ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

বছরে ৪ মাস পানির নিচে থাকে যে কমিউনিটি ক্লিনিক

সুমন রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২২
বছরে ৪ মাস পানির নিচে থাকে যে কমিউনিটি ক্লিনিক কুমারজানি কমিউনিটি ক্লিনিক।

টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের মির্জাপুর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাওয়ার কুমারজানি গ্রামের কমিউনিটি ক্লিনিক বছরে চার মাস থাকে পানির নিচে। এ সময়টি অন্যের বাড়িতে বসে চিকিৎসাসেবা দিতে হয় স্বাস্থ্যকর্মীদের।

এতে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

একইভাবে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা নানা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। এছাড়া প্রতিদিন ওই বাড়িতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের আসা যাওয়ার কারণে বাড়ির মালিককেও দৈনন্দিন কাজের নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।  

স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গ্রামের দরিদ্র মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে বর্তমান সরকার প্রধান শেখ হাসিনার উদ্যোগে ১৯৯৮ সালে গ্রামে গ্রামে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৪ ইউনিয়নে ৫৪টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। এর মধ্যে বাওয়ার কুমারজানি গ্রামের মো. মোসলেম উদ্দিনের দেওয়া জমিতে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা হয়। ক্লিনিকটির আওতাধীন প্রায় ১০ হাজার মানুষের বসবাস। প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০ থেকে ৭০ জন রোগী এই ক্লিনিক থেকে চিকিৎসাসেবা নিয়ে থাকেন।  ক্লিনিকটির সামনের দিয়ে পাকা রাস্তা থাকলেও রাস্তা থেকে প্রায় ৬ ফুট নিচু জমিতে ক্লিনিকটির অবস্থান। বর্ষা মৌসুম শুরু হলেই জুন মাসের শেষ দিকে জমিতে পানি জমে ক্লিনিকের ভেতর ঢুকে যায়। বর্ষার এ পানি অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ে নেমে যায়। এতে বছরের প্রায় চার মাস পানির নিচে থাকে ক্লিনিকটি। এজন্য এই চার মাস গ্রামের লোকজনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রতি বছর একেক বাড়িতে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়া ক্লিনিকের ভবনটির অবস্থাও জরাজীর্ণ। ভবনটির বিভিন্ন অংশের প্লাস্টার ড্যামেজ এবং রঙ নষ্ট হয়ে গেছে। প্রতি বছরের মতো এ বছরও ক্লিনিকটি পানির নিচে ডুবে থাকায় রহিজ উদ্দিনের বাড়িতে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিন ৫০ থেকে ৭০ জন রোগী নানা সমস্যা নিয়ে ওই বাড়িতে ভিড় করছেন। এতে বাড়ির মালিকের দৈনন্দিন কাজের ক্ষতি হচ্ছে। এছাড়া বাড়িতে বসে রোগীদের সেবা প্রদানেও দায়িত্বরত সিএইচসিপি, পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক ও পরিবার কল্যাণ সহকারীকে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে বলে জানা গেছে।

বাওয়ার কুমারজানি গ্রামের বাসিন্দা নাছিমা হারুন জানান, ক্লিনিকের পাশেই আমার বাসা। মানুষের বাড়িতে গিয়ে ভিড় করে ওষুধ নেওয়া অসুবিধার সৃষ্টি করছে। মানুষের বাড়িতে গিয়ে রোগীরা তাদের সমস্যার কথা ঠিকমতো বলতেও পারে না।

গ্রামের তারিকুল ইসলাম জানান, ক্লিনিকটির নানা সমস্যা রয়েছে। বছরের চার মাস ক্লিনিকটি পানির নিচে থাকায় অন্যের বাড়িতে সেবা নিতে হয়। ক্লিনিকটির ভবন ভেঙে মাটি ভরাট করে নতুন ভবন নির্মাণের দাবি জানান।

রহিজ উদ্দিনের পুত্রবধূ সুবর্ণা বেগম জানান, ক্লিনিকটি তলিয়ে যাওয়ায় আমাদের বাড়িতে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। শুক্রবার বাদে সপ্তাহের প্রতিদিন বাড়িতে মানুষের ভিড় জমে, এতে আমাদের অসুবিধা হয়। কিন্তু গ্রামের মানুষের জন্য ছাড় দেন বলে তিনি জানান।

পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক মো. শরীফ মিয়া জানান, প্রতি বছর চার মাস এই ক্লিনিকটি পানির নিচে তলিয়ে থাকে। স্থানীয় লোকজনকে সেবা দিতে ও তাদের সেবা নিতেও কষ্ট হয়। এজন্য যেভাবে জনগণকে সেবা দেওয়া প্রয়োজন তা আমরা দিতে পারি না।

পরিবার কল্যাণ সহকারী রাবিয়া আক্তার জানান, ক্লিনিকটি পানির নিচে থাকায় পাশের বাড়িতে বসে চিকিৎসাসেবা দিতে হয়। সেখানে লোকজন এসে সেবা নেন। বাড়িতে গর্ভবতী মায়েদের চেকআপ করতে অসুবিধা হয়।

বাওয়ার কুমারজানি কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি জিয়াসমিন আক্তার বলেন, ক্লিনিকটি প্রতি বছর চার মাস পানির নিচে থাকে। আমি অন্যের বাড়িতে গিয়ে ওষুধ দেই। আমার অসুবিধা হয়। মানুষেরও সমস্যা হয়। যতটুকু সেবা দেওয়া দরকার তা দেওয়ার চেষ্টা করি, কিন্তু এতে পুরোপুরি সেবা দেওয়া যায় না। ক্লিনিকটি যদি পুনঃনির্মাণ করা হয় তাহলে এলাকার লোকজনের ভালো হয়, আমাদেরও সেবা দিতে এতো অসুবিধা হবে না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলে তিনি জানান।

মির্জাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. ফরিদুল ইসলাম জানান, ক্লিনিকটি রাস্তার চেয়ে একটু নিচু। বর্ষার পানি এলেই ক্লিনিকটি তলিয়ে যায়। তবে গ্রামের একটি বাড়িতে নিয়মিত স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া হচ্ছে।  

মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হাফিজুর রহমান বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার সঙ্গে এ বিষয়ে পরামর্শ করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. মো. মিনহাজ উদ্দিন মিয়া বলেন, এ বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে নিয়মিত বাড়িতে স্বাস্থ্যসেবা চলতে পারে না। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২২

আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।