পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আক্ষেপ স্বরে বলেছেন, বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের ভাষা যদি এক হয়, তাহলে আমরা কি করতে পারি? এটা কি আমাদের দোষ? একইসঙ্গে ভারতের নির্বাচন কমিশনকে সরাসরি নিশানা করে বলেছেন, ‘প্লিজ, বিজেপির ললিপপ হবেন না।
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) রাজ্যটির বর্ধমান জেলায় প্রশাসনিক কর্মসূচি থেকে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে বাংলা ও বাঙালি বিদ্বেষের অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ভারতে যেমন পাঞ্জাব রয়েছে, তেমন পাকিস্তানেও একটা পাঞ্জাব প্রদেশ রয়েছে।
এদিন বাংলা ভাষার গুরুত্ব তুলে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেছেন, গোটা বিশ্বে বাংলা ভাষা পঞ্চম স্থানে রয়েছে, এবং গোটা এশিয়াতে দ্বিতীয়তম স্থানে রয়েছে। বাংলা একটা আন্তর্জাতিক ভাষা। হার্ভার্ড, অক্সফোর্ড, কলম্বিয়ার মত আন্তর্জাতিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বাঙালিদের ছাড়া চলে না। তাহলে বাংলা ভাষা কেন বলতে দেবেন না?
এরপরই মমতা বলেছেন, ‘আসলে ওরা (বিজেপি) বাংলাকে সহ্য করতে পারে না। বাংলা দেখলেই ওদের জ্বলতে থাকে। দেশের মনীষী থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামীরা কোন ভাষায় কথা বলতেন? বাংলার ইতিহাসকে ভুলে যাবেন না। আপনারা বলছেন বাঙালিই মানেই বাংলাদেশি? তাছাড়া ভারতের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাদেশের সাথে চুক্তি করেছিল যে, ১৯৭১ সালে মার্চ মাস পর্যন্ত যারা ভারতে আসবে তারা ভারতীয় নাগরিক। কেন্দ্রে ক্ষমতায় আছে বলে তারা বাংলাকে ভাতে মারার চেষ্টা করছে।
অপরদিকে ভারতে যে রাজ্যগুলোয় বিধানসভা ভোট, সেসব রাজ্যে ভোটার তালিকা সংশোধন (এসআইআর) শুরু হয়েছে।
সম্প্রতি বিহারে এসআইআর করতে গিয়ে ৬৫ লাখ মানুষের নাম বাদ গেছে। সেপ্টেম্বর থেকে বাংলায় শুরু হবে এসআইআরের কাজ। যা নিয়ে কংগ্রেসসহ বিজেপি দলগুলো জোর বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। সেই আবহে নির্বাচন কমিশনকে এক হাত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মমতা বলেছেন, দয়া করে বলছি, প্লিজ বিজেপির ললিপপ হবেন না। আপনাদের অনেক প্রণাম। কিন্তু আপনারা যদি বিজেপির ললিপপ হন, তাহলে দেশের মানুষ ক্ষমা করবে না।
এর আগেও মমতার কড়া হুঁশিয়ারি ছিল, বাংলায় একজন ভোটারেরও নাম বাদ গেলে বড় আন্দোলনে নামবেন তারা।
প্রসঙ্গত, বিহারে দেখা গেছে ৬৫ লাখ ভোটারের মধ্যে অধিকাংশই মৃত কিংবা বাসস্থান বদল করেছেন।
এদিনের সভা থেকে মোদীর ‘চোর’ মন্তব্যেরও পাল্টা জবাব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই মন্তব্যের জবাবে মমতা বলেছেন, আপনার (মোদী) কাছ থেকে আমি এটা প্রত্যাশা করি না। আমি তার চেয়ারকে সম্মান করি। তারও উচিত আমাদের চেয়ারগুলিকে সম্মান করা। উনি কেন বলবেন যে, বাংলায় সব চোর তাই আমি অর্থ দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছি? আমি একবেলা খাই। আমি টাকা চাই না, আমি চাই মেধা ও আত্মসম্মান। বাংলা মায়ের আত্মসম্মানে আঘাত করলে আমার গায়েও সেই আঘাত লাগে। ’
গত ২২ আগস্ট কলকাতার একটি রাজনৈতিক সভা থেকে তৃণমূলের দুর্নীতি ইস্যুতে, প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছিলেন, ‘কেন্দ্র সরকার রাজ্যের উন্নয়নের জন্য যে অর্থ বরাদ্দ করে রাজ্যের তা, সাধারণের উন্নয়নের খরচ হয় না। সেটা নারীদের জন্য ব্যবহার করা হয় না। সেই অর্থ তৃণমূল তাদের ক্যাডার পুষতে খরচ করে।
ভিএস/এএটি