ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ ফাল্গুন ১৪৩১, ০৪ মার্চ ২০২৫, ০৩ রমজান ১৪৪৬

ভারত

গঙ্গা জরিপ করতে ভারতে বাংলাদেশের ৭ সদস্যের প্রতিনিধিদল

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১০ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০২৫
গঙ্গা জরিপ করতে ভারতে বাংলাদেশের ৭ সদস্যের প্রতিনিধিদল

কলকাতা: ৮৬তম গঙ্গা পানি চুক্তি সংক্রান্ত বৈঠক এবং গঙ্গা জরিপ ও টেকনিক্যাল পরিদর্শন করতে ভারতে এসেছেন বাংলাদেশের ৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল।

সোমবার (৩ মার্চ) সকালে এ প্রতিনিধি দল কলকাতা বিমানবন্দরে অবতরণ করেন।

প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জয়েন্ট রিভার কমিশনের (জেআরসিবি) সদস্য মোহাম্মদ আবুল হোসেন। তার নেতৃত্বে আছেন জেআরসিবি উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মিদরী জাহান, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ শামছুজ্জামান, জেআরসিবি সদস্য (কারিগরি কমিটি) মোহাম্মদ আবুল হোসেন, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (সিলেট) অতিরিক্ত মুখ্য প্রকৌশলী মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (কুমিল্লা) অতিরিক্ত মুখ্য প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু তাহের, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (ঢাকা) হাইড্রো ইনফরমেটিক্স এবং ফ্লাড ফোরকাস্টিং বিভাগের সুপারিন্টেডেন্ট প্রকৌশলী ড. মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন।

পরে বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের হয়ে অংশ নেবেন বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া-১ অনুবিভাগের পরিচালক মো. মনোয়ার মোকাররম কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপ হাইকমিশনের কাউন্সিলর (রাজনৈতিক) তুষিতা চাকমা, দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রথম সচিব (রাজনৈতিক) আফজল মেহদাত আদনানসহ আর একজন।

তবে এ সফরে তিস্তা জরিপ হবে না। এমন কী বৈঠকেও তিস্তা প্রসঙ্গ কোনো আলাপও হবে না বলে জানিয়েছেন মোহাম্মদ আবুল হোসেন। বিমানবন্দরে বাইরে সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেছেন, ১৯৯৬ সালে দুই দেশের মধ্যে সম্পাদিত গঙ্গার চুক্তির বাস্তবায়নের জন্য প্রতিবছর আমরা এ সফর করে থাকি। আবুল হোসেনের অভিমত, মূলত কারিগরি বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে।

গঙ্গার পানি বাংলাদেশের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ? এমন এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের এক তৃতীয়াংশ (৩৮ শতাংশ) গঙ্গার পানির ওপর নির্ভরশীল। মূলত বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এ পানির যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে।

পাঁচদিনের সফরে সোমবারই ফারাক্কা যাবেন  প্রতিনিধি দল। সেখানে নানা জরিপ করার পর ৫ তারিখ ফিরে আসবেন কলকাতায়। এরপর ৬ এবং ৭ তারিখ ভারতের রিভার কমিশনের সদস্যদের বৈঠক হবে কলকাতার একটি পাঁচতারা হোটেলে।

১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেবেগৌড়া এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতিবসু ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সঙ্গে গঙ্গা পানি চুক্তিতে স্বাক্ষরিত হয়েছিল। চুক্তির মেয়াদ ছিল ৩০ বছর। ২০২৬ সালে এ চুক্তি নবায়ন হওয়ার কথা রয়েছে।

৩০ বছরের সামগ্রিক চুক্তি অনুযায়ী জানুয়ারি থেকে মে মাস অর্থাৎ শুকনো মৌসুমে নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি সরবরাহের কথা উল্লেখ রয়েছে। ওই চুক্তিতে বলা হয়েছে, নদীতে ৭৫ হাজার কিউসেকের বেশি পানি থাকলে ভারত পাবে ৪০ হাজার কিউসেক পানি, অবশিষ্ট পানি পাবে বাংলাদেশ। নদীতে ৭০ হাজার থেকে ৭৫ হাজার কিউসেক পানি প্রবাহ থাকলে বাংলাদেশ পাবে ৪০ হাজার কিউসেক পানি, অবশিষ্ট পানি পাবে ভারত। আবার ৭০ হাজার কিউসেক বা তার কম পানি থাকলে তা প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যেই সমান ভাগে ভাগ হবে।

যদিও বাংলাদেশের সাথে গঙ্গা এবং তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আপত্তি জানিয়ে আসছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

গত বছরের জুন মাসে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে লেখা তিন পাতার চিঠিতে গোটা বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করে মমতা লিখেছিলেন, বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ভারত সফরে প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে গঙ্গা ও তিস্তা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রাজ্য সরকারের পরামর্শ ও মতামত ছাড়া এ ধরনের একতরফা আলোচনা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য বা কাম্য নয়। এ ধরনের চুক্তির প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমি বুঝতে পেরেছি যে ভারতার কেন্দ্রীয় সরকার ভারত-বাংলাদেশ ফারাক্কা চুক্তি (১৯৯৬) পুন:নবীকরণের প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় রয়েছে, কারণ এ চুক্তির মেয়াদ ২০২৬ সালে শেষ হবে।

এটি এমন একটি চুক্তি যা বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পানি বণ্টনের নীতিগুলো বর্ণনা করে এবং আপনি (মোদি) জানেন যে বাংলার মানুষের জীবন-জীবিকা বজায় রাখার জন্য ফারাক্কা থেকে পাওয়া পানির বিশাল প্রভাব রয়েছে এবং ফারাক্কা ফিডার ক্যানেলের মাধ্যমে যে পানি আসে তা কলকাতা বন্দরের নাব্যতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। তা না হলে গঙ্গায় পলি পড়ে কলকাতা বন্দর তার জাহাজ চলাচলের উপযোগী নাব্যতা হারাবে।

এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের ভারতে আসা এবং গঙ্গা জরিপ যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১০ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০২৫
ভিএস/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।