ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

কলকাতায় শেষ হলো বাংলাদেশ বইমেলা

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০২২
কলকাতায় শেষ হলো বাংলাদেশ বইমেলা

কলকাতা: এবার থেকে কলকাতায় বাংলাদেশ বইমেলা শুরু হবে প্রতি ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের প্রথম সোমবার। এতদিন বইমেলা শুরু হয়ে আসছিল জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহের বৃহস্পতিবারে।

আগামী বছর কলকাতায় বাংলাদেশ বইমেলা হবে ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের প্রথম ৪ ডিসেম্বর থেকে ১৩ ডিসেস্বর। যদি পশ্চিমঙ্গ সরকার প্রতিবছর কলেজ স্ট্রিট প্রাঙ্গণে মেলা করার অনুমতি দেয় তাহলে স্থায়ীভাবে কলেজ স্কোয়ার প্রাঙ্গণে হবে এই বইমেলা।

রোববার (১১ ডিসেম্বের) কলকাতায় ১০ম বাংলাদেশ বইমেলার শেষদিনে এমনই ঘোষণা দেন বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি মাজহারুল ইসলাম।

এ দিন কলকাতায় আয়োজিত বাংলাদেশ বইমেলার সমাপ্তি হয়। মেলা শেষে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন ও সমবেত কণ্ঠে ‘আগুনের পরশমণি’ ধ্বনি নিয়ে মেলা প্রাঙ্গণ প্রদক্ষিণ করে আনুষ্ঠানিক সমাপনী টানা ১০ম বাংলাদেশ বইমেলার।

শেষ দিনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী, নাট্যজন আসাদুজ্জামান নূর এমপি। তিনি বলেন, মেলা মানেই মেলামেশার স্থান। একে অপরের সাথে দেখা হওয়া, কথা হওয়া এটাই তো দরকার। তবেই আমরা একে অপরকে বেশি বুঝতে পারব, জানতে পারব। এই বন্ধন যত ঘনিষ্ঠ হবে তত আমাদের সম্পর্ক দৃঢ় হবে। সরকারে সরকারে মৈত্রী হয়, তবে সেখানে আবার টানা-পোড়েনও থাকে। এরকম সংস্কৃতি চর্চার মধ্য দিয়ে মানুষের যে বন্ধন তৈরি হয়, সেই বন্ধন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহযোগিতা করে।

বইমেলার শেষদিনে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কবি কামাল চৌধুরী, শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার, পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের সম্পাদক ত্রিদিপ চট্টোপাধ্যায়, বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের বাণিজ্যিক শাখার প্রথম সচিব শামসুল আরিফ, ভাষা ও চেতনা সমিতির সম্পাদক ইমানুল হক। অনুষ্ঠানে সভাপতি করেন কলকাতাস্থ বাংলাদেশের উপ-কমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস।

বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন এবং বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সম্মিলিত উদ্যোগে গত ২ ডিসেম্বর ১০ম বাংলাদেশ বইমেলার উদ্বোধন করেছিলেন বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজরুল ইসলামসহ বিশিষ্টজনরা। এবারে বেইমেলার আয়োজন করা হয়েছিল কলকাতার বইপাড়া বলে পরিচিত কলেজ স্ট্রিটের কলেজ স্কয়ার প্রাঙ্গণে।

প্রতিবারের মতো এ বছরও বাংলাদেশের বিভিন্ন শীর্ষস্থানীয় প্রকাশনা মেলায় অংশ নিয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে মোট ৬৮টি স্টলে, ৭৫টি বাংলাদেশি প্রকাশনার বই কলকাতার পাঠকদের কাছে হাজির করা হয়েছিল। প্রতিটি বইয়ের স্টলে বিপুল বাংলাদেশি বইয়ের সম্ভারের পাশাপাশি কলকাতার বইপ্রেমীদের জন্য প্রতিদিন ছিল এক মঞ্চে দুই বাংলার প্রথিতযশা শিল্পীরা এবং কলকাতায় অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের অনুষ্ঠান।

শেষ দিনের অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করেন সোমালী পান্ডা ও সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে মলি দত্ত ও তার গ্রুপ এবং লোকসঙ্গীত পরিবেশন করে উজ্জয়ন। বইমেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনে সহায়তা করেছে কলকাতার ভাষা ও চেতনা সমিতি।



এবারে আয়োজকরাও যেমন খুশি, তেমন খুশি প্রকাশক বিক্রেতারা। কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন এবারই প্রথম মেলায় অংশ নিয়েছে। স্টলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি বলেন, কলকাতার বাজার এত ভালো, যা এনেছি প্রায় সব শেষ। অনেককেই দিতে পারিনি শুদ্ধাচার বইটা।

আদর্শ প্রকাশনীর মতে রবীন্দ্রসদন এলাকার মোহরকুঞ্জে ১০ দিনে ৫০ হাজার রুপির বিক্রি হয়। কলেজ স্ট্রিটে ১০ দিনে পৌনে দুই লাখ রুপির বিক্রি হয়েছে। বই শেষ হওয়ায় আবার ঢাকা থেকে বই আনতে হয়েছে।

একই মত চন্দ্রবতী প্রকাশনীর। সেলিনা হোসেন, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, রেজাওয়ানা চৌধুরী বন্যার বইয়ের সব কপি শেষ। আরও চাহিদা ছিল বলে জানায় প্রকাশনা সংস্থাটি।

আয়োজকদের মতে, কলকাতার বইপাড়া এমন একটা অঞ্চল যেখানে নিত্যদিন ভিড় লেগে থাকে। একদিকে যেমন এ অঞ্চল গোটা পশ্চিমবাংলার বইয়ের বাজার, অপরদিকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়সহ একাধিক প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অবস্থিত কলেজ স্ট্রিটে। এছাড়া বাড়তি পাওনা কফি হাউসের আড্ডাপ্রেমীদের জমায়েত। ফলে কলেজ স্ট্রিট মানেই বাংলাদেশ বইমেলার বাড়তি প্রচার। সেটাই আমাদের আসল উদ্দেশ্য।

বাংলাদেশ বইমেলা হতো দক্ষিণ কলকাতায়। চলতি বছর উত্তর কলকাতায় হওয়ায় দক্ষিণ প্রান্তের মানুষজন সেভাবে অংশগ্রহণ করেননি। তবে স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া পেয়েছে উত্তরপ্রান্তবাসীর। আবার রোববার ছুটির দিনে স্তব্ধ থাকে কলকাতার বইপাড়া। ফলে শেষ দিন মেলা প্রাঙ্গণে লোকসংখ্যা সেরকম চোখে পড়েনি। যদিও বিক্রতাদের মুখে চওড়া হাসি। ফলে শেষদিন নিয়ে তাদের খুব একটা মাথাব্যথা নেই!

এক সময় কলকাতায় বাংলাদেশি বইয়ে প্রাপ্তিস্থান ছিল কলকাতা বইমেলা। পরবর্তীতে পাঠক সমাবেশ ও পত্রভারতীর যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশি বইয়ের স্থায়ী ঠিকানা হয় কলকাতার কলেজ স্ট্রিটে। তারই মাঝামাঝি বাংলাদেশি বইয়ের পসরা নিয়ে ২০১১ সালে কলকাতায় পথচলা শুরু বাংলাদেশ বইমেলার। শুরু থেকে ৩ বছর গগনেন্দ্র প্রদর্শশালায় বইমেলাটি হয়। তবে শুরু হলেও নির্দিষ্ট স্থানে মেলাটিকে ধরে রাখা যায়নি। পরবর্তীতে ৪ বছর মেলা হয় রবীন্দ্র সদনের খোলা প্রাঙ্গণে। এরপর রবীন্দ্র সদন চত্বর ঘুরে ৩ বছর বাংলাদেশ বইমেলা হয়ে আসছিল রবীন্দ্র সদনের পশ্চিম পাশের মোহরকুঞ্জ প্রাঙ্গণে। ২০১৯ সালে শেষবার সেখানেই হয়েছিল। চলতি বছর ফের স্থান পরিবর্তন করে চলে এলো কলকাতার কলেজ স্ট্রিটে। অয়োজকদের মতে, কলেজ স্ট্রিটের কলেজ স্কয়ার প্রাঙ্গণই হবে বাংলাদেশ বইমেলার স্থায়ী ঠিকানা।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০২২
ভিএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।