ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

কালাইয়ে ঠেকানো যাচ্ছে না কিডনি বেচাকেনা

শাহিদুল ইসলাম সবুজ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০২১
কালাইয়ে ঠেকানো যাচ্ছে না কিডনি বেচাকেনা ২০১৮ সালে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া কিডনি বিক্রেতা ও দালাল

জয়পুরহাট: জয়পুরহাটে আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছেন কিডনি বেচাকেনা চক্রের দালালরা। এসব চক্রের খপ্পরে পড়ে অনেকেই আজ বাড়িছাড়া।

তবে স্থানীয় প্রশাসনের দাবি, জনসচেতনতা বাড়াতে কাজ করছেন উপজেলা প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা। আর জয়পুরহাটের পুলিশ সুপার জানালেন, কিডনি বেচাকেনা বন্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে পুলিশ।  

অনুসন্ধানে জানা গেছে, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আইন অনুযায়ী, কিডনি বিক্রি নিষিদ্ধ হলেও জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে স্থানীয় দালাল চক্রের খপ্পরে পরে ২০১১ সালে শুরু হয় কিডনি বিক্রির প্রবণতা। সেই সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে কিডনি বিক্রির খবর প্রকাশ পেলে নড়েচড়ে বসে স্থানীয় প্রশাসন। এরপর দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলেও আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছেন কিডনি বেচাকেনা চক্রের দালালরা। অভাব দূর করতে কিডনি বিক্রি করে দেওয়া অনেকেই আজ বাড়িছাড়া।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালাই উপজেলার জয়পুর বহুতী গ্রামের এক নারী বলেন, অভাবের তাড়নায় ছেলে-মেয়ে নিয়ে সুখে দিন কাটাবো ভেবে ঢাকায় আমার একটি কিডনি বিক্রি করে দেই। প্রথমে পেয়েছি তিন লাখ টাকা, পরে বাড়ি করার সময় পেয়েছি আরো দুই লাখ টাকা। কিন্তু সাময়িকভাবে অভাব দূর হলেও বিভিন্ন অসুখ লেগেই আছে আমার। এতে করে আর কাজকাম করার শক্তি পাই না।

কালাই উপজেলার উদয়পুর ই্উনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের একাধিক বাসিন্দা কিডনি বিক্রি করে ঢাকায় আত্মগোপনে রয়েছেন। তাদের ধারণা, কিডনি বিক্রির খবরে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন তাদের গ্রেফতার করবে। শুধু দুর্গাপুরের বাসিন্দারাই নন, এমন ঘটনা অন্যান্য গ্রামেও ঘটছে। দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এভাবে বিক্রি করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এজন্য দালালদের খপ্পরে পড়ে অনেক কিডনি দাতাই গ্রেফতার এড়াতে এখন নিজ গ্রাম ছেড়ে রাজধানীতে বসবাস করছেন।  

জানা গেছে, ২০১১ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত কালাই উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ২৩ গ্রামের মানুষ কিডনি বেচাকেনার সঙ্গে জড়িত থাকলেও সম্প্রতি আরো আটটি গ্রামের মানুষ কিডনি বিক্রির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন।  

এ বিষয়য়ে কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. মো. শাহীন রেজা বলেন, কিডনি দাতারা মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আমাদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসছেন। আমরা তাদের চিকিৎসা এবং ওষুধ দেওয়ার পাশাপাশি কিডনি বিক্রির কুফল সম্পর্কে তাদের বোঝাচ্ছি।

কালাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিনফুজুর রহমান মিলন জানান, ২০১১ সালে প্রথম কিডনি বিক্রির সংবাদ গণমাধ্যমে এলে স্থানীয় প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মী ও জনপ্রতিনিধিরা নড়েচড়ে বসায় কিছুদিন তা বন্ধ ছিল। কিন্তু আবার কিডনি দাতা এবং এ চক্রের সদস্যরা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছেন। তাদের রুখতে সমন্বিত পরিকল্পনা দরকার।

এ বিষয়ে কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) টুকটুক তালুকদার বলেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে জনসচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন গ্রামে বৈঠক এবং আলোচনা সভা করা হচ্ছে। এছাড়া এসব রোধ করতে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিদের সজাগ থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে জয়পুরহাটের পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভুঞা জানান, কিডনি বেচাকেনা বন্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। এরই মধ্যে বিভিন্ন গ্রামে অভিযান চালানো হয়েছে। সেই সঙ্গে গোয়েন্দা নজরদারী বাড়ানো হয়েছে, কখন কে ঢাকায় কিংবা পার্শ্ববর্তী ভারতে যাচ্ছেন।

বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী ২০১১ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার ২৩ গ্রামের তিন শতাধিক মানুষ তাদের একটি করে কিডনি বিক্রি করে দেন। আর সম্প্রতি ২০২০ সাল থেকে ২০২১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত নতুন আরো আটটি গ্রামের অর্ধ শতাধিক অভাবী মানুষ দালালদের খপ্পরে পড়ে তাদের কিডনি বিক্রি করেছেন। আর ভুগছেন শারীরিক না না জটিলতায়।  

বাংলাদেশ সময়: ১২০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০২১
এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।