কলকাতা: ভারতের ওড়িশায় ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় এখনও কোনো বাংলাদেশির মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। তবে সেই রাতে প্রাণে রক্ষা পাওয়া কয়েকজন বাংলাদেশির সন্ধান মিলেছে কলকাতায়।
গত ২ জুলাই ভারতে ট্রেন দুর্ঘটনা ইতিহাসের এক কালো রাত। হাওড়ার শালিমার স্টেশন থেকে করমন্ডল এক্সপ্রেস ধরে চেন্নাই যেমন যাচ্ছিলেন বাংলাদেশিরা। তেমনি ব্যাঙ্গালোরের যশবন্তপুর স্টেশন থেকে হামসফর এক্সপ্রেস ধরে হাওড়ায় আসছিল আরও একটি ট্রেন। মাঝে ছিল একটি পণ্যবাহী ট্রেন। এ তিন ট্রেনের সংঘর্ষের কারণে এত মৃত্যু। ব্যাঙ্গালোরের সেই ট্রেনে যে বাংলাদেশিরা ছিল না এখনই তা জোরের সঙ্গে বলা যাচ্ছে না। অথবা ওই করমন্ডল এক্সপ্রেসে ১০ জন বাংলাদেশি যাত্রী ছিল এমন তথ্যই যে সঠিক তাও কেউ দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারছেন না।
কলকাতার বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস মনে করছেন, ভারতে অবস্থানরত বহু বাংলাদেশি কলকাতার এজেন্টদের থেকে বেনামে টিকিট কেনেন। ফলে সেই দুই ট্রেনে কোনো বাংলাদেশি বেনামি টিকিটে ভ্রমণ করলে এখনই তাদের তথ্য সামনে আসবে না। এ ধরনের টিকিট না কাটার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
আন্দালিব ইলিয়াস বলেন, আপনাদের সংবাদমাধ্যমের মধ্য দিয়ে আমি আমার নাগরিকদের বলতে চাই, এ ধরনের ট্রেনের টিকিট নিয়ে ভারতে ট্রেন ভ্রমণ করবেন না। এমন একটা দুর্ঘটনার সময় সে কারণে আমাদের কাজ করতে অনেকটাই অসুবিধায় পড়তে হয়েছে। মূলত এ ধরনের ঘটনা ঘটে একবারে অসচেতনতার কারণে। আপনাদের মাধ্যম দিয়ে আমার নাগরিকদের বিনীতভাবে অনুরোধ করব যারা ভারতে ট্রেনে ভ্রমণ করেন অর্থাৎ তার যে টিকিটটি কেটেছেন তাতে যেন তাদের নামে হয় এবং তাদেরই মোবাইল নম্বরটা যেন সেখানে থাকে। (পাসপোর্ট দেখিয়ে ভারতীয় যে সিমটা নম্বরটা সংগ্রহ করেছেন। )
ট্রেনের প্যাসেঞ্জার লিস্টে প্রত্যেকের নাম ও মোবাইল নম্বরটা দেওয়া থাকে। আমরা যখন রেল থেকে প্যাসেঞ্জার লিস্ট নিয়ে কাজটা করতে গেলাম তখন দেখলাম যে নামগুলো তাদের স্বজনরা দিয়েছে তার সঙ্গে প্যাসেঞ্জার লিস্টের নামগুলো মিলছে না। কারণ বেশিরভাগে ক্ষেত্রে দেখা গেছে তারা অন্য কোনো ব্যক্তির নামে কাটা টিকিট, ট্রাভেল এজেন্টের কাছ থেকে কিনে নিয়ে ট্রেন ভ্রমণ করছেন। যে কারণে আমরা সার্চ করে একই ফোন নম্বর পেয়েছি বিভিন্ন প্যাসেঞ্জার লিস্টে। কিন্তু টিকিটগুলো যদি তাদের নিজেদের নামে হত এবং তাদের ফোন নম্বরগুলো দেওয়া থাকতো তাহলে দূতাবাসের পক্ষে খোঁজা বা ট্র্যাক করা অনেকটাই সহজ হত। সেসব যাত্রীদের জন্য বিষয়টা নিরাপদ হত। কারণ এ ধরনের টিকিটে ট্রেন ট্রাভেল করা হলে দুর্ঘটনা ঘটলে অনেক সময় সেই যাত্রীদের খুঁজে পাওয়া সম্ভব নাও হতে পারে।
যে কারণে আমাদের হট লাইন নম্বরটা (+৯১ ৯০৩৮৩৫৩৫৩৩) আরও এক সপ্তাহ চালু রেখেছি। যাতে এমন কেউ যদি থেকে থাকেন যাদের এখনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। তাদের পরিবার বা স্বজন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। আমি সে কারণেই সবাইকে অনুরোধ করছি যারা ভারতে রিজার্ভেশন (সংরক্ষিত) টিকিটে ভ্রমণ করেন তারা যেন টিকিটটা নিজের নামে কেনেন। টিকিট হাতে নেওয়ার সময় তারা যেন নিশ্চিত হয়ে নেন, তারা যে টিকিটে ট্রাভেল করছেন তাতে নিজের নামটা রয়েছে।
মূলত, দেখা গেছে কলকাতায় যেসব বাংলাদেশিরা আসেন তারা মারকুইস্ট্রিট বা মুকুন্দপুরের মতন জায়গাগুলোয় থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। সেখানে যেমন বাংলাদেশিদের থাকার জন্য প্রচুর হোটেল আছে তেমন ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সি। ফলে যেসব বাংলাদেশিরা কলকাতায় অবস্থান করে তারা সরাসরি রেলের টিকিট কাউন্টারে না গিয়ে এসব ট্রাভেল এজেন্টের ওপর নির্ভর করেন। আর এসব ট্রাভেল এজেন্টরা আগে থেকে অন্যের নামে টিকিট কেটে রাখেন। বিশেষ করে আজমীর শরীফ ও চেন্নাই।
বাংলাদেশি যাত্রীরা তাদের কাছে টিকিটের খোঁজ করলে প্রথমে কম্পিউটার দেখিয়ে জানানো হয় নির্দিষ্ট ট্রেনে কোনো সিট নেই। কিন্তু বাড়তি দাম দিলে নির্দিষ্ট দিনে ওই ট্রেনে সিট (সংরক্ষিত বসার আসন) জোগাড় করে দেবে। তখন বাংলাদেশিদের বলা হয়, টিকিট অন্যের নামে হলেও যাত্রা পথে কোনো সমস্যা হবে না। আপনি নিশ্চিন্তে যেতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে বলে রাখা উচিত, ভারতীয় রেল তৎকাল টিকিটের সেবা দিয়ে থাকে। তাতে টিকিটের দাম বেশি হলেও নির্দিষ্ট যাত্রীর নাম ছাপা থাকে।
অপরদিকে ট্রেনের টিকিট চেকারদের মধ্যে একটা গাফিলতি লক্ষ্য করা যায়। তারা শুধু ট্রেনের সিট নম্বরের সঙ্গে নিজেদের হাতে থাকা প্যাসেঞ্জার লিস্ট মিলিয়ে নেয়। অথচ নিয়ম অনুযায়ী, যেসব যাত্রী সংরক্ষিত আসনে রেল ভ্রমণ করছেন তার আইডি কার্ড বা পাসপোর্টের সঙ্গে টিকিটে ছাপা নাম ও আসন সংখ্যা মিলিয়ে দেখা। অথচ তা হয় না। আর সে কারণে অসচেতনভাবে ভুলগুলো করে ফেলছেন বাংলাদেশিরা। আর তাতেই তালিকায় সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রেই মিল পাচ্ছে না ওড়িশায় দুর্ঘটনার সঙ্গে যাত্রীদের তালিকা। এ কারণেই বাড়তি সচেতন হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৫ ঘণ্টা, জুন ০৬, ২০২৩
ভিএস/আরবি