কলকাতা: মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে ভারতের সংসদ নির্বাচনের (লোকসভা ভোট) তফসিল ঘোষণার হওয়ার কথা। অথচ নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতে, ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে পশ্চিবঙ্গে পা রাখতে চলেছে প্রায় ১৫০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী।
কেন ভারতের নির্বাচন কমিশনের এমন তৎপরতা, এর কারণ কী- এ প্রশ্নে এখন তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। সাধারণত ভোট ঘোষণা হওয়ার পর দেশ বা সংশ্লিষ্ট রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ও প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের হাতে চলে যায়। তারপরই কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করে কমিশন। কিন্তু এবার অন্য পথে হাঁটছে কমিশন।
জানা যাচ্ছে, এর নেপথ্যে রয়েছে একমাস ধরে জমে থাকা পশ্চিমবঙ্গে আইনশৃঙ্খলা সমস্যা সংক্রান্ত রিপোর্ট। তাই আগেভাগে সেনা সদস্য পাঠিয়ে স্পর্শকাতর এলাকাগুলোতে রুট মার্চ ও এরিয়া ডমিনেশনের কাজ করতে চায় কেন্দ্র। কিন্তু তাই যদি হয় তাতেও প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কারণ ভোটের তফসিল ঘোষণার আগে সেনাকে নির্দেশ দিতে পারে একমাত্র কেন্দ্র সরকার। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে এ ধরনের এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের নেই।
যদিও কমিশনের এক কর্তা জানিয়েছেন, তফসিল ঘোষণা না হলেও সামগ্রিক পরিস্থিতি যাচাই করে নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট রাজ্যকে এ সংক্রান্ত সুপারিশ করতেই পারে। তবে বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের বসিরহাট অঞ্চলের সন্দেশখালি নিয়ে রাজ্য রাজনীতির পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে তাতে কমিশনের এ সিদ্ধান্ত যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
এর আগে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কমিশন শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের ৪২ আসনের নির্বাচনের জন্য ৯২০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে। সে ঘটনাও কম নজিরবিহীন নয়। কারণ গত সংসদ ভোটে (২০১৯) পশ্চিমবঙ্গে মোতায়েন করা হয়েছিল ৭৪০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। এবারে রাজ্যটির ৪২টি আসনের জন্য তা বেড়ে হয়েছে ৯২০ কোম্পানি। কমিশনের তথ্য মতে, ভোট ঘোষণার পর ধাপে ধাপে রাজ্যে বাহিনী আনা হবে। ভোট লগ্নে সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারে।
গত বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি সংসদ (লোকসভা) কেন্দ্রের অধীনে কতগুলো করে স্পর্শকাতর বুথ রয়েছে তার তালিকা জেলাশাসকদের কাছে চেয়ে পাঠিয়েছে কমিশন। স্পর্শকাতর বুথের পাশাপাশি স্পর্শকাতর অঞ্চলগুলোর তালিকাও উল্লেখ করতে বলা হয়েছে। এখানেই শেষ নয়। গত লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় স্পর্শকাতর বুথ ও স্পর্শকাতর অঞ্চলের সংখ্যা বেড়ে থাকলে সেটাও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জেলাশাসকদের জানাতে হবে। মূলত জেলাশাসকদের পাঠানো তালিকা ও নিজেদের কাছে থাকা পরিসংখ্যানের তুল্যমূল্য বিচার করে চূড়ান্ত হবে বাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনা।
তার আগে শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) পশ্চিমবঙ্গের জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, পুলিশ কমিশনারদের নিয়ে বৈঠক করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য নির্বাচনী কর্মকর্তারা। জানা যায়, আগামী ১ মার্চ পশ্চিমবঙ্গে আসছে ১০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। ৭ মার্চ আসবে আরও ৫০ কোম্পানি। তারই মধ্যে আগামী ৩ মার্চ পশ্চিমবঙ্গে আসবে নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চ।
উল্লেখ্য, এবারের সংসদ ভোটে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে চিঠি পাঠিয়ে নির্বাচন কমিশন সব মিলিয়ে তিন হাজার ৪০০ কোম্পানি বাহিনী চেয়েছে। যার মোট বাহিনীর এক চতুর্থাংশই মোতায়েনের কথা বলা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৪
ভিএস/আরবি