ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

যৌন হয়রানির প্রতিবাদে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্ম বিরতি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২২
যৌন হয়রানির প্রতিবাদে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্ম বিরতি

কক্সবাজার: কক্সবাজার সদর হাসপাতালের গাইনি ও প্রসূতি বিভাগের বির্তকিত  মেডিক্যাল অফিসার ডা.মাহফুজুর রহমানের  বিরুদ্ধে এবার  নারী ইন্টার্ন চিকিৎসককে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠেছে। এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) থেকে  কর্মবিরতি পালন করছেন হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।

এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সেখানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা।

যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, এরই মধ্যে অভিযুক্ত ওই চিকিৎসককে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে।

উল্লেখ্য বির্তকিত চিকিৎসক মো. ডা.মাহফুজুর রহমানের নামে রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়, নারী রোগীকে যৌন হয়রানিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনে বৃহস্পতিবার থেকে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি পালনের খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে  প্রকাশ হলে তা ভাইরাল হয় এবং নিন্দার ঝড় ওঠে।

কক্সবাজার ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. মীর ম. বিল্লাহ তকী জানান, কক্সবাজার সদর হাসপাতালের গাইনি ও প্রসূতি বিভাগের মেডিক্যাল অফিসার ডা. মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানিসহ অশালীন আচরণের অভিযোগ করেছেন ৬ নারী ইন্টার্ন চিকিৎসক। সে অভিযোগের ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো তাদের বেতন-ভাতা কেটে রাখার সিদ্ধান্ত নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এমন একটি চিঠি বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কাছে পাঠানো হয়। এর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কর্মবিরতি শুরু করেছেন ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ শাখার সদস্যরা। ফলে সকাল থেকে কোনো ওয়ার্ডে ইন্টার্নরা তাদের কাজে যোগ দেয়নি। তবে জরুরি বিভাগের কার্যক্রম স্বাভাবিক ছিল।

এদিকে কর্মবিরতির কারণে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কোনো ওয়ার্ডে ইন্টার্নরা  কাজে যোগ না দেওয়ায় হাসপাতালে অচলাবস্থার দেখা দিয়েছে। সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা।

হাসপাতালের তত্বাবধায়ক বরাবরে দেওয়া অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৬ নভেম্বর কক্সবাজার সদর হাসপাতালের গাইনি ও প্রসূতি বিভাগের মেডিক্যাল অফিসার ডা. মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানিসহ অশালীন আচরণের কারণে অভিযোগ করেন ইন্টার্নরা। এরপর তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো ইন্টার্নদের তিন মাসের বেতন-ভাতা কেটে রাখার আদেশ জারি করা হয়। এর প্রতিবাদে কর্মবিরতি পালন করেছেন ইন্টার্নরা।

কক্সবাজার ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান হয়েছে ৬ জন ইন্টার্ন চিকিৎসকের নামে জারিকৃত আদেশ প্রত্যাহার ও অভিযুক্ত ডা. মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া না হলে চলমান কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে।

এদিকে ডা. মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে সহকর্মী নারী ইন্টার্ন  চিকিৎসক, মেডিক্যাল অফিসার, ও অসহায় রোগীদের  যৌন হয়রানির অভিযোগের ঘটনায় ইমন সেন নামে এক ইন্টার্ন চিকিৎসক তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, আমরা কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থীরা নভেম্বর-২০২০ সালের ফাইনাল পরীক্ষায় পাস করে এই হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসক হিসেবে যোগ দেই। স্টুডেন্ট থাকা অবস্থাতেই আমরা গাইনির মেডিক্যাল অফিসার ডা. মাহফুজুর রহমানের নানা কুকীর্তি সম্পর্কে বিভাগের শ্রদ্ধেয় ম্যাডাম ও সিএ/রেজিস্ট্রার/এমও আপুদের থেকে অবগত ছিলাম। যার প্রমাণ আমরা চাক্ষুষ দেখতে পাই ইন্টার্ন পিরিয়ডের শুরু থেকেই।  

আর ওই স্ট্যাটাসের কমেন্ট বক্সে কক্সবাজার জেনারেল হাসপাতালের চিফ মেডিক্যাল অফিসার ডা. আব্দুল মজিদ লিখেছেন, ‘উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে। এই লোকটা চিকিৎসক নামের কলংক, আপাদমস্তক লম্পট। জেনারেল হাসপাতালের কর্তব্যরত নার্সদের সঙ্গে কুরুচিপূর্ণ কথা বলা, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গী করা এবং সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে অসময়ে (গভীর রাতে) হয়রানি করা, চেক ড্রেসিংয়ের কথা বলে স্বজনদের কেবিন থেকে বের করে দিয়ে সিজার রোগীকে নারী অ্যাটেন্ডেটস ছাড়া প্রায় নগ্ন করে ফেলাসহ আরও কিছু বিষয়ে আমার কাছে লিখিত অভিযোগ ছিল। আমি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জেনারেল হাসপাতালে ওনার প্রবেশ চিরদিনের জন্য নিষিদ্ধ করে দিয়েছি। কিন্তু ঢেকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে। বিকৃত যৌনরুচির লোক যেখানেই যায় সেখানে সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে, তাই তিনি অধিনস্থ নারী চিকিৎসকদের সঙ্গেও কুরুচিপূর্ণ আচরণ করতে ছাড়েননি। হেনস্থাকারীর কোনো শাস্তি হল না, উল্টো প্রতিবাদকারীরা ফেঁসে গেল, এ কেমন বিচার?

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মুমিনুর রহমান জানান, ডা. মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে নারী ইন্টার্ন চিকিৎসকরা যৌন হয়রানি ও অশালীন আচরণের লিখিত অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জানানো হলে কর্তৃপক্ষ হাসপাতালের গাইনি ও প্রসূতি বিভাগ থেকে ডা. মাহফুজুর রহমানকে অন্যত্রে বদলি করেন। হাসপাতালের চলমান কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত ডা. মাহফুজুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও সংযোগ না পাওয়ায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

বাংলাদেশ সময়: ২১১৯ ঘণ্টা, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
এসবি/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।