ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

পশ্চিমবঙ্গে চাহিদা অনুযায়ী মিলছে না খেজুর রস, পাওয়া যাচ্ছে না ভালো গুড়ও

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৮, ২০২৩
পশ্চিমবঙ্গে চাহিদা অনুযায়ী মিলছে না খেজুর রস, পাওয়া যাচ্ছে না ভালো গুড়ও

কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গের খেজুর গাছে হাঁড়ি বাঁধলেও চাহিদা অনুযায়ী মিলছে না রস। ফলে রাজ্যে ভালো গুড় পাওয়া যাচ্ছে না।

এ কারণে হতাশ হয়ে পড়েছেন গাছি থেকে গুড় ব্যবসায়ীরা। যদিও কেউ কেউ আশার বাণীতে বিশ্বাসী। তারা বলছেন, শীত মৌসুম কেবল শুরু হয়েছে। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে রস আসতে শুরু করবে।

রাজ্যের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার জয়নগরের গাছি মজিদ মোল্লা বলেন, এবারের রসে তেমন জুত নেই। প্রথম কাটের রস কোনো রকমের হলেও দ্বিতীয় কাটের রসে তেমন স্বাদ নেই।  

রস কম পাওয়া বা স্বাদ কম হওয়ার জন্য গাছিরা দায়ী করছেন আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনাকে। তাদের অভিমত, ডিসেম্বর পড়ে গেলেও এবারে তেমন শীত নেই। তাই রসের জুতও নেই। সাদা হয়ে যাচ্ছে রস।

পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার এক খেজুর রস ব্যবসায়ী এবার এক হাজার ২০০ গাছ লিজ নিয়েছেন। এজন্য তাকে দিতে হয়েছে কয়েক লাখ রুপি। পরিস্থিতি যা, তাতে টাকা তুলতে পারবেন কি না তা নিয়ে শঙ্কায়। জাঁকিয়ে শীত না পড়ায় চিন্তা বাড়ছে তার।

রাজ্যের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার জয়নগরের বহড়ুু এলাকায় সবচেয়ে ভালো খেজুর গুড় পাওয়া যায়। এ অঞ্চলের গুড় এবং মোয়া ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে যায়। এমনকি বিদেশেও রপ্তানি হয়। এ অঞ্চলের বিখ্যাত মিষ্টি হল মোয়া। কনকচূড় ধানের খই ও খাঁটি খেজুর গুড় দিয়ে তৈরি এটি ভারতে পরিচিত ‘জয়নগরের মোয়া’ নামে। শীত মৌসুম এলেই এখানকার মোয়া কিনতে ভিড় করেন বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ।

সেই জয়নগরে খেজুর গুড় আর মোয়া কিনতে গিয়েছিলেন হুগলির ডানকুনির বাসিন্দা সন্দীপ দাস। তার কথায়, শীতের অন্যতম অনুষঙ্গ খেজুর গুড়। একটু ভালো নলেন গুড়ের টানে প্রতিবার এখানে আসা। কিন্তু এবারে গুড় মুখে দিয়ে মজা পাচ্ছেন না।

এ অঞ্চলের মোয়া রপ্তানিকারক সুবল দাস বলেন, ভালো গুড় না পেলে ভালো মোয়া তৈরি হয় না। প্রথম দিকে কিছু রপ্তানি করেছিলাম। কিন্তু এখন ভালো গুড় নেই। তাই এখন রপ্তানি পুরো বন্ধ। যা করছি স্থানীয়দের জন্য।  

তিনি আরও বলেন, অনেকে ঘ্রাণ নিয়ে গুড় কেনেন। কিন্তু খেলে বোঝা যায় ওটা আসল গুড় নয়। খাঁটি গুড়ে স্বাদ এবং ঘ্রাণ দুটোই সঠিক মাত্রায় থাকে। অসাধুরা এক ধরনের তৈরি করা গুড়ে কৃত্রিম নলেন গুড়ের সেন্ট মিশিয়ে খাঁটি বলে চালিয়ে দেয়। খাঁটি গুড় পাবেন কী করে? গাছই যদি সঠিক রস দিতে না পারে।

বাঁকুড়ার খাতড়ার বাসিন্দা শফিক মল্লিক দীর্ঘদিন খেজুর গুড়ের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। তার জেলার নিমাইপুর, লক্ষীসাগর এলাকায় ২০০টির বেশি খেজুর গাছ লিজ নিয়ে নিয়েছেন তিনি।  

শফিকের কথায়, প্রতি বছর আমি এখানে লিজে গাছ নিই। এবারেও নিয়েছিলাম। স্থানীয়দের কাছ থেকে নিজে গাছ নিয়ে ব্যবসা করছি অনেক বছর ধরে। কিন্তু গাছ থেকে রসের উৎপাদন এবার অনেকটাই কম। ফলে রস বেশি না হওয়ায় গুড়ের উৎপাদন এবারে এখন পর্যন্ত অনেক কম হয়েছে। চাহিদা থাকলেও স্থানীয় বাজারে ৯০ থেকে ১০০ রুপি কেজি দরে বিক্রি করছি। কলকাতায় ৯০০ গ্রাম খেজুর গুড়ের দাম পড়ছে ১২০-১৩০ রুপি। ফলে উৎপাদন না হলে লাভের মুখ দেখা তো দূরের কথা, লিজ নেওয়ার জন্য যে অর্থ খরচ হয়েছে তা কীভাবে তুলব ভেবে চিন্তায় পড়ে গিয়েছি।

মূলত পশ্চিমবঙ্গে নভেম্বর মাস থেকে পাওয়া যায় নলেন বা খেজুর গুড়। কিন্তু এবার সেভাবে শীতের দেখা না মেলায় রাজ্যে খেজুর রসের আকাল দেখা দিয়েছে। বলা চলে, এবারে নলেন গুড় পর্যাপ্ত পরিমাণে না হওয়ায় আগামীতে আরও যে দাম বাড়বে তা স্পষ্ট। তবে দাম দিলেই যে খাঁটি গুড় মিলবে, এ গ্যারান্টিও এবার দিতে পারছেন না গাছি থেকে গুড় ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০২৩
ভিএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।