ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

সৎসঙ্গের সেই ভোলেবাবাকে খুঁজছে পুলিশ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫২ ঘণ্টা, জুলাই ৩, ২০২৪
সৎসঙ্গের সেই ভোলেবাবাকে খুঁজছে পুলিশ

কলকাতা: ছোট জায়গায় বড় জমায়েতের আয়োজন করাটাই কি কাল হল? নাকি সৎসঙ্গে ছিল না কোনও শৃঙ্খলাই? এর উত্তর জানতেই ভোলে বাবাকে খুঁজছে পুলিশ। কিন্তু ঘটনার পর রাত পেরিয়ে সকাল হয়ে গেলেও, এখনও দেখা নেই গুরুবাবার।

প্রশাসনিক কর্তারা মনে করছেন মঙ্গলবার বিকেলে উত্তরপ্রদেশের হাতরাসে একটি সৎসঙ্গ তথা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন বহু মানুষ। অনুষ্ঠান শেষে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে বহু মানুষের। সেই গুরুবাবাকে ঘটনার পর থেকে খুঁজছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। পুলিশের অনুমান, ফুলরাই গ্রাম অর্থাৎ যেখানে ওই পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটেছে, সেখান থেকে অন্তত ১০০ কিলোমিটার দূরে মাইনপুরীর আশ্রমে রয়েছেন ওই গুরুবাবা।

বুধবার (৩ জুলাই) সকালেও চলছে উদ্ধারকাজ। নামানো হয়েছে ডগ স্কোয়াড। ফরেনসিক পরীক্ষাও চলছে। একযোগে কাজ করছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ, জাতীয় দুর্য়োগ মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ)। পুলিশের একাংশ মনে করছে, ছোট জায়গায় বেশি লোক জমায়েত হওয়ার ফলেই এমন ঘটনা ঘটেছে। আরও জানা যাচ্ছে যে, বাবার গাড়ি না বেরনো পর্যন্ত ভক্তদের ওই জায়গা ছেড়ে যেতে দেওয়া হয়নি। এরপর বেরনোর সময়ই দুর্ঘটনা ঘটে।

আগ্রার অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর জেনারেল এবং আলিগড়ের বিভাগীয় কমিশনারের সমন্বয়ে একটি তদন্ত দল তৈরি করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে উঠে আসছে ছোট জায়গায় মাত্রাতিরিক্ত ভিড়, ভয়ানক আদ্রতা ও গরমের পাশাপাশি পুলিশ ও প্রশাসনের ব্যর্থতার কথাও।

ওই রাজ্যের সিকান্দারা রাও থানার এসএইচও, আশিস কুমার জানিয়েছেন, ভিড়ের কারণেই পদদলিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তার মতে, ওই গুরুবাবার প্রবচন শুনতে বিপুল সংখ্যক মানুষ জড়ো হয়েছিল। হাতরসের ইটা সীমান্তের কাছে রতিভানপুরে এই সভার আয়োজন করা হলেও মথুরা, আগ্রা, ফিরোজাবাদ এবং ইটা থেকে দলেদলে লোক জড়ো হয়েছিলেন ওই সভায়। সব মিলিয়ে অন্তত ৫০,০০০ মানুষ জড়ো হয়েছিলেন সেখানে।

স্থানীয়দের তথ্য মতে, ‘মানব মঙ্গল মিলন সদ্ভাবনা অনুষ্ঠান কমিটি’র তরফে মঙ্গলবার(২ জুন) সকাল ১১টা থেকে দুপুর ৩টে পর্যন্ত ওই সৎসঙ্গের আয়োজন করা হয়েছিল। অংশগ্রহণ করেছিলেন হাজার হাজার ভক্ত। ভক্তদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন নারী। এই সৎসঙ্গ আয়োজনের জন্য একটি বিশেষ তাঁবু তৈরি করা হয়েছিল। তাতে অত মানুষ ধরার মতো যথেষ্ট বড় ছিল না সেই তাঁবু। তবে তাঁবুর মধ্যে কিছু হয়নি। সড়কের মধ্যিখানে মেন গেট তৈরি হয়েছিল। সেখান দিয়ে বেরোনোর সময় অনেকে রাস্তার ডান দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন, অনেকে বাম দিকে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। সেই সময়ই ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়। যারা মাটিতে পড়ে গিয়েছিলেন, তাদের উপর দিয়েই চলে যান অনেকে।

জানা যায়, নারায়ণ সাকার হরি ওরফে সাকার বিশ্ব হরি ওরফে ভোলেবাবা নামে এই স্থানীয় ধর্মগুরু জন্ম উত্তরপ্রদেশের ইটা জেলার বাহাদুর নাগরি গ্রামে। সেখানেই প্রাথমিক পড়াশোনা শেষ করেন। কলেজের পড়াশুনা শেষ করেই তিনি নাকি ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি)-তে কাজ করা শুরু করেছিলেন। এমনই দাবি করেন তিনি। সেই কাজ করতে করতেই তিনি নাকি আধ্যাত্মিকতার দিকে ঝুঁকেছিলেন। নব্বইয়ের দশকে আইবি-র কাজ ছেড়ে তিনি পুরোপুরি আধ্যাত্মিক পথে চলে আসেন। তিনি নিজেকে সরাসরি সর্বশক্তিমান সৃষ্টি কর্তার সঙ্গে যোগ রয়েছে বলে দাবি করতেন।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার জনপ্রিয়তা বেড়েছে। উত্তরভারত জুড়ে তার হাজার হাজার অনুগামী আছে। তবে তারা বেশিরভাগ ছড়িয়ে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, হরিয়ানা, রাজস্থান এবং দিল্লিতে। তিনি সাধারণত উত্তরপ্রদেশের আলিগড়ে, প্রতি মঙ্গলবার সৎসঙ্গ আয়োজন করে থাকেন। শয়ে শয়ে ভক্তরা এই সৎসঙ্গে যোগ দিয়ে থাকেন। এই ধরনের জমায়েতে, তার স্বেচ্ছাসেবকরা খাবার ও পানীয়সহ ভক্তদের সমস্ত প্রয়োজন মেটানোর ব্যবস্থা করে। তার ভক্তদের সিংহভাগই নিম্ন আয়ের গরিব এবং প্রান্তিক মানুষ। তবে অনেক এমপি এবং বিধায়কও তার ধর্মসভায় আসতেন বলে শোনা যায়।

এই গুরুবাবার বৈশিষ্ট্য হল, তাকে অন্যান্য ধর্মীয়গুরুদের মত গেরুয়া পোশাকে দেখা যায় না। তার বদলে তাকে সাধারণত সাদা স্যুট এবং টাই পরতে দেখা যায়। কখনও কখনও সাদা পাঞ্জাবী-পাজামাও পরেন। প্রায়শই ধর্মোপদেশ দেওয়ার সময় সঙ্গে তার স্ত্রীকেও দেখা যায়। আর এই বাবার সঙ্গে যে সেচ্ছাসেবকরা ঘোরাফেরা করে, তারা পরে থাকে গোলাপী শার্ট, প্যান্ট ও সাদা টুপি। তাদেরই দায়িত্ব থাকে কারা সৎসঙ্গে আসবে, কারা ভিতরে ঢুকবে। তবে সৎসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রবেশ অনুমতি থাকে না।

এর আগে, করোনা মহামারির সময়ে সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছিলেন এই বাবা। কোভিডে বিধিনিষেধ অমান্যকরে একের পর এক বড় মাপের ধর্মসভা আয়োজন করছিলেন তিনি। তার বিরুদ্ধে একাধিক ফৌজদারি মামলা রয়েছে। জানা যায়, তিনি নিজে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকেন। তার নিজস্ব কোনও অফিসিয়ালি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম নেই।

মঙ্গলবারই ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পশ্চিমবঙ্গের মু্খ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ সহ অনেকে। প্রধানমন্ত্রীর দফতর এক্স হ্যান্ডলে লিখেছে, হাতরসের ঘটনায় মৃতদের পরিবারকে ২ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় ত্রাণ তহবিল থেকে এই অর্থ দেওয়া হবে। আহতদের ৫০ হাজার রুপি করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫২ ঘণ্টা, ০৩ জুলাই ২০২৪
ভিএস/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।