কলকাতা: পাকিস্তানের সাথে চলমান উত্তেজনার মধ্যে ভারতের রাজস্থান সীমান্তে ‘হাই অ্যালার্ট’ জারি করা হয়েছে। এমনকী পুরো সীমান্তই ‘সিল’করে দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, রাজস্থানের সঙ্গে এক হাজার ৩৭ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে পাকিস্তানের।
চলমান পরিস্থিতিতে ভারতীয় বিমান বাহিনীকেও অতিরিক্ত সর্তকতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। যুদ্ধবিমান টহল দেওয়ার কারণে রাজস্থানের যোধপুর, কিষাণগড় এবং বিকানির বিমানবন্দরে শুক্রবার(৯ মে) পর্যন্ত বিমান ওঠানামা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সীমান্তে ‘মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম’ এবং ‘অ্যান্টি ড্রোন’ সিস্টেম চালু করা হয়েছে।
রাজস্থান থেকে গুজরাট পর্যন্ত সুখোই-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান টহল দেওয়ার কারণে, রাজস্থানের শ্রী গঙ্গানগর, জয়সলমীর, বারমের জেলায় সমস্ত স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে। চলমান পরীক্ষাগুলিও আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে, রাজ্যটিতে। রেলওয়ে কর্মী এবং পুলিশ সদস্যদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
একই সাথে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে সর্তকতা জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি ওই এলাকায় বসবাসকারী স্থানীয় মানুষদের নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে। উদ্ভূত পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে রাজস্থানের হাসপাতালগুলোকে তৈরি রাখা হয়েছে। জরুরি পণ্য পরিষেবা, জ্বালানি সরবরাহ সুনিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।
একই সাথে রাজস্থানের জয়সলমীর এবং যোধপুরে রাত ১২টা থেকে পরদিন ভোর ৪টা পর্যন্ত ব্ল্যাকআউটের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উত্তেজনার আবহেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে রাজস্থানের প্রত্যেকটি জেলাশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তারা যেন সেনাবাহিনী ও সেন্ট্রাল এজেন্সিগুলোর সাথে সমন্বয় রেখে চলে।
অপরদিকে, বৃহস্পতিবার (৮ মে) থেকে পশ্চিমবঙ্গেও সমস্ত সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারীর ছুটি বাতিল করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে, অসুস্থ ছাড়া সকলের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। পাশাপাশি ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার আবহে পশ্চিমবঙ্গে যাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম না বাড়ে, অর্থাৎ কালোবাজারি না হয়, এ নিয়ে রাজ্যের প্রশাসন এবং ব্যবসায়ীদের সতর্ক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার তিনি বিভিন্ন দপ্তরের মন্ত্রী, সচিব, হিমঘর, ব্যবসায়ী সংগঠনকে নিয়ে বৈঠক করেন। সেখানে তিনি বলেছেন, পহেলগাঁওয়ের ঘটনা নিয়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে রাজ্যের ভান্ডার মজুত রাখতে বলেছে, কেন্দ্র সরকার। কিন্তু মনে রাখবেন, এখন টাকা রোজগারের সময় নয়। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সময়। এদিন ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি রাজ্যবাসীকেও তাদের দায়িত্ব মনে করান মমতা। অযথা ভয় বা আতঙ্ক না ছাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। গোটা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন এদিন সে কথাও স্মরণ করান মমতা।
একই ভাবে প্রশাসনকে মমতার নির্দেশ, সীমান্তগুলো দিয়ে যাতে কেউ অস্ত্র নিয়ে ঢুকতে না পারে সে দিক বিশেষ নজর রাখতে হবে। রেল স্টেশনগুলোতে বিশেষ নজরদারির কথাও বলেছেন মমতা।
এর আগে বুধবার মমতা বলেছিলেন, আপনারা জানেন সেই ১৯৭১ সালে শেষ যুদ্ধ হয়েছিল। এরপর কার্গিলের যুদ্ধ কাশ্মীরের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, পরবর্তীতে বালাকোট বা পুলওয়ামায় যে ঘটনা ঘটেছিল তার রেশ এদিকে(পশ্চিমবঙ্গে) আসেনি। আজকে যে পরিস্থিতি, যদিও এখানকার সাথে কোন সম্পর্ক নেই, তবু যেহেতু আমরা সাথে অনেকগুলো দেশের সীমান্তে রয়েছে, পাশাপাশি উত্তর-পূর্ব ভারতের সীমান্ত রয়েছে তাই সবাইকে একসাথে ভালো করে চলতে হবে, শান্তি রক্ষা করতে হবে।
অন্যদিকে, পাকিস্তান সীমান্তবর্তী রাজ্য পাঞ্জাবেও সমস্ত পুলিশ সদস্যদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। যে কোন ধরনের জমায়েতের উপর নিষেধ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সীমান্তে উত্তেজনার কারণে সমস্ত সরকারি কর্মসূচি বাতিল করেছেন পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভাগবান্ত মান।
ভিএস/এমএম