ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

পশ্চিমবঙ্গে ভোটের আগে মৃত ১৬, সহিংসতা অব্যাহত

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৮ ঘণ্টা, জুলাই ৫, ২০২৩
পশ্চিমবঙ্গে ভোটের আগে মৃত ১৬, সহিংসতা অব্যাহত

কলকাতা: আগামী ৮ জুলাই পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচন। বিরোধীদের অভিযোগে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে আধা সেনা সদস্যদের নিরাপত্তায় হতে চলেছে গ্রাম বাংলার ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ভোট।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ৮২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। তবে তারই মধ্যে সহিংসতা অব্যাহত।

শাসকদলের অভিমত, গত নির্বাচন থেকে এবারে হিংসা এবং মৃত্যুর সংখ্যা কম। বিরোধীদের অভিযোগ, এবারও নির্বাচনের আগে রক্ত ঝরছে বঙ্গবাসীর এবং এ সন্ত্রাস ১১ জুলাই ফল ঘোষণায় শেষ হবে না। তারপরও আরও কিছুদিন চলবে। ফলে পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর আর কিছু দিন বাংলায় রাখা হোক কেন্দ্রীয় বাহিনী। এমনই মত বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর।

তবে শাসকদল যাই বলুক না কেন, পঞ্চায়েত নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ততই রাজ্যজুড়ে সহিংসতার ঘটনাও বেড়ে চলেছে।

গ্রাম বাংলার নির্বাচন ঘিরে বুধবার (৫ জুলাই) পর্যন্ত ১৬ জনের মৃত্যু খবর সামনে এসেছে। শেষ মৃত্যু ঘটেছে মঙ্গলবার রাতে। রাজ্যটির উত্তর ২৪ পরগনা জেলার দেগঙ্গায় ১৭ বছর বয়সী এক নাবালকের মৃত্যু হয়েছে। ইমরান হাসান নামে একাদশ শ্রেণির ওই শিক্ষার্থীকে বোমা মেরে হত্যা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ শাসক দল তৃণমূলের।

তৃণমূলের একটি মিছিলে যোগ দিয়েছিল ইমরান। এরপর রাতে দলের পতাকা ব্যানার টাঙানোর পর সাড়ে ১১টা নাগাদ বাড়ি ফিরছিল ইমরান। এ সময় তাকে লক্ষ্য করে পরপর চারটে বোমা ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। বোমা লাগে তার বুকের বাম পাশে। ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় ইমরানের। এই ঘটনায়, সিপিআইএম এবং আইএসএফের দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছে তৃণমূল। ইমরানের মৃত্যুর পর পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় রাজ্যে এখনো পর্যন্ত ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এর আগে গত ৩ জুলাই পুরুলিয়া জেলায় এক বিজেপি কর্মী বঙ্কিম হাঁসদা খুন হয়। হত্যার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করছে তৃণমূল। ওই একই দিনের উত্তর ২৪পরগনার হারোয়ায় শালিপুর এলাকায় বিস্ফোরণে পরিতোষ মণ্ডল নামে এক তৃণমূল কর্মীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ১ জুলাই দক্ষিণ ২৪পরগনা জেলার বাসন্তীতে রাজ্যের শাসকদলের গোষ্ঠী কোন্দলে তৃণমূল কর্মী জিয়ারুল মোল্লাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ২২ জুন পুরুলিয়ার আদ্রা শহরে তৃণমূলের সভাপতি ধনঞ্জয় চৌবেকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় দুষ্কৃতকারীরা। এখানেও গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের ঘটনার অভিযোগই সামনে এসেছে।

গত ১৫ জুন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, পঞ্চায়েত ভোট পর্বে মৃতের সংখ্যা ছিল শূন্য। অথচ ওদিন বিকালে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ে ২ জন খুন হয়েছিলেন। ওদিনের সংঘর্ষে ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকীর রাজনৈতিক দল ইন্ডিয়ান সেক‍্যুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ) এবং তৃণমূল কর্মীর একজন করে মৃত্যু হয়েছে। ৯ জুন মুর্শিদাবাদ জেলায় দু’জন কংগ্রেস কর্মীর হত্যার ঘটনার সামনে এসেছে। এছাড়া মালদহ জেলায় একজন এবং কোচবিহার জেলার দিনহাটাতেও তৃণমূল ও বিজেপি একজন করে কর্মী খুন হয়েছে।

এছাড়া ১৫ জুন উত্তর দিনাজপুর জেলার চোপড়ায় এলাকার মনোনয়ন পর্বে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতির গুলিতে সিপিআইএ -এর এক তরুণ কর্মী মনসুর আলমের মৃত্যু হয়েছে। এমনকি এদিন (৫ জুলাই) কোচবিহার জেলার দিনহাটাতে এক সিপিআইএম প্রার্থীকে তীরবিদ্ধ করা হয় বলে অভিযোগ। মনোয়ার মিঞা নামে ওই সিপিআইএম সমর্থক বর্তমানে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অভিযোগের তীর তৃণমূলের দিকে।

রাজ্যে লাগাতার সহিংসতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। এমনকি রাজ্যের বিভিন্ন সন্ত্রাস কবলিত এলাকায় সম্প্রতি পরিদর্শনও করেছিলেন তিনি। শান্তি ফেরাতে ৪৮ ঘণ্টার সময়সীমাও বেঁধে দিয়েছিন রাজ্যপাল। যদিও রাজ্য পুলিশের দাবি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। মঙ্গলবার (৪ জুলাই) এ বিষয়ে রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালব্য জানান, দু’তিনটে ঘটনা ঘটেছে। তবে পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে। আমাদের কাছে ওপরমহল থেকে স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে, কোনো এলাকা থেকে অশান্তির খবর আসলে কঠোর হাতে তা দমন করতে হবে।
 
আমরা সেই গাইডলাইন মেনে কাজ করছি। এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি, যেটা পুলিশ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারিনি। পুলিশ নিজেদের কাজ করছে। বিক্ষিপ্ত কয়েকটি অশান্তি ছাড়া রাজ্যের পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে। বাংলার পুলিশ আরও দাবি করেছে, রাজ্যে সেভাবে অশান্তির ঘটনা ঘটছে না। কিছু ছোট ঘটনা কয়েকটা গণমাধ্যম বড় করে দেখাচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৩ ঘণ্টা, জুলাই ০৫, ২০২৩
ভিএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।