ঢাকা: দৈনিক কালের কণ্ঠ এবং ইউএসএআইডির যৌথ উদ্যোগে ‘অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স সমস্যা প্রতিকার এবং করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেড কার্যালয়ে এ গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
কালের কণ্ঠের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক শাহেদ মুহাম্মদ আলীর সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল এবং করোনা বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা মো. শহিদুল্লাহ। সূচনা বক্তব্য দেন ইউএসএআইডির কান্ট্রি প্রজেক্ট ডিরেক্টর ডা. জেবুননেছা।
মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক ডা মো. শহিদুল্লাহ বলেন, জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই আমরা সবাই শুনেছি অসুখ হলে অ্যান্টিবায়োটিক লাগে। এটা যেমন সত্য, তেমনি এই অ্যান্টিবায়োটিক আবার কখনও আমাদের মৃত্যুর কারণ হতে পারে, মৃত্যুঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। সবার সমন্বিত প্রচেষ্টা এবং সচেতনতার মাধ্যমে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স প্রতিকার করা সম্ভব।
আলোচনায় অংশ নেন, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহাবুবুর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক এম এ ফয়েজ, বাংলাদেশ ফার্মাকোলজিক্যাল সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান, বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম এ মোবিন, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইন্সটিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক ড. নাথু রাম সরকার, আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. জাকির হোসেন হাবিব, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি ডা. বারদান জাং রানা, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নিতিশ দেবনাথ প্রমুখ।
গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স সমস্যা প্রতিকার এবং করণীয় বিষয়ে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন। বক্তারা বলেন, নিবন্ধিত ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি, সেবন, অতিরিক্ত বা অনিয়মিত অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের ফলে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স হয়।
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহাবুবুর রহমান বলেন, সিগগিরই অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স নীরব মহামারির ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে যাচ্ছে। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স সমস্যা প্রতিকারে গণমাধ্যম বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। আমি আশা করি কালের কণ্ঠসহ অন্যান্য গণমাধ্যম এ বিষয়ে এগিয়ে আসবে।
বাংলাদেশ ফার্মাকোলজিক্যাল সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, শুধু ডাক্তার এবং নার্সদের সচেতন করলেই অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স সমস্যার সমাধান হবে না, সবাইকে সচেতন করতে হবে। ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষায় অন্তত একটি প্রশ্ন অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স সমস্যা ও প্রতিকার বিষয়ে থাকা উচিত।
বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম এ মোবিন বলেন, রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি নিষিদ্ধ করা উচিত। প্রয়োজনে জাতীয়ভাবে একটি অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল কন্ট্রোল কমিশন গঠন করা উচিত।
ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নিতিশ দেবনাথ বলেন, ভেটেরিনারি ডাক্তারদের মধ্যে মাত্র ৬ শতাংশ ডাক্তার চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার করে থাকেন। খামারিরা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই না বুঝেই পশুখাদ্য ও ওষুধ বিক্রেতা বা ডিলারদের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার করেন।
কালের কণ্ঠের সম্পাদক শাহেদ মুহাম্মদ আলী গোলটেবিল বৈঠকের সমাপনী বক্তব্যে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স সমস্যা এবং প্রতিকার বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন কম প্রকাশ হওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, গণমাধ্যমে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তির অভাব রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০২১
আরকেআর/এমজেএফ