীলতা এবং প্রান্তিক পর্যায়ের সরবরাহের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।

সভায় প্রকল্প পরিচালক বলেন, এ প্রকল্পের কিছু কেনাকাটা সিএমএসডির মাধ্যমে করা হয়। গত অর্থবছরে সিএমএসডির মাধ্যমে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে (ডিপিএম) করোনার পরীক্ষার কিট ও পিপিই সামগ্রী ক্রয়ের যে উদ্দ্যোগ নেওয়া হয়েছিল সেগুলোর অগ্রগতি জানতে চান সভার সভাপতি অতিরিক্ত সচিব মো. হেলাল উদ্দিন।

জবাবে প্রকল্প পরিচালক জানান, সিএমএসডির মোট ৯টি প্যাকেজের মধ্যে ২টির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ৬টি প্যাকেজের কার্যাদেশ শিগগিরই দেওয়া হবে। বাকি ১টি প্যাকেজের মাধ্যমে ৩০টি অক্সিজেন জেনারেটর ক্রয় প্রক্রিয়াধীন আছে।

প্রকল্প পরিচালক আরও জানান, প্রকল্পের আওতায় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জন্য ২৫টি পিসিআর মেশিন কেনা হয়েছে। সেগুলো স্থাপনের জন্য সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে। তবে কয়েক সেফটি কেবিনেট এখনো এসে পৌঁছায়নি। এছাড়া ৮টি এমসিএইচ-এ ১০ শয্যার আইসিইউ এবং ৫০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার স্থাপনের পূর্তকাজ, ৭টি স্থলবন্দরে মেডিক্যাল স্ক্রিনিং সেন্টার নির্মাণের অ্যাসেসমেন্ট করে নকশা প্রণয়নসহ, টেস্টিং কিট এবং পিপিই সামগ্রী ক্রয় ইত্যাদি কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

অতিরিক্ত সচিব গত অর্থবছরে গৃহীত ক্রয় কার্যক্রমসমূহকে বর্তমান অর্থবছরের কর্মপরিকল্পনায় প্রদর্শনের গুরুত্বারোপ করেন।

প্রকল্প পরিচালক উল্লেখ করেন, ৩০টি জেলা হাসপাতালের জন্য সম্পূর্ণ জিওবি অর্থায়নে পিসিআর মেশিন ক্রয়ে সিএমএসডি অপারগ বলে মৌখিকভাবে জানিয়েছে।

সভায় প্রকল্পের পিআইইউ কর্তৃক পিসিআর মেশিন ক্রয়ের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এছাড়াও করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় সেমিনার, ওয়ার্কসপ এবং প্রশিক্ষণের সংখ্যা ও ব্যাচ যুক্তিযুক্ত পর্যায়ে কমানোর পক্ষে সবাই মত দেন।

প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভায় যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়:
১. সেমিনার, ওয়ার্কশপ ও প্রশিক্ষণ খাতের বরাদ্দ যুক্তিযুক্ত পর্যায়ে গ্রাস করতে হবে।
২. প্রকল্পের আওতায় করোনা প্রতিরোধে জনগণকে সম্পৃক্ত করে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য রি-ইউজেবল মাক্স ক্যাম্পেইনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. ৩০টি জেলা হাসপাতালের জন্য পিসি-আর মেশিন ক্রয় কার্যক্রম সিএমএসডির পরিবর্তে পিআইইউ কর্তৃক সম্পন্ন করতে হবে।
৪. প্রকল্প পরিচালক অথবা সিএমএসডি থেকে ওষুধ ও যন্ত্রপাতি সরবরাহের পর তা সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের রেজিস্টারে নিবন্ধনের বিষয়টি নিয়মিত নিরীক্ষা এবং সামগ্রিক কার্যক্রমের মনিটরিং, রির্পোটিং জোরদার করতে হবে।
৫. গত অর্থবছরে গৃহীত ও বর্তমান অর্থবছরে চলমান কাজসমূহ বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা প্রতিফলন করতে হবে।
৬. প্রকল্পের সংশোধিত ডিপিপি আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে দাখিল করতে হবে।
৭. আইসিইউ ও আইসোলেশন সেন্টার স্থাপনসহ অন্যান্য পূর্তকাজ গণপূর্ত অধিদপ্তর কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে।
৮. ইতোমধ্যে সংগৃহীত ২৫টি পিসি-আর ল্যাবের যন্ত্রপাতি আগামী এক মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে স্থাপনের কাজ সম্পন্ন করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২১
এমআইএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।