ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

দেশে ৭০ ভাগ মৃত্যুর জন্য দায়ী উচ্চ রক্তচাপ!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫২ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০২২
দেশে ৭০ ভাগ মৃত্যুর জন্য দায়ী উচ্চ রক্তচাপ! ছবি: জিএম মুজিবুর

ঢাকা: দেশে প্রতি চারজনে একজন হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপের রোগী এবং ৭০ ভাগ মৃত্যুর জন্য এটি দায়ী বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর (এনসিডিসি) অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন।

বুধবার (১৮ মে) দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস ২০২২ উপলক্ষে আয়োজতি মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।

ডা. রোবেদ আমিন বলেন, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে সাধারণত ৫০ বছরের পর উচ্চরক্তচাপ দেখা যায়। তবে বাংলাদেশে অনেক আগেই এটি পাওয়া যায়। এমনকি ১৮ বছরের নিচেও এখন অনেকে এই রোগে আক্রান্ত।

তিনি বলেন, উচ্চ রক্তচাপ একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা। এটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারলে কার্ডিওভাস্কুলারে মৃত্যুর হার বাড়বে যা বর্তমানে মোট মৃত্যুর প্রায় ৭০ ভাগ। আর সরাসরি ৩০ ভাগ মৃত্যু হয় হারপারটেনশনের কারণে। আমাদের প্রধান সমস্যা আমাদের খাদ্য অভ্যাস। আমাদের প্রতিদিন ৯ গ্রাম লবণ খাওয়া হয় অথচ প্রয়োজন ৫ গ্রাম। আমরা যেসব ভাজা-পোড়া ও ফাস্টফুড খাই সেগুলোতে লবণের পরিমাণ অনেক বেশি। এর পরিবর্তে আমাদের সহজ খাদ্য যেমন- শাক-সবজি ও ফল বেশি খাওয়া প্রয়োজন। এছাড়া বর্তমানে আমাদের ফ্যিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটিও কম। প্রতিদিন গড়ে ৩০ মিনিটও ফ্যিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটি থাকে না অনেকের। আর অতিরিক্ত স্ট্রেসও এই সমস্যার অন্যতম কারণ।

তিনি জানান, এ বছর সকল কমিউনিটি স্বাস্থ্য ক্লিনিক পর্যায়ে ব্লাড পেশার পরিমাপের জন্য ডিজিটাল মেশিন দেওয়া হবে যেন সঠিকভাবে ব্লাডপেসার পরীক্ষা করা যায়। এছাড়া এলসিডি কর্নার করা হচ্ছে ২০০ টি উপজেলা কমপ্লেক্স পর্যায়ে। এতে ডিজিটাল মেশিনে হাত রাখলেই মাপা হয়ে যাবে ব্লাড পেশার, কারো সহযোগিতা লাগবে না। এ বিষয়ে ৩টি ওষুধও বিনামূল্যে বিতরণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

ডা. রোবেদ আমিন বলেন, আমরা সিলেটের চারটি উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে স্ক্রিনিং কার্যক্রম শুরু করি এবং তার পরিসর বেড়েছে। এসব জায়গায় আমরা নিয়মিতভাবে রোগীদের উচ্চরক্তচাপ পরীক্ষা করি এবং ওষুধ দিচ্ছি। বর্তমানে এই কার্যক্রমে ৮০ টি উপজেলায় ১ লাখের বেশি রোগীর তথ্য আমরা অ্যাপের মাধ্যমে পাচ্ছি এবং তাদের সুরক্ষা দিচ্ছি। এসব রোগীর মধ্যে শতকরা ৫৭ ভাগ রোগীর উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আছে, যা আমাদের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। কেন না বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতেও এটি নিয়ন্ত্রণের হার ১২ থেকে ১৫ ভাগ।

আরও বক্তব্য রাখেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ব ও গবেষণা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক সোহেল রেজা চৌধুরী। তিনি বলেন, গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ থাকলে সমস্যা হতে পারে। শিশুর বিভিন্ন সমস্যাসহ মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে মায়ের উচ্চ রক্তচাপের কারণে। এছাড়া কিডনির বিভিন্ন সমস্যাও এর থেকে শুরু হয়।

আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আব্দুল মালিক। তিনি বলেন, শুধুমাত্র হাসপাতাল করে এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এই বিষয়ে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে এবং এটিকে একটি সামাজিক আন্দোলন হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যাপক খন্দকার আব্দুল আউয়াল, গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের কান্ট্রি লিড মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস, প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের প্রোগ্রাম ম্যানেজার (১) ডা. ফজলে এলাহী খান।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫১ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০২২
এইচএমএস/এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।