কলকাতা: ভারতের মোদি সরকার বাংলাদেশ থেকে পাটসহ মোট নয়টি পণ্যের আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, যা দুই প্রতিবেশী দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।
তবে এই নিয়ে বাংলাদেশ কতটা উদ্বিগ্ন থাকবে তা নিয়ে প্রশ্ন থাকবে! তবে এ ধরনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ্যে আসতেই দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম স্থলবন্দর, ভররতের পেট্রাপোল সীমান্তের সংশ্লিষ্টদের মধ্যে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।
মোদি সরকারের সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত ভারতের আমদানি-রফতানিকারক ব্যবসায়ী, পেট্রাপোল কাস্টমস হাউস এজেন্ট বা যারা পণ্য আমদানি ও রফতানির জন্য কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স সংক্রান্ত কাজ করেন এমন কর্মী, পরিবহন ক্ষেত্র, পেট্রাপোল স্থলবন্দরে লোড-আনলোডের সঙ্গে যুক্ত এক হাজারের বেশি ভারতীয় শ্রমিক কাজ হারাবেন।
রোববার(২৯ জুন) পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্টস স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী এ ঘটনাকে 'ভয়ঙ্ক ধাক্কা' বলে অভিহিত করে বলেছেন, পেট্রাপোল স্থলবন্দরের মতো অন্যান্য স্থলবন্দরে কয়েক লাখ মানুষ আমরা যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত তারা, ৫ আগস্টের পর থেকে এ ধরনের ধাক্কা খাচ্ছি। আগামীদিনে আরও আশঙ্কা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। কিছুদিন আগে গার্মেন্টস সামগ্রীতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়েছে। এবার পাটজাত পণ্যের উপরে নিষেধাজ্ঞা। পাটজাত পণ্য বিধি নিষেধ আরোপ হওয়াতে সবচেয়ে বড় ধাক্কা লেগেছে। কারণ পাটজাত পণ্যের বেশিরভাগ শিল্প হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে। এসব পণ্য মহারাষ্ট্রের নভিসেবা সমুদ্র বন্দর দিয়ে আমদানি করে সংশ্লিষ্টরা কতটুকু লাভবান হবেন তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
তার অভিমত, এটা সরকারের সিদ্ধান্ত, ফলে তারা যেটা ভালো মনে করেছে সেটা করেছে। তবে আমরা আশা করব রাজ্য সরকার(পশ্চিমবঙ্গ) এবং কেন্দ্রীয় সরকার তারা যদি এই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করেন তাহলে আমাদের পক্ষে সুখকর হবে। কারণ এর ফলে সীমান্ত এ অঞ্চলে বড় প্রভাব পড়বে।
অন্যদিকে, পেট্রাপোল কাস্টমস হাউস এজেন্ট (সিএইচএ) কর্মী নূর ইসলাম মণ্ডল বলেছেন, বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে দৈনিক কমপক্ষে শতাধিক ট্রাক পাট ও পাটজাত পণ্য ভারতের পেট্রাপোল স্থলবন্দরে আসত, এবারের নিষেধাজ্ঞায় তা বন্ধ হয়ে গেল। তিনি জানিয়েছে, পাট জাত পণ্যের দুই একটি আইটেম হয়তো আসবে, কিন্তু তার পরিমাণ খুবই কম। প্রতিদিন সীমান্ত দিয়ে যেখানে বিভিন্ন ধরনের পণ্য নিয়ে একশো ট্রাক আসত, তার মধ্যে ৮০-৮৫টি ট্রাকেই নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে।
এ বিষয়ে পেট্রাপোল আমদানি-রপ্তানি ব্যবসায়ী পরিতোষ সাহা জানান, এই সিদ্ধান্তের কারণে আমাদের এক্সপোর্ট ও ইমপোর্ট ব্যবসা গভীর খাদের মধ্যে চলে যাবে। যেটা এ অঞ্চলের বাসিন্দার জন্য এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিরাট ধাক্কা। তার কারণ বনগাঁ শহরের অর্থনীতি এক্সপোর্ট ও ইম্পোর্ট'এর উপর নির্ভরশীল। কয়েকদিন আগেই পোশাক শিল্পের আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। এবার পাট শিল্পের উপরে আঘাত পড়লো। যে পাট বাংলাদেশ থেকে আসতো তা অতি উন্নত মানের। তা দিয়ে এখানে ভালো মানের পোশাক তৈরি হতো। হস্তশিল্পীরা কাজ করতেন। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞার কারণে পোশাক এবং হস্তশিল্পীরা কার্যত কর্মহীন হয়ে পড়ল।
এর আগে ১৭ মে, মোদি সরকার বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে ভারতে তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক, কাঠের আসবাব, সূতা ও সূতার উপজাত, ফল ও ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয় প্রভৃতি পণ্য আমদানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল। তারও আগে গত ৯ এপ্রিল বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছিল মোদি সরকার। ভারতের পক্ষ থেকে এই নিষেধাজ্ঞার নির্দিষ্ট কারণ এখনও বিস্তারিতভাবে জানানো হয়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, অভ্যন্তরীণ শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়া এবং স্থানীয় উৎপাদনকে উৎসাহিত করাই এই সিদ্ধান্তের মূল উদ্দেশ্য।
এই পণ্যগুলোর আমদানির কারণে ভারতের সংশ্লিষ্ট শিল্পগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল এবং স্থানীয় উদ্যোক্তারা সরকারের কাছে সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানিয়েছিলেন। এ ছাড়াও, বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি ভারত সরকারের 'আত্মনির্ভর ভারত' নীতির একটি অংশ, যার লক্ষ্য হল আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধি করা। এই নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের ওপর একটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে। বাংলাদেশের পাট শিল্প ভারতের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। কাঁচা পাট এবং পাটের তৈরি বস্তা, সূতা, চট ইত্যাদি ভারতে প্রচুর পরিমাণে রপ্তানি হয়। এই নিষেধাজ্ঞা পাট চাষি এবং এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকদের জীবিকার ওপর চরম নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
এছাড়া ভারতে ভিসানীতির কারণে বড় প্রভাব পড়েছে সেখানকার, মানি এক্সচেঞ্জ, ফল, সিএনজি চালকসহ সব ধরনের ব্যবসায়। যারা পুরোটাই নির্ভর করতেন বাংলাদেশিদের ওপর। আর চলমান নিষেধাজ্ঞায় এক প্রকার শূন্যে ঠেকেছে সে অঞ্চলের সব ধরনের অর্থনীতি।
ভিএস/এমএম